জ্বালানি তেলের দাম: ব্যবস্থাপনা উন্নত করে দাম সমন্বয় করতে হবে
আন্তর্জাতিক বাজারে সকল জ্বালানি পণ্যের দাম বাড়ছে। জানুয়ারি থেকে এই উর্দ্ধমূখী। এখনও বাড়ছেই। গত সাত বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ দাম এখন। করোনার সময় যে দাম ছিল তা থেকে অনেক বেড়েছে।
করোনার সময় থমকে থাকা সবকিছু যখন সচল হতে শুরু করেছে তখন এই বাড়তি দাম অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে বড় ধাক্কা। সাধারণ সময়েই এই পরিমান দাম বাড়লে হিমশিম খেতে হয়। আর এখন এই সময় এই বাড়তি দাম উন্নয়নে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
যেহেতু বাংলাদেশের এখানে কোন কিছুই করার নেই, তাই ব্যবস্থাপনা উন্নত করে এই পরিস্থিতি সামাল দিতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনার প্রকোপ কমায় আমদানি খরচ বেড়েছে। চলতি অর্থবছর আরও বাড়তে পারে। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়তে থাকায় আমদানি খরচ বাড়বে। এতে বৈদেশিক মুদ্রার চাপ বাড়বে।
আন্তর্জাতিক বাজারে জানুয়ারি মাসে জ্বালানি তেলের দাম গড়ে প্রতি ব্যারেল ছিল ৪৯ ডলার। ফেব্রুয়ারিতে ৫৩ ডলার, মার্চে ৬০, এপ্রিলে ৬৫, মে মাসে ৬৪, জুনে ৬৬ ডলার, জুলাইয়ে ৭৩ ডলার এবং আগস্টে গড়ে প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ছিল ৭৪ ডলার। চলতি মাসে এই দাম ৮৫ ডলার ছাড়িয়ে গেছে।
ভবিষ্যতবাণী বলছে, দাম আরও বাড়বে। একশ’ ডলারেও পেীঁছতে পারে।
করোনা মহামারির কারণে গত বছরের এপ্রিলে বিশ্ববাজারে প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত তেলের দাম ঋণাত্মক ৩৭ ডলারের নেমে যায়। রেকর্ড এই দরপতনের পরেই তেলের দাম বাড়তে থাকে। গত বছরের বেশিরভাগ সময় প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত তেলের দাম প্রায় ৪০ ডলার ছিল।
দেশেও করোনার পর স্থবিরতা কাটিয়ে অর্থনৈতিক অবস্থা স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সচল হয়েছে। বেসরকারিখাতে ঋণের চাহিদাও বাড়তে শুরু করেছে। এতে দেশে জ্বালানি তেলের চাহিদা বেড়েছে।
করোনা নিয়ন্ত্রণে আসার পরে বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বেড়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে হচ্ছে। কিন্তু প্রাকৃতিক গ্যাস ও কয়লার সংকট ও রেকর্ড দাম বাড়ায় অনেকেই তেল ও ডিজেলনির্ভর হচ্ছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ঘাটতি তৈরি হয়েছে। এতে আগামী কয়েক বছর জ্বালানি তেলের দাম উদ্ধমূখী থাকতে পারে। এছাড়া শীত আসছে, এতে চাহিদা বাড়ার সাথে দামও বাড়বে। এবছরেই দাম ৯০ ডলারে পৌঁছতে পারে।
আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থা (আইইএ) বলছে, অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে জ্বালানির চাহিদা বেড়েছে। কিন্তু সরবরাহ যথেষ্ট নেই। জ্বালানি তেলের চাহিদা দৈনিক পাঁচ লাখ ব্যারেল হতে পারে। এতে মূল্যস্ফীতি হবে। আর অর্থনীতি আগের অবস্থায় ফিরতে দেরি হবে। কয়লা ও গ্যাসের দাম বাড়ার ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদনে তেল নির্ভরতা বেড়েছে। এতেও তেলের চাহিদা দ্রুত বাড়ছে। চলতি বছরের শেষ সময় পর্যন্ত জ্বালানি তেলের চাহিদা সরবরাহের চেয়ে বেশি থাকবে।
এই অবস্থায় বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) লোকসান শুরু করেছে। যদিও এতদিন লাভেই ছিল। জ্বালানি তেলের দাম বাড়লে তার প্রভাব প্রতিটি ক্ষেত্রে পড়ে। বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ বাড়বে। যানবাহনে খরচ বাড়বে। নিত্যপণ্যের দাম ইতিমধ্যে বেড়েছে।
জ্বালানি সচিব জানিয়েছেন, এখন যে দাম আছে তা সহনীয়। কিন্তু যদি এই দাম দীর্ঘদিন চলতে থাকে তবে সমন্বয় করার জন্য ভাবতে হবে। এতদিন বিপিসি যে লাভ করেছে তা দিয়ে যে কয়েকটি প্রকল্প চলমান আছে সেখানে বাধা পড়বে।
দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সচল রাখার স্বার্থে যথোপযুক্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আন্তর্জাতিক বাজার পর্যবেক্ষণ করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। দেশে এখনই দাম না বাড়িয়ে ভর্তুকি দিয়ে চালাতে হবে। তাহলে পিছিয়ে থাকা অর্থনীতি কিছুটা হলেও দ্রুত আগের অবস্থায় ফিরতে শুরু করবে।