কনোকোর গ্যাসের দাম বাড়ালে অন্য কোম্পানিও চাইবে
তেল-গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক প্রকৌশলী শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ এবং সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ এক বিবৃতিতে বলেছেন, মার্কিন কোম্পানি কনোকো-ফিলিপস বঙ্গোপসাগরে ১০ ও ১১ নম্বর ব্লকে প্রচুর গ্যাস (৫-৭ ট্রিলিয়ন ঘণফুট গ্যাস) প্রাপ্তির সম্ভাবনা (বিলম্বে হলেও) স্বীকার করেছে। একইসঙ্গে তারা পিএসসি চুক্তিতে নির্ধারিত গ্যাস ক্রয়ের দাম মামারবাড়ির আবদারের মত ৪ মার্কিন ডলার থেকে বাড়িয়ে ৭ ডলার করা এবং প্রতিবছর তা ২ শতাংশ করে বাড়ানোর দাবি করেছে। সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানিয়ে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী কোম্পানির দাবির পক্ষে যুক্তি দিয়েছেন। কোম্পানি মিয়ানমারের মতো সুবিধা চায় বলে তিনি বলেছেন, আগামি কয়েক বছরে যেহেতু আন্তর্জাতিক বাজারেও গ্যাসের দাম বাড়বে সুতরাং কনোকো-ফিলিপস এর গ্যাসের দাম বাড়ালে বাংলাদেশের সমস্যা হবে না।
কোম্পানির দাবি ও বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর যুক্তি তিন কারণে গ্রহণযোগ্য নয়। প্রথমত: মায়ানমার দীর্ঘদিন সামরিক শাসনের অধীন একটি দেশ। একটি ক্ষুদ্র গোষ্ঠীর লুন্ঠন ও সম্পদ পাচারের স্বার্থে সেখানে নীতি প্রণয়ন ও চুক্তি স্বাক্ষর হয়ে আসছে। এই কারণে দীর্ঘদিন ধরে বহুজাতিক কোম্পানি সে দেশের বিপুল খনিজ সম্পদ অনুসন্ধান-উত্তোলন ও রফতানিতে নিয়োজিত থাকা সত্ত্বেও দারিদ্র ও লোডশেডিং পরিস্থিতি বাংলাদেশের চাইতেও সেখানে খারাপ। কতিপয় সামরিক জেনারেলসহ একটি ক্ষুদ্র গোষ্ঠি এবং কিছু বহুজাতিক কোম্পানি এই খনিজ সম্পদ উত্তোলন ও রফতানির মাধ্যমে বিপুল মুনাফা অর্জন করেছে বলে ধারনা করা যায়। কিন্তু সেই দেশের জনগণ বা অর্থনীতি এর কোন সুফল পায় নি। এই মিয়ানমার বাংলাদেশের জন্য কোন মডেল হতে পারে না। বাংলাদেশের এই পরিণতি আমার মেনে নিতে পারি না। দ্বিতীয়ত: আগামি কয়েক বছর ধরে আন্তর্জাতিক বাজারে গ্যাসের দাম বাড়বে এটা নিশ্চিত ভাবে কেউ বলতে পারে না। কারণ গত এক দশকে গ্যাসের আন্তর্জাতিক দামে ওঠানামা দেখা যায়। কখনো কখনো এটা ৪ ডলারের নীচে নেমে এসেছে। তৃতীয়ত: আন্তর্জাতিক বাজার দর যাইহোক না কেন চুক্তি করার পর দাম বাড়ানোর প্রস্তাব কোনমতেই গ্রহণযোগ্য নয়। গ্যাসের আন্তর্জাতিক গড় বাজার দর হিসাব করতে হবে শেভরণ ও নাইকোর কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়ের জন্য। শুধুমাত্র গ্যাস সম্পদ বিনষ্টের জন্য যাদের কাছে আমাদের পাওনা ৫০ হাজার কোটি টাকা, যা আদায় করবার ব্যাপারে সরকারের কোন উদ্যোগ নেই।
তারা বলেন, কনোকোর এই দাবি পুরণ হলে অন্য কোম্পানিগুলোও এই ধরণের দাবি করবে। কিছুদিন আগেই ভারতীয় কোম্পানি ওএনজিসি-কে বর্ধিত দামের সুবিধা দানের জন্য পিএসসি-২০১২ সংশোধন করা হয়েছে। এরফলে এই অবস্থা তৈরির সুযোগ হয়েছে।