জানুয়ারি-মে প্রান্তিকে বেড়েছে প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহার

হবিগঞ্জের শাহজিবাজার গ্যাসক্ষেত্র

ইবি ডেস্ক:
প্রাকৃতিক গ্যাসের আমদানি-রপ্তানি ও উত্তোলন বেড়েছে। করোনার মধ্যেই গ্যাসের ব্যবহার বাড়ছে। মে মাসে বিশ্বজুড়ে ৪ দশমিক ৬ শতাংশ ব্যবহার বেড়েছে।
ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সি (ইআইএ) জানিয়েছে, উন্নত দেশগুলোতে মে মাসে প্রাকৃতিক গ্যাসের ব্যবহার গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১২ কোটি ৫৯ লাখ ঘনফুট ব্যবহার বেড়েছে। অর্থাৎ ৭ দশমিক ৪ শতাংশ বেড়েছে।
করোনার টিকা দেয়া শুরু হওয়ার পর থেকে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে অর্থনৈতিক কার্যকলাপ ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। যেভাবে গ্যাসের ব্যবহার কমে গিয়েছিল সেভাবেই বাড়া শুরু হয়েছে। দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোতে প্রাকৃতিক গ্যাসের রেকর্ড পরিমান চাহিদা বেড়েছে।
জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত প্রাকৃতিক গ্যাসের ব্যবহার ৪ দশমিক ৬ শতাংশ বেড়েছে। ব্যবহারের পাশাপাশি বেড়েছে রফতানি। মে মাসে ওইসিডিভুক্ত দেশগুলোর প্রাকৃতিক গ্যাস রফতানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩ দশমিক ৭ শতাংশ বেড়েছে। এ সময় রফতানির পরিমাণ দাঁড়ায় ৬ কোটি ৫০ লাখ ঘনফুট। রফতানি বৃদ্ধিতে প্রধান ভূমিকা রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওইসিডিভুক্ত আমেরিকান অঞ্চলে এক বছরের ব্যবধানে প্রাকৃতিক গ্যাস রফতানি বেড়েছে ৩৪ দশমিক ৬ শতাংশ। চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে ওইসিডিভুক্ত দেশগুলোতে প্রাকৃতিক গ্যাস রফতানি বেড়েছে ১ দশমিক ৩ শতাংশ। তবে পাইপলাইনের মধ্য দিয়ে রফতানি ২ শতাংশ কমেছে। আর এই সময়ে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) রফতানি বেড়েছে ২৩ দশমিক ১ শতাংশ।
রফতানির পাশাপাশি আমদানিও বেড়েছে। ওইসিডিভুক্ত অঞ্চলে এক বছরের ব্যবধানে প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি ৮ কোটি ৫৫ লাখ ঘনফুট আমদানি বেড়েছে। অর্থাৎ ৫ দশমিক ৩ শতাংশ বেড়েছে। চলতি বছরের শুরু থেকে মে পর্যন্ত আমদানি বেড়েছে ৪ দশমিক ২ শতাংশ।
ঐ অঞ্চলের দেশগুলোতে মে মাসে ১২ কোটি ৮৩ লাখ ঘনফুট প্রাকৃতিক গ্যাস উত্তোলন হয়েছে। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় উত্তোলন বেড়েছে ১ দশমিক ২ শতাংশ। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের উত্তোলন ৫ দশমিক ২ শতাংশ বেড়েছে। তবে কমেছে যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ার উত্তোলন।

রেকর্ড পরিমাণ শেল অয়েল উত্তোলনের সম্ভাবনা যুক্তরাষ্ট্রের

যুক্তরাষ্ট্রের শেল অয়েল (পাথরের খাঁজ থেকে উত্তোলিত তেল) উত্তোলন বৃদ্ধির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। আগামী মাসে জ্বালানি পণ্যটির উত্তোলন বেড়ে এক বছরের সর্বোচ্চে পৌঁছাতে পারে। মার্কিন এনার্জি ইনফরমেশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (ইআইএ) মাসভিত্তিক ড্রিলিং প্রডাক্টিভিটি রিপোর্টে এ তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিষ্ঠানটির পূর্বাভাস বলছে, আগামী সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্র দৈনিক ৮১ লাখ ব্যারেল শেল অয়েল উত্তোলনে সক্ষম হবে। এই পরিমান উত্তোলন হলে তা হবে ২০২০ সালের মে মাসের পর সর্বোচ্চ।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান শেল বেসিনগুলো থেকে সেপ্টেম্বরে প্রাকৃতিক গ্যাস উত্তোলনও বাড়তে পারে। পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী মাসে প্রাকৃতিক গ্যাস উত্তোলন ১৬ কোটি ঘনফুট বেড়ে দৈনিক ৮ হাজার ৬১০ কোটি ঘনফুটে উন্নীত হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের শীর্ষ শেল অয়েল উত্তোলনকারী দেশ। সাতটি প্রধান কেন্দ্র থেকে দেশটি শেল অয়েল উত্তোলন করে। এর মধ্যে অন্যতম এবং বৃহৎ কেন্দ্র পারমিয়ান বেসিন। সেপ্টেম্বরে রেকর্ড পরিমাণ শেল অয়েল উত্তোলনে প্রধান ভূমিকা রাখবে এই বেসিন। এ সময় পারমিয়ান বেসিনে দৈনিক ৪৯ হাজার ব্যারেল করে শেল অয়েল উত্তোলন বাড়তে পারে। সেপ্টেম্বরে এই বেসিনের মোট উত্তোলন দাঁড়াবে দৈনিক ৪৮ লাখ ব্যারেলে, যা ২০২০ সালের মার্চের তুলনায় সর্বোচ্চ উত্তোলন। এদিকে বাকেন ও অন্যান্য প্রধান কেন্দ্রে উত্তোলন ঘাটতি দেখা দেয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। তবে পারমিয়ান বেসিনের ঊর্ধ্বমুখী উত্তোলন এ ঘাটতি পুষিয়ে দেবে বলে মনে করছে ইআইএ।
প্রতিষ্ঠানটির সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়, ঈগল ফোর্ড ও সাউথ টেক্সাস এলাকার কেন্দ্রগুলোতে শেল অয়েল উত্তোলন দৈনিক পাঁচ হাজার ব্যারেল করে কমে মাস শেষে মোট দৈনিক ১০ লাখ ৫০ হাজার ব্যারেলে নেমে আসতে পারে। এক্ষেত্রে নর্থ ডাকোটা অঞ্চলের বাকেন ও মন্তানা বেসিনে শেল অয়েল উত্তোলন দৈনিক এক হাজার ব্যারেল করে হ্রাস পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সেপ্টেম্বরে এসব বেসিন থেকে মোট উত্তোলন হবে দৈনিক ১১ লাখ ৪০ হাজার ব্যারেল শেল অয়েল।
জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক বাজারে যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্য বিস্তারের অন্যতম সহায়ক হলো শেল অয়েল। কয়েক বছর ধরে শেল উত্তোলন উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেলেও গত বছর কভিড-১৯ মহামারী দেখা দিলে শেল অয়েলের বাজার চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে। জ্বালানি পণ্যটির চাহিদায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলে লকডাউনসহ করোনা প্রতিরোধে নেয়া নানা বিধিনিষেধ। এ সময় শেল অয়েলের বাজারে দরপতন দেখা দেয়। তবে চলতি বছর পণ্যটির বাজার চাঙ্গা হতে শুরু করেছে। দাম বাড়তে থাকায় মার্কিন এনার্জি ফার্মগুলোর খনন কার্যক্রমে নতুন গতি এসেছে।