‘তালগাছ আমার’ অবস্থানে সরকার ও পরিবেশবিদ
’তালগাছ আমার’ অবস্থানে সরকার ও পরিবেশবিদ। সরকার বোঝাতে চাইছে রামপালে কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র হলে সুন্দরবনের ক্ষতি হবে না। পরিবেশবিদরা বলছেন, সুন্দরবনের ক্ষতি নিশ্চিত।
রোববার বিদ্যুৎভবনে মুখোমুখি হয় এই দুইপক্ষ। আয়োজক ছিল বিদ্যুৎ বিভাগ।
পরিবেশবিদরা বলেন, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র করতে এখনই যে কার্যক্রম চলছে তা প্রশ্নবিদ্ধ। যথাযথ নিয়ম মেনে জমি অধিগ্রহন হয়নি। মাটি ভরাট কাজও হচ্ছে ইচ্ছে মত। তা ছাড়া শুরুতেই অনেক দুর্নীতি হয়েছে। ভবিষ্যতে আরও অনেক সমস্যা হবে। সুন্দরবন, সুন্দরবনই।এর কোনাে বিকল্প নেই। রামপালে বিদ্যুৎ কেন্দ্র হলে সুন্দরবনের ক্ষতি হবেই। এজন্য এই কেন্দ্র বাতিল করতে হবে। অন্য স্থানে সরিয়ে নিতে হবে।
বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে বলা হয়েছে, স্বচ্ছভাবে সব কাজ করা হয়েছে।সিুন্দরবন রক্ষা করেই সব কাজ করা হবে। অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থান বিবেচনায় রামপালই সব থেকে উত্তম জায়গা।
রামপালে অধ্যাধুনিক কেন্দ্র করা হবে। বিশ্বের সবচেয়ে আধুনিক প্রযুক্তিতে। এতে সুন্দরবনের পরিবেশের কোনো ক্ষতি হবে না।
সুলতানা কামাল বলেন, নিশ্চিত রামপাল প্রকল্প হলে সুন্দরবন ধ্বংস হয়ে যাবে। এখন আর বিষয়টি আশঙ্কা করি না। সরকারে রামপাল নিয়ে দেয়া বক্তব্যে সন্তুষ্ট হওয়া যায়নি।যুদ্ধ করে স্বাধীনতা এনেছি, এরকম চিন্তা করার কারণ নেই দেশের স্বার্থ বিরোধী কাজ করব।যেহেতু সুন্দরবনের কোন বিকল্প নেই তাই সুন্দরবনের পাশে কোনভাবে এই কেন্দ্র নির্মাণ করা উচিত হবে না।
তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ, বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মোহাম্মদ বলেন, পরিবেশ রক্ষা করে যে উন্নয়ন করা সম্ভব নয় তা টেকসই উন্নয়ন হতে পারে না। সুন্দরবন হচ্ছে এমন জায়গা যেখানে কোনো ঝুঁকি নেয়া যায় না। এতে উপকূলের চার কোটি মানুষের জীবন বিপন্ন হবে। এই প্রকল্প বাতিল হতে যত দেরি হবে ততই সুন্দরবনের ক্ষতি হবে। বাংলাদেশে বিদ্যুতের প্রয়োজন আছে। এই বিদ্যুৎ উৎপাদনে কাঠামোগত পরিবর্তন দরকার। এজন্য সবাই মিলে আলোচনা করে সমাধান করা সম্ভব। তবে সবার আগে এই প্রকল্প বাতিল করতে হবে। বাতিল করার পর আলোচনা হতে পারে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বদরুল ইমাম বলেন, বিভিন্ন দেশ আরও উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার করে সালফার ডাই অক্সাইড এবং নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইড নিয়ন্ত্রণ করছে। কিন্তু এগুলো ভূগর্ভের পানির দূষন বাড়িয়ে দিচ্ছে। সরকার বলছে সব ছাই বিক্রি করে দেয়া হবে। কিন্তু আবার ছাই রাখার পুকুরও তৈরি করা হচ্ছে। এতে বোঝা যায় কিছু ছাই বিক্রি হবে না। আশঙ্কা এই সব জায়গাতে বন্যার তোড়ে ছাই ভেসে গিয়ে নদীর দূষন ঘটাবে। তারমানে সুন্দরবনের পরিবেশের ক্ষতি অনিবার্য।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)’র সাধারণ সম্পাদক ডা. মো. আব্দুল মতিন বলেন, সরকার বার বার পরিবেশবিদদের সঙ্গে আলোচনা করছে, আবার বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের প্রক্রিয়াও চালিয়ে যাচ্ছে। এটি হতে পারে না। ভারত বাংলাদেশের বন্ধু দেশ। তাই বলে ভারতের ইচ্ছেই সব কিছু হতে পারে না। এটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। সরকার বিদ্যুতের মহাপরিকল্পনা করেছে এজন্য ধন্যবাদ। বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন বন্ধ করতে বলিনি। শুধু স্থান পরিবর্তনের কথা বলেছি।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)’র প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, যেহেতু প্রকল্পটি সুন্দরবনের কাছে তাই সরকারকে বারবার চিন্তা করার আহ্বানা জানাবো। পরিবেশগত সমীক্ষা প্রতিবেদন সরকারি প্রতিষ্ঠান করায় এর গ্রহনযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে স্বাধীন নিরপেক্ষ তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে করার দাবি জানান।
সভায় অন্যদের মধ্যে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ম. তামিম, ড. ইজাজ হোসাইন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এম এম আকাশ, টিআইবি‘র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম, ব্লু প্ল্যানেট ইনিশিয়েটিভ নির্বাহী পরিচালক শরীফ জামিল বক্তব্য রাখেন। আলোচনার শুরুতে বাংলাদেশ-ভারত ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক উজ্জ্বল কান্তি ভট্টাচার্য রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র ও বিশ্বে কয়লা চালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের অবস্থান নিয়ে একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন।
অন্যদিকে সভায় বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, পরিবেশবিদরা সুন্দরবনের ক্ষতির আশংকা করছেন কিন্তু তারা কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দেননি। পরিবেশের কোন ক্ষতি না করেই উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে বলে তিনি পরিবেশবিদদের আশস্ত করেন। তিনি বলেন, আনুষঙ্গিক ও স্ট্যাটিস্টিক্যাল সুবিধার কারণে বাগেরহাটের রামপালে বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পরিবেশের জন্য উদ্যেগজনক সকল অনুঘটককে আন্তর্জাতিক অনুশাসনের আওতায় রেখেই এ বিদ্যুৎ কেন্দ্র করা হবে।
সভায় বিদ্যুৎ সচিব মনোয়ার ইসলাম, পিডিবির চেয়ারম্যান শামসুল হাসান মিয়া, পাওয়ার সেলের মহা পরিচালক মোহাম্মদ হোসেইনসহ উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।