জ্বালানি তেল বিক্রির টাকায় গ্যাস কয়লা অনুসন্ধান
এখন থেকে জ্বালানি তেল বিক্রির লাভ থেকে গ্যাস কয়লা অনুসন্ধান ও উত্তোলন করা হবে। এমন নিয়ম রেখে গ্যাস উন্নয়ন তহবিল সংশোধন করা হচ্ছে। এতদিন শুধু গ্যাস খাত থেকে তহবিলে টাকা নেয়া হত। নতুন করে তেলখাত থেকেও টাকা নেয়ার নীতি হচ্ছে। যেমন নতুন খাত থেকে অর্থ নেয়া হচ্ছে তেমনই এই তহবিলের অর্থ খরচের পরিধিও বাড়ানো হচ্ছে। এরসাথে গ্যাসের দাম বাড়ানো টাকা আগের মতই যোগ হবে।
গ্যাস উন্নয়ন তহবিল সংশোধন করে ‘গ্যাস, পেট্রোলিয়াম ও খনিজ উন্নয়ন তহবিল নীতিমালা ২০১৫’ করা হচ্ছে। সংশোধনীর নতুন নীতির খসড়া করা হয়েছে। খসড়ায় এই নিয়ম রাখা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
নতুন নীতিতে খরচের পরিধি বাড়ানো হয়েছে। আগে শুধু গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনে খরচ করার নিয়ম ছিল। এখন এই তহবিলের অর্থে গ্যাস পাইপ লাইন করা যাবে। ভাড়া নেয়া যাবে গাড়ি। দেয়া হবে সংশদের প্রশিক্ষণ।
খসড়া উন্নয়ন নীতিতে বলা হয়েছে, তেল বিপনন প্রতিষ্ঠানগুলোকে এখন থেকে লাভের এক শতাংশ উন্নয়ন তহবিলে জমা দিতে হবে। তবে এই তহবিলের অর্থ তেলখাতের জন্য ব্যয় করা হবে না। উল্লেখ্য, বিপিসির তিনটি জ্বালানি তেল বিপনন কোম্পানি পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা বছরে গড়ে ৭০০ কোটি টাকা লাভ করে। এথেকে এক শতাংশ তহবিলে জমা দিলে হবে গড়ে বছরে সাত কোটি টাকা। শুধু গ্যাস কয়লা উল্পুয়নে খরচ করা হবে। আগামী ১৫ বছর এই তহবিল গঠন চলতে থাকবে। তহবিল থেকে গ্যাস খাত উন্নয়নের জন্য ঋণ দেয়া যাবে। ঋণের যে সুদ পাওয়া যাবে তা আবার তহবিলে যোগ হবে। এখন গ্যাস উন্নয়ন তহবিলের অর্থ দিয়ে কয়লা, এলএনজি আমদানি ও শেল গ্যাসের অনুসন্ধান ও উত্তোলনেও ব্যবহারের পাশাপাশি নানা সমীক্ষা কাজে ব্যবহার করা হবে।
মোট পাঁচটি উৎস থেকে অর্থ নিয়ে এই তহবিল গঠন করা হবে। ভোক্তা পর্যায়ে গ্যাসের দাম বাড়ানোর একটি অংশ, গ্যাসের দাম বাড়ানোর পর যে অর্থ পেট্রোবাংলা পায় তার একটি অংশ, বিপিসির আওতাধীন কোম্পানিগুলোর লাভের অংশ, উন্নয়ন সহযোগীদের অনুদান এবং সরকার বা অন্য কোন উৎস থেকে এই তহবিলের জন্য দেয়া অর্থ দিয়ে এই তহবিল হবে।
তহবিলের অর্থ খরচের বিষয়টি নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে। এই তহবিলের অর্থে দেশের গ্যাস, কয়লা ও কঠিন শিলার মজুদ বাড়ানোর জন্য জরীপ ও অনুসন্ধান কূপ খনন করা যাবে। সম্ভাবনাময় স্থানে অনুসন্ধান করা যাবে। গ্যাস কয়লার উৎপাদন বাড়াতে প্রয়োজনীয় সমীক্ষার সকল বিষয়ে খরচ করা যাবে। গ্যাস সরবরাহের জন্য প্রয়োজনীয় পাইপ লাইন করা যাবে।
গ্যাস কয়লা উন্নয়নে সকল কাজে অর্থ খরচ করা যাবে তবে গাড়ি কেনা যাবে না। তবে প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় গাড়ি ভাড়া করা যাবে। প্রয়োজনে এই তহবিলের অর্থ দিয়ে সংশ্লিষ্টদের প্রশিক্ষণ দেয়া যাবে।
তহবিলের অর্থে কোন প্রকল্প উন্নয়ন করা হবে তা নির্ধারণ করতে একটি বাছাই কমিটি করা হবে। কমিটির প্রধান থাকবেন অতিরিক্ত সচিব।
গ্যাস উন্নয়ন তহবিলের অর্থে যে প্রকল্প নেয়া হবে তা যদি লাভজনক হয় তবে বিনিয়োগের অর্থ সুদ সহ ফেরত দিতে হবে। প্রথম তিন বছর কোন সুদ দেয়া লাগবে না। কিন্তু প্রকল্প শুরুর ১০ বছরের মধ্যে টাকা শোধ দিতে হবে। ১৪ কিস্তিতে শোধ করা যাবে। দুই ভাগ হারে সার্ভিস চার্জ দিতে হবে। তবে প্রকল্পে কোন লাভ না হলে অর্থ ফেরত দেয়া লাগবে না। অর্থাৎ গ্যাস অনুসন্ধানে এই তহবিলের অর্থ বিনিয়োগ করা হলে যদি গ্যাস পাওয়া যায় তবে অর্থ ফেরত দিতে হবে। আর যদি গ্যাস বা কয়লা না পাওয়া যায় তবে ফেরত দেয়া লাগবে না।
২০০৯ সালে গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়। এই বাড়তি অর্থকে গ্যাসখাতের উন্নয়নে কাজে লাগাতে বিইআরসির আদেশে গ্যাস উন্নয়ন তহবিল গঠন করা হয়। ২০১২ সালে গ্যাস উন্নয়ন তহবিল নীতিমালা চূড়ান্ত হয়।