খাদ্যের চেয়ে বিদ্যুতে ভর্তুকি বেশি
রফিকুল বাসার:
প্রতিবছর খাদ্যের চেয়ে কয়েক গুণ ভর্তুকি দেয়া হয় বিদ্যুতে।
চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরেও সকল খাতের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভর্তুকি দেয়া হয়েছে বিদ্যুতে। খাদ্যেও প্রতিবছর ভর্তুকি বাড়ছে।
সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে চলতি অর্থবছর বিদ্যুতে ভর্তুকি দেয়া হয়েছে ৯ হাজার কোটি টাকা। আর খাদ্যে ভর্তুকি দেয়া হয়েছে ৫ হাজার ২৩০ কোটি টাকা। গত দশবছরের হিসাব পর্যালোচনা করলে এই একই চিত্র দেখা যাবে। এই সময়ে বিদ্যুতে সহায়তা খাদ্যেও চেয়ে কয়েকগুণ।
যদিও অর্থমন্ত্রণালয়ের দেয়া তথ্য অনুযায়ি বিদ্যুতে দেয়া এই অর্থ ঋণ। নগদ ঋণ সহায়তা হিসেবে দেয়া হয় বিদ্যুৎ খাতে। তবে গত আট বছরে কখনও এই ঋণ শোধ করার উদ্যোগ দেখা যায়নি বিদ্যুৎ বিভাগের। দিন দিন বিদ্যুৎখাতে দেয়া এই অর্থের পরিমান বাড়ছেই।
গত আট বছরে বিদ্যুৎখাতে এভাবে ৩ লাখ ২৬ হাজার ৪২৯ কোটি টাকা ভর্তুকি দেয়া হয়েছে। যার বড় অংশই খরচ হয়েছে বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদনে। আর এই সময় খাদ্যে ভর্তুকি দেয়া হয়েছে মাত্র ২৩ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রণালয় বলছে, বাজেটে খাদ্য, সার, গ্রামীণ বিদ্যুতায়নসহ কয়েকটি খাতে ভর্তুকি দেয়া হয়। আর বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন এবং পাট কল কর্পোরেশনকে নগদ ঋণ আকারে ‘আর্থিক সহায়তা’ দেয়া হয়।
সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য দাম সমন্বয় করে এই সহায়তা দেয়া হয়।
২০১৩-১৪ অর্থবছর পিডিবিকে ৬ হাজার ১০০ কোটি টাকা সহায়তা দেয়া হয়। এর পরের বছর ৮ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা। তার পরের বছর বিদ্যুতে সহায়তা তুলনামূলক অনেক কম ছিল, ২ হাজার ৭৯৪ কোটি টাকা। ২০১৬-১৭ অর্থবছর থেকে আবার এই সহায়তা বাড়তে থাকে, এইবছর দিতে হয় ৩ হাজার ৯৯৪ কোটি টাকা। পরের বছর একটু কম ৩ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা। এরপর থেকে এই সহায়তা আর কমেনি। ২০১৮-১৯ অর্থবছর থেকে পর্যায়ক্রমে ৭ হাজার ৯৬৬ কোটি, ৭ হাজার ৪৩৯ কোটি এবং চলতি অর্থ বছর ৯ হাজার কোটি।
পিডিবি বেসরকারি উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে বিদ্যুৎ নিয়ে বিতরণ কোম্পানিগুলোর মাধ্যমে কম দামে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে। আর এজন্যই এই আর্থিক সহায়তা।
একইভাবে ২১৩-১৪ অর্থবছর খাদ্যে ভর্তুকি দেয়া হয়েছে ১ হাজার ৫৫ কোটি টাকা। অর্থবছরভিত্তিক পর্যায়ক্রমে এই ভর্তুকি দেয়া হয়েছে, ১ হাজার ২৪০ কোটি, ৯০৪ কোটি, ২ হাজার ৬৪৩ কোটি, ১ হাজার ৪১৫ কোটি, ৬ হাজার ৬৩০ কোটি, ৪ হাজার ১৭০ কোটি এবং চলতি অর্থবছর ৫ হাজার ২৩০ কোটি টাকা।
দরিদ্রজনগোষ্ঠিকে খাদ্য সহায়তা, ওএমএস এর মাধ্যমে কমমূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রিসহ বিভিন্নভাবে এই সহায়তা দেয়া হয়।
২০১৯-২০ অর্থবছরে নগদ ঋণ ও ভর্তুকি খাতে খরচ হয়েছে ২০ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা। যা ছিল মোট সরকারি খরচের ৫ শতাংশ। আর ২০২০-২১ অর্থবছর সংশোধিত বাজেটে এই খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২১ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা। যা মোট খরচের ৪ ভাগ।
২০১৫-১৬ অর্থবছরের পর থেকে এখন পর্যন্ত জ¦ালানি তেলে ভর্তুকি দেয়া লাগেনি। বরং এই খাত থেকে প্রতিবছর মোটা অংকের রাজস্ব আয় হচ্ছে। জ্বালানি তেলের জন্য বিপিসিকে শেষ সহায়তা দেয়া হয়েছিল ২০১৪-১৫ অর্থবছরে। সে বছর দেয়া হয়েছিল ৬০০ কোটি টাকা। এরপর বিশ্ববাজারে তেলের দাম কম থাকায় আজ পর্যন্ত আর সহায়তা লাগেনি। তবে এরআগে ২০১৩-১৪ অর্থবছর বিপিসিতে ভর্তুকি দেয়া হয়েছিল ২ হাজার ৪৭৮ কোটি টাকা। এরআগের বছরগুলোতে তেলের জন্য এভাবেই সহায়তার প্রয়োজন ছিল।
বিবিএস এর খানা আয়-ব্যয় জরিপ অনুযায়ি, প্রতিবছর দেশে চরম দারিদ্র এবং দারিদ্রের হার কমছে। তারপরও দেশের মোট জনসংখ্যার সাড়ে ১০ ভাগ মানুষ এখনও চরম দারিদ্রের নিচে বসবাস করে। আর দরিদ্র জনগোষ্ঠির সংখ্যা সাড়ে ২০ ভাগ। চরম দরিদ্র এবং দরিদ্র শ্রেণির মানুষ খাদ্যসহ নানা সংকট নিয়েই জীবন যাপন করছে। এই জনগোষ্ঠির বেশিরভাগই এখনও বিদ্যুৎ সুবিধা থেকেও বঞ্চিত।
সংশ্লিষ্ঠরা বলছেন, করোনার কারণে সমাজের দরিদ্র মানুষের আয় ও জীবিকার সুযোগ কমেছে। এতে দরিদ্র কমার গতিও কমেছে। দরিদ্র এবং চরম দরিদ্র মানুষও বাড়ছে।