ক্যাপটিভে অব্যাহত গ্যাস চান শিল্প উদ্যোক্তারা

বস্ত্র কারখানায় নিজস্ব বিদ্যুৎ উত্পাদন ব্যবস্থায় (ক্যাপটিভ পাওয়ার) গ্যাস সরবরাহ অব্যাহত রাখার দাবি জানিয়েছেন উদ্যোক্তারা। জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুতের উপর আস্থা নেই বলেও তারা জানান। এদিকে প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধূরী বীরবিক্রম বলেছেন, গ্যাস অনুসন্ধ্যানের বিভিন্ন পর্যায়ে কাজ চলছে। দুই বছরের মধ্যে গ্যাস সংকট কেটে যাবে বলে তিনি উদ্যোক্তাদের আশ্বস্ত করেন।
সোমবার রাজধানীর গুলশানে হোটেল লেকশোরে বাংলাদেশ বস্ত্র শিল্প সমিতি (বিটিএমএ) আয়োজিত সেমিনারে উদ্যোক্তাদের দাবির প্রেক্ষিতে তিনি এ আশ্বাস দেন। সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যান এ আর খান। বিটিএমএ সভাপতি তপন চৌধুরীর সঞ্চালনায় এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বুয়েটের অধ্যাপক ম. তামিম, বিটিএমএ’র পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার রাজিব হায়দার। বক্তব্য রাখেন বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি আতিকুল ইসলাম, কনজিউমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের জ্বালানি উপদেষ্টা ড. শামসুল আলম, বিটিএমএ’র সাবেক সভাপতি জাহাঙ্গীর আলামীন, এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি এ.কে. আজাদ প্রমুখ।
সেমিনারে শিল্পদ্যোক্তারা বলেন, গার্মেন্টস শিল্পের প্রধান কাঁচামাল বস্ত্র এখন দেশের টেক্সটাইল মিলগুলো সরবরাহ করছে। এতে কোটি কোটি ডলার সাশ্রয় হচ্ছে। অথচ এই শিল্প আজ থমকে যাচ্ছে গ্যাসের অভাবে। সরকারই এই শিল্পকে একসময় ক্যাপটিভ পাওয়ারের মাধ্যমে বিদ্যুত্ উত্পাদনে উত্সাহিত করেছিল। অথচ আজ তাতে যথেষ্ঠ গ্যাস না থাকায় মিলগুলো চলতে পারছে না। তারা জানান, গ্রিডের বিদ্যুতে তাদের আস্থা নেই। এটা দিয়ে কারখানা চালানো সম্ভব নয়। সার কারখানাগুলোতে গ্যাস না দিয়ে তা বেসরকারি শিল্পে দেয়ার দাবি জানান তারা। আর প্রয়োজনীয় সার আমদানি করারও পরামর্শ দেন তারা। তাদের দাবি সার উত্পাদনের চেয়ে শিল্পে গ্যাসের ব্যবহার অনেক বেশি লাভজনক।
ড. তৌফিক-ই-ইলাহী বলেন, গ্যাসের সঙ্কট আছে এটা তো সত্য। আমরা একজনের গ্যাস বন্ধ করে দিয়ে আরেকজনকেও দিতে পারবো না। তবে এ সঙ্কট কাটিয়ে ওঠার জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছি আমরা। এলএনজি টার্মিনাল প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। আগামী দুই বছরের মধ্যে এলএনজি অমদানি সম্ভব হবে। এছাড়া একই সময়ে ভারতের কলকাতায় এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ হচ্ছে। এখান থেকে যশোর হয়ে আমাদের পশ্চিমাঞ্চলে এলএনজি সরবরাহে বাণিজ্যিক চুক্তি হচ্ছে ভারতের সাথে। পাশাপাশি নতুন গ্যাস কুপ অনুসন্ধানের কাজ চলছে। আশা করি আগামী দুই বছর পরে গ্যাস সঙ্কট থাকবে না । তিনি বলেন, এ সময়টুকুতে আপনাদের একটু ধৈর্য্য ধরতে হবে। সঙ্কটকালীন এ সময়ে ডিজেল আমদানি করতে পারেন। এক্ষেত্রে রফতানিমুখী শিল্প হিসেবে আপনারা বিনাশুল্কে ডিজেল আমদানি করার সুযোগ পেতে পারেন। তবে এ বিষয়ে বিটিএমএকে উদ্যোগ নেয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
বিটিএমএ সভাপতি তপন চৌধুরী বলেন, বিটিএমএ’র সদস্য ১৪০০টি কারখানা এখন সুতা ও কাপড় তৈরি করার পাশাপাশি ডায়িং, প্রিন্টিং ও ফিনিশিংয়ে সচল রয়েছে। নিট পোশাকের ৮৫ ভাগ চাহিদা পুরণ করছে এসব মিল। আর ওভেন পোশাকের ৩৫ থেকে ৪০ ভাগ পুরণ করছে আমাদের কারখানাগুলো। অথচ সাম্প্রতিক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধি এবং ক্যাপটিভ পাওয়ারে ব্যবহূত গ্যাসের দাম শতভাগ বৃদ্ধিতে এই শিল্প হুমকির মুখে পড়েছে। তিনি বলেন, অধিকাংশ স্পিনিং ও ডায়িং-ফিনিশিং মিল বিশাল অংকের টাকা খরচ করে গ্যাসভিত্তিক জেনারেটর স্থাপন করেছে। ওয়েভিং মিলের একটি বড় অংশ ক্যাপটিভ পাওয়ার জেনারেটর স্থাপন করেছে। বিটিএমএ’র সদস্য মিলগুলো ১২০০ থেকে ১৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত্ নিজেদের প্রয়োজনে উত্পাদন করছে জানিয়ে তিনি বলেন, সম্প্রতি এই গ্যাসের দাম শতভাগ বাড়ানোয় প্রতিযোগিতা সক্ষমতায় আমরা পিছিয়ে পড়লাম।
এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি এ.কে. আজাদ বলেন, আমরা যে কতো কষ্ট করে কারখানাগুলো চালাচ্ছি তা বাইরে থেকে বোঝা সম্ভব নয়। তবুও আমরা বিনিয়োগ করছি। আমরা শুধু নিশ্চয়তা চাই গ্যাস-বিদ্যুত্ সংযোগ ও নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহের।
বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি আতিকুল ইসলাম বলেন, প্রতিযোগিতা সক্ষমতা কমে যাওয়ায় আমাদের উত্পাদন কমে যাচ্ছে। কিন্তু আমরা ২০২১ সালের মধ্যে ৫০ বিলিয়ন ডলারের রফতানির লক্ষ্য নির্ধারণ করেছি। এজন্য পণ্য বহুমুখিকরণ জরুরী। যাতে গ্যাসের প্রয়োজন রয়েছে। আপনারা আমাদের গ্যাস দিন, আমরা ৫০ বিলিয়ন ডলারের রফতানির নিশ্চয়তা দিব।
বিকেএমইএ’র সাবেক সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, বর্তমান বিশ্বে ৪২০ বিলিয়ন ডলারের পোশাকের বাজার রয়েছে। চীন গার্মেন্টস শিল্প থেকে হাত গুটিয়ে নিচ্ছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশের বিশাল সুযোগ তৈরি হয়েছে। যা গ্যাসের অভাবে আমরা কাজে লাগাতে পারছি না।