জলবায়ু রক্ষায় পাঁচ বছরে সাত বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন
বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলা আগামী পাঁচ বছরে বাড়তি ৭০০ কোটি ডলার বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে। বিশেষ করে দূষণ নিয়ন্ত্রণ, প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও পরিবেশগত সুশাসনের মতো খাতগুলোতে বর্তমান বিনিয়োগ খুবই অপ্রতুল। এসব খাতে অগ্রাধিকার বিনিয়োগ প্রয়োজন।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক জাতীয় বিনিয়োগ পরিকল্পনা (সিআইপি) শীর্ষক কর্মপরিকল্পনায় এ তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।
বুধবার পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় উদ্যোগে রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁও এ কর্মপরিকল্পনাটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়।
ইউএসএইড’র অর্থায়নে এবং জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার কারিগরি সহায়তায় পাঁচ বছর মেয়াদি (২০১৬ থেকে ২০২১) এই কর্মপরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিবেশ ও বন মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, ইউএসএইড-এর বাংলাদেশ মিশন পরিচালক জেনিনা জেরুজালস্কি, বাংলাদেশে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা এফএও-এর প্রতিনিধি ডেভিড ডুলান।
মূল উপস্থাপনায় পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আব্দুল্লাহ আল মহসিন চৌধুরী উল্লেখ করেন, ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) ১৭০টি প্রকল্প ছিল যা কোনো না কোনোভাবে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে সম্পর্কিত। এসকল প্রকল্পে ইতোমধ্যে ৪৭০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করা হয়েছে। কিন্তু সরকারের পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাসহ অন্যান্য জাতীয় পরিকল্পনার লক্ষ্য অর্জন করতে হলে ২০২১ সালের মধ্যে আরো ৭০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করতে হবে।
সিআইপিকে মূলত চারটি ভাগে বিন্যস্ত করা হয়েছে। এগুলো হলো— প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা, পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলা এবং পরিবেশগত সুশাসন নিশ্চিত করা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, জলবায়ুর পরিবর্তনজনিত প্রভাবে বাংলাদেশও ভুক্তভোগী। যারা বিশ্বে বেশি কার্বন নিঃসরণের জন্য দায়ী তারা এ বিষয়ে তেমন কথা বলে না, এজন্য আমাদের সোচ্চার হতে হবে।তিনি বলেন, বিশ্বের উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে মালদ্বীপের পুরো অংশ, বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলসহ বিশ্বের বহুদেশ পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার অনেক বেড়েছে, যার ফলে কার্বন নিঃসরণের জন্য মূলত দায়ী। নবায়নযোগ্য জ্বালানি এর একটি সমাধান হতে পারে। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ৫০ লাখ টন কয়লা পোড়ালে যে শক্তি পাওয়া যায় সেটি মাত্র এক মিনিটে সূর্যের আলোর মাধ্যমে পাওয়া সম্ভব। মন্ত্রী আরো বলেন, বাংলাদেশ সরকার এ বিষয়ে ব্যাপক উদ্যোগ নিয়েছে। বাড়ির রান্না, ইটভাটাসহ যেখানে কার্বন নিঃসরণ হয় সেগুলো নিয়ে একটি সমন্বিত পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পরিবেশ ও বন মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন বলেন, জলবায়ুর পরিবর্তনগত সমস্যা শুধু বাংলাদেশের সমস্যা নয়, এটি সারা বিশ্বের সমস্যা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরিবেশ সুরক্ষার বিষয়টি গুরুত্বের সাথে নিয়েছেন। এজন্য জলবায়ু সংক্রান্ত জাতীয় পর্যায়ে গঠিত কমিটির প্রধান হলেন প্রধানমন্ত্রী। তার নেতৃত্বে পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়নের কাজ এগিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, পরিবেশ, বন ও জলবায়ুর পরিবর্তন খাতে সঠিক ও অগ্রাধিকারযোগ্য প্রকল্প নির্বাচনে এই কৌশলগত বিনিয়োগ পরিকল্পনা সহায়ক হবে। তবে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট সবার অংশগ্রহণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে তিনি মনে করেন।
ইউএসএইডের মিশন পরিচালক জেনিনা জেরুজালস্কি বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ হওয়ার লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে সিআইপি এর সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। দেশের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক জাতীয় লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জন ও তার নিয়মিত মনিটরিং কার্যক্রমে সিআইপি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
অন্যদের মধ্যে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আব্দুল্লাহ আল মোহসীন, অতিরিক্ত সচিব মোহম্মদ জিয়াউর রহমান, এফএও এর বাংলাদেশের আবাসিক প্রতিনিধি ডেভিড ডুলান বক্তব্য রাখেন।
পরিবেশ মন্ত্রণালয় জানায়, জাতীয় পরিবেশ কমিটির গত ৬ আগস্ট মাসে প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায এই পরিকল্পনাটি অনুমোদন করা হয়। সংশ্লিষ্ট সব সংস্থাকে তাদের স্ব স্ব উন্নয়ন পরিকল্পনায় সিআইপির’ এর বিনিয়োগ কাঠামো অনুসরণের জন্য আহ্বান করা হয়। বলা হয়, বাংলাদেশের পরিবেশ খাতে ক্রমবর্ধমান চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রায় দুই বছর সময় নিয়ে এই বিনিয়োগ পরিকল্পনাটি তৈরি করা হয়েছে। এর মাধ্যমে অগ্রাধিকার প্রাপ্ত বিষয়গুলোতে প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ ও সংস্থাগুলোর মধ্যে অধিকতর সমন্বয় সাধন করা যাবে এবং নিয়মিত মনিটরিং এর মাধ্যমে বিনিয়োগের ফলাফল নির্ণয় করা সম্ভব হবে।