তাইওয়ানে ভূমিকম্পে কয়েকটি ভবন ধসে ৭ জনের প্রাণহানি
তাইওয়ানে শনিবার ভোরের দিকে একটি শক্তিশালী ভূমিকম্পে ১৬তলা বিশিষ্ট একটি অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্স ধসে পড়েছে। এই ঘটনায় অন্তত ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং ৩০ জনের বেশি লোক ধ্বংসস্তুপের মধ্যে আটকা পড়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এই অ্যাপার্টমেন্টগুলোতে বসবাসরত পরিবারের সকল সদস্যই ঘটনার সময় উপস্থিত ছিল। তারা প্রথা অনুযায়ী পরিবারের মানুষের সঙ্গে চন্দ্র নববর্ষ উদযাপন করতে এসেছিল।
ঐতিহ্য অনুযায়ী মধ্যরাতের আগে পরিবারের সদস্যদের অবশ্যই একসঙ্গে থাকতে হয়।
ঐতিহাসিক নগরী তাইনানে শনিবার বিকেলে মৃতের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। ভোরে ৬.৪ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পটি আঘাত হানে।
উদ্ধারকর্মীরা জীবিতদের সন্ধানে ধ্বংসস্তুপ অপসারণ করছে।
চারটি ভবনের ওই আবাসিক কমপ্লেক্সটি ধসে পড়েছে।
এই ঘটনায় যারা মারা গেছে তাদের মধ্যে ১০ দিনের একটি মেয়ে রয়েছে।
জাতীয় দমকল বিভাগ জানায়, অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সটি ধসে পড়ায় যে ৫ জন মারা গেছে, এই শিশুটি তাদের একজন।
দমকল বিভাগ আরো জানায়, বাকি দুজন নগরীর বিভিন্ন স্থানে প্রাণ হারিয়েছে। ধ্বংসস্তুপে চাপা পড়ে তারা মারা যায়।
কর্মকর্তারা জানান, কতজন বাসিন্দা এখনও ধ্বংসস্তুপের নিচে আটকা পড়ে আছে সে ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে অনুমান করা হয়েছে যে এই ঘটনায় অন্তত ৩০ জন আটকা পড়ে থাকতে পারে।
উদ্ধার তৎপরতায় সহায়তা করার জন্য প্রায় ৪০০ সৈন্য মোতায়েন করা হয়েছে।
১৬ তলা বিশিষ্ট ধসে পড়া ভবন ওয়েই-কুয়ান বিল্ডিংয়ের বাসিন্দারা ভূমিকম্পের ফলে সৃষ্ট ভীতিকর পরিস্থিতির বর্ণনা করেন।
এক বাসিন্দা বলেন, ‘আমি ভবনগুলোকে উপরে-নিচে এবং ডাইনে-বাঁয়ে ঝাঁকি খেতে দেখেছি।’
তিনি স্থানীয় এসইটি টিভিকে বলেন, ‘দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলা ধসে পড়ে এবং আমি গ্যাসের গন্ধ পাই। গ্যাস ও পানির লাইন ফুটো হয়ে যায়।’
অ্যাপেল ডেইলি জানিয়েছে, অপর এক ব্যক্তি কয়েকটি জামা পরস্পরের সঙ্গে বেধে দড়ি তৈরি করে নয় তলা থেকে ছয় তলায় নেমে পড়েন।
এক নারী বলেন, ‘আমি হাতুড়ি দিয়ে বাড়ি মেরে ঘরের দরজা ভেঙ্গে বের হতে সক্ষম হই।’
অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সটি থেকে ২শ’র বেশি লোককে উদ্ধার করা হয়েছে। এদের মধ্যে আহত অবস্থায় ৪০ জনের বেশি লোককে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
স্বারাষ্ট্রমন্ত্রী চেন ওয়েই-জেন বলেন, ভবনটিতে আরো অনেক লোক থাকতে পারে বলে তিনি আশঙ্কা করছেন।
তিনি বলেন, ‘ভূমিকম্পটি আঘাত হানার সময় ঠিক কতজন লোক সেখানে উপস্থিত ছিলেন তাৎক্ষণিকভাবে তা জানা যায়নি।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা আশঙ্কা করছি যে আসন্ন নববর্ষের ছুটি উপলক্ষ্যে অধিকাংশ সদস্যই পরিবারের কাছে ফিরে এসেছেন।’
কর্মকর্তারা বলেন, ওই কমপ্লেক্সে ২৫৬ জন বাস করতেন। সেখানে ৯৬টি অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী চ্যাং সান-চেং দুর্গত এলাকা পরিদর্শন করেছেন।
অ্যাপেল ডেইলি জানিয়েছে, কান্নারত এক বয়স্কা নারী বলেন, তার ছেলে, পুত্রবধু ও নাতি-নাতনীরা এখনও ১৬তলায় আটকা পড়ে আছে।
এর আগে পৃথকভাবে ৭ তলা বিশিষ্ট অপর একটি ভবন থেকে অন্তত ৩০ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে।
কর্মকর্তারা বলেন, নগরীর অন্যান্য স্থানে বেশ কয়েকটি ভবন ধসে পড়েছে অথবা কাত হয়ে আছে।
কর্মকর্তারা বলেন, তাইনানে ৩১৬ জন আহত হয়েছে এবং ৬০ জনের বেশি লোককে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
শুক্রবার স্থানীয় সময় ভোর ৪টার দিকে (গ্রিনিচ মান সময় শুক্রবার ২০০০ টায় কাউশিয়াংয় থেকে ৩৯ কিলোমিটার উত্তরপূর্বে ১০ কিলোমিটার গভীরে ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। এটি দ্বীপটির দ্বিতীয় বৃহত্তম নগরী ও গুরুত্বপূর্ণ বন্দর।
প্রাথমিকভাবে বলা হয়েছিল এই ভূমিকম্পের তীব্রতা ছিল ৬.৭। কিন্তু পরে এর তীব্রতা ৬.৪ বলে জানানো হয়।