গ্যাস মিটারসহ পাঁচ প্রকল্পে বিলিয়ন ডলার ঋণ দিচ্ছে বিশ্ব ব্যাংক

পাঁচ প্রকল্প বাস্তবায়নে বাংলাদেশকে ১১১ কোটি ৮০ লাখ ডলারের ঋণ দিচ্ছে বিশ্ব ব্যাংক; যার বড় অংশই পাওয়া যাবে স্বল্প সুদে।

বৃহস্পতিবার এ নিয়ে উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাটির সঙ্গে পৃথক চুক্তি করেছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)। শিশুর উন্নয়ন, শিক্ষা, জ্বালানি, পুষ্টি ও নদী ব্যবস্থাপনার প্রকল্পের অর্থায়নের জন্য বড় অঙ্কের এই ঋণ ও অনুদানের চুক্তি বলে জানিয়েছে ইআরডি।

বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী মোট ঋণের পরিমাণ বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১২ হাজার ৩০০ কোটি টাকা।

এর মধ্যে ১০২ কোটি ২০ লাখ ডলার উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাটির সহযোগী ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসিসটেন্স (আইডিএ) তহবিল থেকে দেওয়া হচ্ছে স্বল্প সুদের ঋণে। এ জন্য সব মিলে ২ শতাংশ সুদ দিতে হবে।

মোট ঋণের বাকি ৯ কোটি ডলার দেওয়া হচ্ছে স্কেল আপ উইন্ডো (এসইউডাব্লিউ) তহবিল থেকে। এ ঋণের জন্য রেফারেন্স সুদহার, পরিবর্তনশীল স্প্রেড কমিটমেন্ট চার্জ শূন্য দশিমক ২৫ এবং ফ্রন্টঅ্যান্ড ফি শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশসহ ৪ শতাংশের বেশি সুদ দিতে হবে।

পাঁচ বছরের রেয়াতকালসহ ৩০ বছরে এ ঋণ পরিশোধ করতে হবে।

ঢাকার শেরে বাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে পাঁচ প্রকল্পের অর্থায়ন এ ঋণ চুক্তিতে সই করেন ইআরডি সচিব শরিফা খান ও বিশ্ব ব্যাংকের আবাসিক প্রতিনিধি আব্দুলায়ে সেক।

প্রকল্পগুলো হচ্ছে:

‘বাংলাদেশ এনহ্যান্সিং ইনভেস্টমেন্টস অ্যান্ড বেনিফিটস ফর আর্লি ইয়ারস’ প্রকল্পের দেওয়া হচ্ছে ২১ কোটি ডলার। অর্থ বিভাগ এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৮ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে।

প্রকল্পটির মাধ্যমে গর্ভবতী মহিলাদের এবং চার বছরের কম বয়সী শিশুদের মায়েদের সহায়তা প্রদান করা হবে। এছাড়া মা ও শিশু সহায়তা কর্মসূচির উন্নতির মাধ্যমে শিশু উন্নয়ন পরিষেবার সক্ষমতা বাড়ানো হবে।

‘লার্নিং অ্যাক্সিলারেশন ইন সেকেন্ডারি এডুকেশন’ শীর্ষক প্রকল্পের জন্য দেওয়া হবে ৩০ কোটি ডলার।

মাধ্যমিক স্তরে শেখার কার্যক্রম ত্বরান্বিত করা, শিক্ষকদের দক্ষতা উন্নয়ন, গুরুত্বপূর্ণ কাঠামোর সংস্কার এবং সফল কর্মসূচিগুলো চলমান রাখা এবং আরও সম্প্রসারণে করা প্রকল্পটির প্রধান উদ্দেশ্য।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর ২০২৮ সালের সেপ্টেম্বরের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে।

‘গ্যাস সেক্টর ইফিসিয়েন্সি ইমপ্রুভমেন্ট অ্যান্ড কার্বন অ্যাবেটমেন্ট’ শীর্ষক প্রকল্পে দেওয়া হবে ৩০ কোটি ডলার। প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের মাধ্যমে গৃহস্থালী পর্যায়ে গ্যাসের অপচয় রোধ করতে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে।

২০২৮ সালের মধ্যে পেট্রোবাংলা, তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (টিজিটিডিসিএল) এবং পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড (পিজিসিএল) প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।

‘শহুরে স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও জনসংখ্যা (এইচএনপি)’ প্রকল্পের জন্য ২০ কোটি ডলার দেওয়া হবে।

প্রকল্পটির মাধ্যমে সিটি করপোরেশন এবং পৌরসভার নাগরিকদের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার মান ও ক্ষমতা এবং মশা নিয়ন্ত্রণ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ করা হবে।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় সরকার বিভাগ যৌথভাবে ২০২৮ সালের জুনের প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে।

এছাড়া ‘যমুনা নদী টেকসই ব্যবস্থাপনা প্রকল্প (পর্যায়-১)’ শীর্ষক প্রকল্পের জন্য দেওয়া হবে ১০ কোটি ২০ লাখ ডলার। প্রকল্পটির জন্য ৬০ লাখ ডলারের অনুদানও রয়েছে।

প্রকল্পটির মাধ্যমে অবকাঠামো উন্নয়ন, কৌশল এবং সক্ষমতা বাড়ানোর মাধ্যমে বন্যা ও নদীর তীর ভাঙন রোধ যমুনা নদীর ব্যবস্থাপনা করা হবে।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বিডাব্লিউডিবি), বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ এবং বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ ২০২৮ সালের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে।

স্থাপন করা হবে ১২ লাখ প্রিপেইড গ্যাস মিটার

জ্বালানি খাতের একটি প্রকল্পের আওতায় গ্যাসের আবাসিক গ্রাহকদের জন্য আরও ১২ লাখ ২৮ হাজার প্রি-পেইড গ্যাস মিটার স্থাপনে এ ঋণের আওতায় ৩০ কোটি ডলার দেবে বিশ্ব ব্যাংক।

এ প্রসঙ্গে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, স্মার্ট প্রিপেইড গ্যাস মিটার স্থাপনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্মার্ট বাংলাদেশের গর্বিত অংশীদার হবে জ্বালানি খাত। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে প্রযুক্তির ব্যবহার উত্তরোত্তর বাড়ানো হবে।

প্রকল্পের আওতায় তিতাসের বিতরণ অঞ্চলে ১১ লাখ মিটার স্থাপন করা হবে যা কোম্পানিটির মোট গ্রাহকের ৩০ শতাংশ। তিতাসের অধীনে মোট ২৮ লাখ গ্রাহক রয়েছে যার মধ্যে তিন লাখ ৩৩ হাজার গ্রাহক ইতোমধ্যেই প্রিপেইড মিটারের আওতায় এসেছেন।

এছাড়া পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানির আবাসিক গ্রাহকের জন্য ১ লাখ ২৮ হাজার প্রিপেইড মিটার গ্যাস মিটার স্থাপন করা হবে।

দেশে গ্যাসের মোট ৪৩ লাখ আবাসিক গ্রাহক রয়েছে যার মধ্যে প্রায় চার লাখ গ্রাহক ইতোমধ্যেই প্রি-পেইড মিটারের আওতায় এসেছে। তিতাস ছাড়াও চট্টগ্রামের কর্ণফুলি বিতরণ কোম্পানির ৬০ লাখ গ্রাহক রয়েছে প্রিপেইড মিটারের আওতায়। গ্যাসের অপচয় রোধ ও খরচ সাশ্রয়ের কারণে এই মিটার ইতোমধ্যেই প্রশংসিত হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা বলছেন।

বর্তমানে একজন আবাসিক গ্রাহক মাসে ৯৭৫ টাকা খরচ করতে হলেও প্রিপেইড মিটারের গ্রাহকদের এর চেয়ে খরচ কম লাগছে।