ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে প্রবল জলোচ্ছ্বাস, বিভিন্ন জেলায় ৮ জন নিহত

ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত হেনেছে। এতে প্রবল জলোচ্ছ্বাসে উপকূলী অবকাঠামো ক্ষতি হয়েছে এবং গাছপালা উপড়ে পড়েছে।
ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুতে এ পর্যন্ত ৮ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এরমধ্যে চট্টগ্রামে ভূমিধসে ২ জন, পটুয়াখালীতে ১ জন, ভোলায় ২ জন, লক্ষ্মীপুরে ১ জন এবং কক্সবাজারে ২ জন নিহত হয়েছে। এতে অনেকে আহত হয়েছে।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক বাসসকে জানান, জেলায় ৫টি উপজেলায় ঘূর্ণিঝড়ের কারণে নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এ পর্যন্ত প্রায় ১ লাখ ৩৭ হাজার মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।
তিনি জানান, ক্ষতিগ্রস্ত উপজেলাগুলো হচ্ছে পেকুয়া, চকরিয়া, কুতুবদিয়া, মহেশখালী এবং সদর। জেলায় ইতোমধ্যে ত্রাণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এরমধ্যে ২শ’ মেট্রিক চাল এবং নগদ প্রায় ৬ লাখ ৬৫ হাজার টাকা।
তিনি জানান, মন্ত্রণালয় তাকে আশ্বস্ত করেছে ত্রাণ সামগ্রীর কোন অভাব হবে না। জেলা প্রশাসক জানান, জোয়ারের পানিতে এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধের বিভিন্ন স্থানে ভেঙ্গে যাওয়ায় নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। সকালের দিকে জেলার ওপর দিয়ে ৪০ থেকে ৮০ কিলোমিটার বেগে দমকা হাওয়া বয়ে যায় এবং বৃষ্টি হয়।
ঝড়ের কারণে উপকূলীয় এলাকার বিভিন্ন স্থানে বেড়ীবাঁধ ভেঙ্গে গেছে।
আবহাওয়াবিদরা জানান, ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু পশ্চিম উপকূলে আঘাত হানে এবং পরে দক্ষিণপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়।
কর্মকর্তা ও চট্টগ্রামের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, তাদেরকে ওখানে ঘণ্টায় প্রায় ৮০ কিলোমিটার বাতাস বয়ে চলেছে। এতে গাছপালা ও বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে পড়েছে। বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘিœত হচ্ছে।
পতেঙ্গা বন্দর এলাকার এক অধিবাসী জানান, জলোচ্ছ্বাসের পতেঙ্গা এলাকায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। প্রবল বৃষ্টিসহ আঘাত হানায় জলোচ্ছ্বাসের বন্দর এলাকায় অস্থায়ী পর্যটক মার্কেট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
চট্টগ্রামের আনোয়ারা বাঁশখালী এবং হাতিয়ার উপকূলীয় এলাকার বেড়ীবাঁধ ভেঙ্গে ব্যাপক এলাকা প্লাবিত হয়েছে। উপকূলীয় এলাকার অনেক স্থানে ঘর বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বিভিন্ন এলাকায় ত্রাণ তৎপরতা শুরু হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার জনগণকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়ে ভোলার ইলিশা ঘাট এলাকায় মেঘনা নদীর তীরে নোঙর করা বালি বোঝাই দু’টি কার্গো জাহাজ ডুবে চার শ্রমিক নিখোঁজ রয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়ের কারণে চট্টগ্রামে বিভিন্ন এলাকায় ভোলা ও পটুয়াখালীতে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়।
ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর প্রভাবে শুক্রবার দিবাগত রাত থেকে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, আজ সকাল ৯টা থেকে আগামী ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে।
আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু আজ দুপুর ১২টায় উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে চট্টগ্রামে নিকট দিয়ে বরিশাল-চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম শুরু করেছে এবং পরবর্তী ৪ থেকে ৫ ঘণ্টার মধ্যে উপকূল অতিক্রম সম্পন্ন করতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার। যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে।
চট্টগ্রাম, মংলা ও পায়রা সম্দ্রু বন্দরকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। এছাড়া কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরকে ৬ নম্বর বিপদ সংকেতকে দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নি¤œাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৪ থেকে ৫ ফুট অধিক উচ্চতা জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়ার পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
বিআইডব্লিউটিএ এবং বিআইডব্লিউটিসি জানায়, ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর কারণে উপকূলীয় এলাকায় লঞ্চ ও স্টীমার সার্ভিস চলাচল বন্ধ করা হয়েছে এবং এগুলোকে নিরাপদ স্থানে রাখা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর কারণে বরগুনায় বিভিন্ন এলাকার ১৪টি স্পটে প্রায় ২ কিলোমিটার ভেড়ী বাঁধ ভেঙ্গে গেছে।
লক্ষ্মীপুর জেলায় বিভিন্ন স্থানে ঘূর্ণিঝড়ে ৩ শতাধিক গাছপালা ভেঙ্গে পড়েছে। গত তিনদিনের টানা বর্ষণে ও জোয়ারের পানিতে ৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। শনিবার ভোর থেকে জেলায় পল্লী বিদ্যুতের সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
লক্ষ্মীপুর জেলায় গত ২ দিনে উপকূলবর্তী সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ২৫টি আশ্রয় কেন্দ্রে ২১ হাজার ৭শ’ মানুষকে আশ্রয় দেয়া হয়েছে। এছাড়া ৪০ হাজার মানুষ স্বজনদের বাড়িসহ নিরাপদে আশ্রয় নিয়েছে। জেলায় ৬৫টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। ৬টি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে।