চার দিনে আস্ত নদী গায়েব!

কানাডায় স্লিমস নামের একটি বড় নদী মাত্র চার দিনেই হারিয়ে গেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে হিমশৈল সরে যাওয়ায় পানিপ্রবাহ ভিন্নধারায় ঘুরে গেছে। ঘটনাটি ঘটেছে গত বছরের বসন্তে, মে মাসের শেষ সপ্তাহে। ওই সময়ে হিমবাহের বরফ গলার তীব্রতা বাড়ে। এতে স্লিমসের পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে আরেকটি নদীর অনুকূলে চলে গেছে।

গবেষকেরা বলছেন, স্লিমসের পানি আলাস্কা উপসাগরের দিকে গেছে, যা এর মূল গন্তব্য নয়। এর মূল গন্তব্য ছিল এর থেকে হাজারো কিলোমিটার দূরে। শত শত বছর ধরে কানাডার ওয়োকন এলাকার কাসকাওয়ালস হিমবাহ থেকে স্লিমস নদী হিমবাহের বরফ গলা পানি উত্তর দিকের ক্লুয়েন নদীতে ফেলছে। এরপর তা ইয়ুকন নদী হয়ে বেরিং সাগরে গিয়ে পড়ছে। কিন্তু ২০১৬ সালের বসন্ত মৌসুমে মাত্র চার দিনের মধ্যেই পুরো চিত্র বদলে যায়।

2f602746183ed4b2943c37f964e5abb1-58f5da9a4280b

কাসকাওয়ালস হিমবাহ গলা পানি বরফের গভীর খাদে প্রবাহিত হচ্ছে। স্লিমস নদী হয়ে তা কাসকাওয়ালসে গিয়ে পড়বে। ছবি: ওয়াশিংটন টাকোমা বিশ্ববিদ্যালয়।কাসকাওয়ালস হিমবাহ গলা পানি বরফের গভীর খাদে প্রবাহিত হচ্ছে। স্লিমস নদী হয়ে তা কাসকাওয়ালসে গিয়ে পড়বে। ছবি: ওয়াশিংটন টাকোমা বিশ্ববিদ্যালয়।কানাডায় স্লিমস নামের একটি বড় নদী মাত্র চার দিনেই হারিয়ে গেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে হিমশৈল সরে যাওয়ায় পানিপ্রবাহ ভিন্নধারায় ঘুরে গেছে। একে পরিবেশবাদীরা বলছেন নদীদস্যুতা। আশ্চর্য প্রকৃতি!

ঘটনাটি ঘটেছে গত বছরের বসন্তে, মে মাসের শেষ সপ্তাহে। ওই সময়ে হিমবাহের বরফ গলার তীব্রতা বাড়ে। এতে স্লিমসের পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে আরেকটি নদীর অনুকূলে চলে গেছে।

গবেষকেরা বলছেন, স্লিমসের পানি আলাস্কা উপসাগরের দিকে গেছে, যা এর মূল গন্তব্য নয়। এর মূল গন্তব্য ছিল এর থেকে হাজারো কিলোমিটার দূরে। শত শত বছর ধরে কানাডার ওয়োকন এলাকার কাসকাওয়ালস হিমবাহ থেকে স্লিমস নদী হিমবাহের বরফ গলা পানি উত্তর দিকের ক্লুয়েন নদীতে ফেলছে। এরপর তা ইয়ুকন নদী হয়ে বেরিং সাগরে গিয়ে পড়ছে। কিন্তু ২০১৬ সালের বসন্ত মৌসুমে মাত্র চার দিনের মধ্যেই পুরো চিত্র বদলে যায়।

নেচার জিওসায়েন্সের গ্রাফিকস।নেচার জিওসায়েন্সের গ্রাফিকস।মহাদেশীয় পর্যায়ের পুনর্বিন্যাসের বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরেই একদল মার্কিন গবেষক নথিভুক্ত করছেন। এ গবেষক দলটি কয়েক বছর ধরেই হিমবাহের স্থান পরিবর্তনের ঘটনাটি পর্যবেক্ষণ করছিল। ২০১৬ সালে মাঠপর্যায়ে পর্যবেক্ষণ করতে গিয়ে তারা আমূল পরিবর্তন ঘটে যাওয়া একটি ভূপৃষ্ঠের মুখোমুখি হয়।

ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতাত্ত্বিক জেমস বেস্ট বলেন, ‘আমরা যথারীতি স্লিমস নদীকে পরিমাপ কাজের জন্য ওই অঞ্চলে গিয়েছিলাম। কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখি, নদীগর্ভ এলাকা কমবেশি শুকিয়ে গেছে। আগে যে বদ্বীপে আমাদের নৌকা করে যেতে হয়েছিল, সেখানে তখন ধূলিঝড় বইছিল। ভূদৃশ্য পরিবর্তনে এটি অবিশ্বাস্য নাটকীয় পরিবর্তন।’

একটি পরিসংখ্যানগত বিশ্লেষণ ‘নেচার জিওসায়েন্স’ সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে।

গবেষণা প্রবন্ধের মূল লেখক ও ওয়াশিংটন টাকোমা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূবিজ্ঞানী ড্যান শুগার বলেন, ‘এখানকার পানিতে চলা ছিল বিপজ্জনক। পুরোনো নদীগর্ভে হাঁটার সময় যেকোনো সময় আটকে যাওয়ার আশঙ্কা ছিল। কিন্তু দিনের পর দিন আমরা পানির স্তর কমে যাওয়া দেখলাম।’

গবেষক বেস্ট বলেন, ‘আমরা দেখলাম, হিমবাহের সামনের দিক থেকে যত পানি আসত, তা দুটি ভাগে বিভক্ত হওয়ার বদলে একটিতে প্রবাহিত হতে শুরু করেছে।’
নদীর প্রবাহ পরিমাপ করে গবেষকেরা দেখেছেন, স্লিমস যেখানে ছিটেফোঁটায় পরিণত হয়েছে, সেখানে উল্টোটা ঘটেছে দক্ষিণে প্রবাহিত আলাস্কা নদীর ক্ষেত্রে। স্বচ্ছ পানির এ নদী ইউনেসকোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট বা বিশ্বের ঐতিহাসিক স্থান হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। গত বছরে স্লিমস ও আলাস্কার আকার তুলনামূলকভাবে প্রায় সমান থাকলে এখন আলাস্কা ৬০ থেকে ৭০ গুণ বড় হয়ে গেছে। এ পরিবর্তন ঘটেছে হঠাৎ করেই। স্লিমস নদীর প্রবাহ কমেছে ২০১৬ সালের ২৬ থেকে ২৯ মে—এ চার দিনের মধ্যেই।

অবশ্য সুদূর অতীতে এ রকম নদীদস্যুতার ঘটনা ঘটেছে। সে প্রমাণ ভূতাত্ত্বিকদের কাছে আছে। গবেষক শুগার বলেন, ‘আমাদের জীবদ্দশায় কেউ রাতারাতি নদী হারিয়ে যাওয়ার ঘটনা টুকে রাখেনি। এ রকম প্রমাণ দেখতে একুশ শতকের পরিবর্তে মানুষকে হাজার বছর আগের ভূতাত্ত্বিক রেকর্ড ঘাঁটতে হয়। এখন আমাদের সামনেই এটা ঘটেছে।’

ওয়াইও স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক লনি থম্পসন বলেন, পর্যবেক্ষণটির মাধ্যমে ক্রমাগত তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে আকস্মিক ও প্রচণ্ড পরিবেশগত প্রভাবের বিষয় উঠে এসেছে। কিছু প্রান্তিক মানের বিষয় আছে, যা প্রকৃতিতে চলে গেলে সবকিছু হঠাৎ পরিবর্তন হতে শুরু করে।

কাসকাওয়ালস হিমবাহ গলা পানি বরফের গভীর খাদে প্রবাহিত হচ্ছে। স্লিমস নদী হয়ে তা কাসকাওয়ালসে গিয়ে পড়বে। ছবি: ওয়াশিংটন টাকোমা বিশ্ববিদ্যালয়।কাসকাওয়ালস হিমবাহ গলা পানি বরফের গভীর খাদে প্রবাহিত হচ্ছে। স্লিমস নদী হয়ে তা কাসকাওয়ালসে গিয়ে পড়বে। ছবি: ওয়াশিংটন টাকোমা বিশ্ববিদ্যালয়।কানাডায় স্লিমস নামের একটি বড় নদী মাত্র চার দিনেই হারিয়ে গেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে হিমশৈল সরে যাওয়ায় পানিপ্রবাহ ভিন্নধারায় ঘুরে গেছে। একে পরিবেশবাদীরা বলছেন নদীদস্যুতা। আশ্চর্য প্রকৃতি!

ঘটনাটি ঘটেছে গত বছরের বসন্তে, মে মাসের শেষ সপ্তাহে। ওই সময়ে হিমবাহের বরফ গলার তীব্রতা বাড়ে। এতে স্লিমসের পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে আরেকটি নদীর অনুকূলে চলে গেছে।

গবেষকেরা বলছেন, স্লিমসের পানি আলাস্কা উপসাগরের দিকে গেছে, যা এর মূল গন্তব্য নয়। এর মূল গন্তব্য ছিল এর থেকে হাজারো কিলোমিটার দূরে। শত শত বছর ধরে কানাডার ওয়োকন এলাকার কাসকাওয়ালস হিমবাহ থেকে স্লিমস নদী হিমবাহের বরফ গলা পানি উত্তর দিকের ক্লুয়েন নদীতে ফেলছে। এরপর তা ইয়ুকন নদী হয়ে বেরিং সাগরে গিয়ে পড়ছে। কিন্তু ২০১৬ সালের বসন্ত মৌসুমে মাত্র চার দিনের মধ্যেই পুরো চিত্র বদলে যায়।

নেচার জিওসায়েন্সের গ্রাফিকস।নেচার জিওসায়েন্সের গ্রাফিকস।মহাদেশীয় পর্যায়ের পুনর্বিন্যাসের বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরেই একদল মার্কিন গবেষক নথিভুক্ত করছেন। এ গবেষক দলটি কয়েক বছর ধরেই হিমবাহের স্থান পরিবর্তনের ঘটনাটি পর্যবেক্ষণ করছিল। ২০১৬ সালে মাঠপর্যায়ে পর্যবেক্ষণ করতে গিয়ে তারা আমূল পরিবর্তন ঘটে যাওয়া একটি ভূপৃষ্ঠের মুখোমুখি হয়।

ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতাত্ত্বিক জেমস বেস্ট বলেন, ‘আমরা যথারীতি স্লিমস নদীকে পরিমাপ কাজের জন্য ওই অঞ্চলে গিয়েছিলাম। কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখি, নদীগর্ভ এলাকা কমবেশি শুকিয়ে গেছে। আগে যে বদ্বীপে আমাদের নৌকা করে যেতে হয়েছিল, সেখানে তখন ধূলিঝড় বইছিল। ভূদৃশ্য পরিবর্তনে এটি অবিশ্বাস্য নাটকীয় পরিবর্তন।’

একটি পরিসংখ্যানগত বিশ্লেষণ ‘নেচার জিওসায়েন্স’ সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে।

গবেষণা প্রবন্ধের মূল লেখক ও ওয়াশিংটন টাকোমা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূবিজ্ঞানী ড্যান শুগার বলেন, ‘এখানকার পানিতে চলা ছিল বিপজ্জনক। পুরোনো নদীগর্ভে হাঁটার সময় যেকোনো সময় আটকে যাওয়ার আশঙ্কা ছিল। কিন্তু দিনের পর দিন আমরা পানির স্তর কমে যাওয়া দেখলাম।’

গবেষক বেস্ট বলেন, ‘আমরা দেখলাম, হিমবাহের সামনের দিক থেকে যত পানি আসত, তা দুটি ভাগে বিভক্ত হওয়ার বদলে একটিতে প্রবাহিত হতে শুরু করেছে।’

কাসকাওয়ালস নদী। স্লিমস নদীর পানি এখন এখানে আসায় স্রোত বেড়েছে। ছবি: ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়।কাসকাওয়ালস নদী। স্লিমস নদীর পানি এখন এখানে আসায় স্রোত বেড়েছে। ছবি: ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়।
নদীর প্রবাহ পরিমাপ করে গবেষকেরা দেখেছেন, স্লিমস যেখানে ছিটেফোঁটায় পরিণত হয়েছে, সেখানে উল্টোটা ঘটেছে দক্ষিণে প্রবাহিত আলাস্কা নদীর ক্ষেত্রে। স্বচ্ছ পানির এ নদী ইউনেসকোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট বা বিশ্বের ঐতিহাসিক স্থান হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। গত বছরে স্লিমস ও আলাস্কার আকার তুলনামূলকভাবে প্রায় সমান থাকলে এখন আলাস্কা ৬০ থেকে ৭০ গুণ বড় হয়ে গেছে। এ পরিবর্তন ঘটেছে হঠাৎ করেই। স্লিমস নদীর প্রবাহ কমেছে ২০১৬ সালের ২৬ থেকে ২৯ মে—এ চার দিনের মধ্যেই।

অবশ্য সুদূর অতীতে এ রকম নদীদস্যুতার ঘটনা ঘটেছে। সে প্রমাণ ভূতাত্ত্বিকদের কাছে আছে। গবেষক শুগার বলেন, ‘আমাদের জীবদ্দশায় কেউ রাতারাতি নদী হারিয়ে যাওয়ার ঘটনা টুকে রাখেনি। এ রকম প্রমাণ দেখতে একুশ শতকের পরিবর্তে মানুষকে হাজার বছর আগের ভূতাত্ত্বিক রেকর্ড ঘাঁটতে হয়। এখন আমাদের সামনেই এটা ঘটেছে।’

ওয়াইও স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক লনি থম্পসন বলেন, পর্যবেক্ষণটির মাধ্যমে ক্রমাগত তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে আকস্মিক ও প্রচণ্ড পরিবেশগত প্রভাবের বিষয় উঠে এসেছে। কিছু প্রান্তিক মানের বিষয় আছে, যা প্রকৃতিতে চলে গেলে সবকিছু হঠাৎ পরিবর্তন হতে শুরু করে।

১৯৫৬ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত কাসকাওয়ালস হিমবাহ ৬০০ থেকে ৭০০ মিটার সরেছিল। কিন্তু ২০১৬ সালে হিমবাহটির সরে যাওয়ার হার বেড়ে গেলে হিমবাহ গলা পানি নতুন একটি চ্যানেল তৈরি করে। এ চ্যানেল আলাস্কা পানি প্রবাহিত করে এবং সঙ্গে স্লিমসের গতিপথ বদলে দেয়।

গবেষক থম্পসনের পূর্বাভাস অনুযায়ী, বিশ্বজুড়ে হিমবাহ গলার ঘটনায় নদীদস্যুতা পর্যবেক্ষণ গতি পাবে। এ ধরনের ঘটনা হিমালয় ও পেরুর আন্দেজ পর্বতমালায় দেখা যাবে।

আমাদের পৃথিবীর প্রত্যন্ত ও দুর্বল অঞ্চলগুলোতে এ ধরনের ঘটনা প্রায়ই ঘটে, যা বিশাল জনগোষ্ঠীর চোখের আড়ালে থাকে। কিন্তু এর ফলে ভাটি অঞ্চলে থাকা মানুষের পরিবার ও তাদের জীবনযাপনের ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়ে। তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান।