তিতাস গ্যাস জিম্মি ঠিকাদারের কাছে

ঠিকাদারের কবলে জিম্মি তিতাস গ্যাস। অবৈধ সংযোগ আর ঘুষ বাণিজ্যই তাদের কাজ। সাথে জড়িত কিছু কর্মকর্তা কর্মচারি আর অসত্ গ্রাহকরা। প্রকাশ্যে চলছে অবৈধ অর্থের লেনদেন। কোন গ্রাহক নিয়ম মেনে সরকারের দেয়া সুবিধা নিতে পারছেন না। যেসব অবৈধ সংযোগ বৈধ করার সুযোগ দেয়া হয়েছিল তাদেরও এখন নতুন করে বিড়ম্বনায় ফেলা হচ্ছে। আর এসবই হচ্ছে ঠিকাদার ও কর্মকর্তা কর্মচারিদের মাধ্যমে।
অবৈধ গ্যাস সংযোগের সাথে জড়িত থাকার কারণে ২৯টি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকা ভূক্ত করা হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে আর গ্যাস সংযোগের কাজ করতে দেয়া হবে না। বিভিন্নভাবে এরা গ্রাহককে প্রতারনা করছে। এবং অবৈধ সংযোগ নিতে উত্সাহিত করছে। তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠানগুলোকে কালো তালিকাভূক্ত করেছে।
যারা অবৈধ সংযোগ নিয়ে গ্যাস ব্যবহার করছেন সেই সব গ্রাহকরা নিয়মিত অর্থ দিচ্ছেন কর্মকর্তাদের। আবার যারা বৈধভাবে গ্যাস ব্যবহার করতে চান তারাও ঠিকাদারদের কবল থেকে বের হতে পারছেন না।
গ্যাসের বেশিরভাগ আঞ্চলিক কার্যালয়গুলোতেই কে ঠিকাদার কে কর্মকর্তা-কর্মচারি বোঝার উপায় থাকে না। কর্মকর্তাদের পাশাপাশি কথা বলছেন ঠিকাদাররাও। কারণ চাহিদা পত্র (ডিমান্ড নোট) নিতে গেলে ঠিকাদার ঠিক করতেই হবে। সরকারি নিয়ম অনুযায়ি এই ঠিকাদার ঠিক করা ছাড়া চাহিদাপত্র হবে। ফলে তারা তাদের ইচ্ছেমত দাম হাঁকিয়ে টাকা নিচ্ছেন। ঠিকাদারের কাছে জিম্মি হয়ে আছে গ্রাহক। কিছু কর্মকর্তাও এরসঙ্গে জড়িত। বাধ্যতামূলকভাবে ঠিকাদারে কাছে যেতে হয় বলে তাদের চাহিদাও বেশি। সরকারি একটি নির্ধারিত মূল্য ঠিক করা আছে ঠিকাদারের জন্য। কিন্তু সে অর্থে কাজ করেন এমন একজনও পাওয়া গেল না কয়েকটা তিতাস কার্যালয় ঘুরে।
ভোগান্তির শিকার একজন গ্রাহক জানান, তিতাসের সংযোগ পেতে মূল হচ্ছে ঠিকাদার। তাই ঠিকাদাররা তাদের ইচ্ছেমতো টাকা চায়। দরদাম করে যে যেভাবে পারে সেভাবে এখন গ্যাসের সংযোগ নিচ্ছেন।
এ বিষয়ে সেখানকার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা জানান, ঠিকাদাররা প্রায় তিন লাখ টাকা জমা দিয়ে লাইসেন্স নেন। তারা যেভাবে হোক টাকাটা তুলতে চান। সুতরাং তারা সুবিধা অনুযায়ি যার থেকে যত টাকা সম্ভব আদায়ের চেষ্টা করেন।
তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিষ্ট্রিবিউশন কোম্পানির ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক নওশাদ ইসলাম জানান, রাজধানীর বহু এলাকায় একটি চক্র অবৈধ পাইপ বসিয়ে বিতরণ লাইনের সঙ্গে সংযোগ দিচ্ছে। এর সঙ্গে তিতাসের তালিকাভুক্ত ঠিকাদারের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। তাদের এরই মধ্যে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া যারা ২০ জুনের মধ্যে অবৈধ সংযোগ বৈধ করার আবেদন করেনি তাদের সংযোগ বিচ্ছিন্ন অভিযান চলছে।
কালো তালিকাভুক্ত ২৯ কোম্পনি
অবৈধ কাজে জড়িত থাকার অভিযোগে ২৯টি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকা ভূক্ত করা হয়েছে। এগুলো হলো, মেসার্স হুমায়ুন এন্টারপ্রাইজ, রিজিয়া গ্যাস সার্ভিসেস, স্বদেশ এন্টারপ্রাইজ, শুভ এন্টারপ্রাইজ, এ আর এন্টারপ্রাইজ, টেকনো গ্যাস সার্ভিসেস, সুরমা গ্যাস কোম্পানি, সুপারসনিক এপোলো, রায়হান গ্যাস কোম্পানি, ইসলাম এন্টারপ্রাইজ, মেট্রো কনস্ট্রাকশন কোম্পানি, রিয়াদ গ্যাস কোম্পানি, গাজি গ্যাস সার্ভিসেস, বিক্রমপুর এসোসিয়েট, খান ট্রেডার্স, আজিজ প্রকৌশল ও নির্মান সংস্থান, জিয়া এন্টারপ্রাইজ, নিপা এন্টারপ্রাইজ, জনতা কর্পোরেশন, আপন এন্টারপ্রাইজ, চৌধুরী কনস্ট্রাকশন কোম্পানি, হুসাইন এন্টারপ্রাইজ, জহির ইঞ্জিনিয়ারিং, মা ইন্টারন্যাশনাল, আল জাবলে নূর কনস্ট্রাকশন কোম্পানি, আল মজিনা গ্যাস সার্ভিসেস, কাজী এন্টারপ্রাইজ এবং প্রাইম এন্টারপ্রাইজ।
অসত্ কর্মকর্তা কর্মচারি
অবৈধ কাজে জড়িত থাকার দায়ে বিভিন্ন সময় কর্মকর্তা কর্মচারি তিতাস কর্তৃপক্ষের কাছে ধরা পরেছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নেয়া হয়েছে। সম্প্রতি সাতজনকে চাকরি থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে আরো দুজনকে। যাদের চাকরিচ্যুত করা হয়েছে তারা হলেন, মিটার সহকারী মো. খোরশেদ আলম পাটওয়ারী, সাহায্যকারী মো. আবদুর রহিম মৃধা, হিসাব সহকারী মো. শওকত ইমাম, সুপার ভাইজার এবিএম সেলিম, সুপার ভাইজান কাজী আবদুল হারুন, সিনিয়র হিসাব সহকারী মো. হামিদুল ইমলাম এবং জুনিয়র প্রকৌশল কর্মী মো. নুরুল হক মোল্লা।