দশ মেগা প্রকল্প পাচ্ছে বাজেটের ৯ শতাংশ: রূপপুরে সর্বোচ্চ

নিজস্ব প্রতিবেদক/বিডিনিউজ:
দেশে বড় বড় যেসব উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে, তার শীর্ষ দশটিতে আগামী অর্থবছরের বাজেটে মোট ৫৪ হাজার ৪৫১ কোটি টাকার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, যা মোট বাজেটের ৯ শতাংশের সমান।
বরাদ্দের এই পরিমাণ চলতি অর্থবছরে ওই দশ প্রকল্পের সমন্বিত বরাদ্দের তুলনায় ১ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা বা ২ দশমিক ৭১ শতাংশ বেশি।
এই দশ মেগা প্রকল্পে গেল অর্থবছর ৫২ হাজার ৯৭০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছিল।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য ছয় লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার এই বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন।
এর মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতায় অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য ২ লাখ ২৫ হাজার ৩২৪ কোটি টাকার বরাদ্দ রাখা হয়েছে, যা চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপির তুলনায় ১২ শতাংশ বেশি।
চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপির আকার ১ লাখ ৯৭ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকা।
দশ মেগা প্রকল্পের মধ্যে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবার পেয়েছে সর্বোচ্চ ১৮ হাজার ৪২৬ কোটি টাকা; যা বিদায়ী অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে ১৪ শতাংশ বেশি।
দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি এক লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের এই প্রকল্পের জন্য চলতি অর্থবছরও সর্বোচ্চ ১৫ হাজার ৬৯১ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল।
২০১৬ সালের জুলাই থেকে শুরু হওয়া এই প্রকল্প ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
এবার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ পেয়েছে মাতারবাড়ি আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রে। এ প্রকল্প পাচ্ছে ৬ হাজার ১৬২ কোটি টাকা, যা গেল অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ৬৮ শতাংশ বেশি।
প্রায় ৩৬ হাজারে কোটি টাকার এ প্রকল্প ২০২৪ সালে শেষ করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ চলছে। বিদায়ী বাজেটে এ প্রকল্পে বরাদ্দ ছিল ৩ হাজার ৬৭০ কোটি টাকা।
প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচির (পিইডিপি-৪) জন্য আগামী অর্থবছরে বরাদ্দ রাখা হয়েছে প্রায় ৫ হাজার ৫৪ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে এ প্রকল্পে ৫ হাজার ৪০ কোটি টাকার বরাদ্দ ছিল।
আগামী অর্থবছরের জন্য চতুর্থ সর্বোচ্চ ৪ হাজার ৮০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ঢাকা ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (লাইন৬) প্রকল্পে।
রাজধানীর উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার মেট্রোরেল (এমআরটি-৬) নির্মাণের এ প্রকল্পে চলতি অর্থবছরের বরাদ্দ ছিল ৪ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা।
প্রকল্পটির উত্তরা থেকে আগাগাঁও পর্যন্ত প্রায় ১২ কিলোমিটার অংশ আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও মহামারীর কারণে বাস্তবায়ন কাজ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় লক্ষ্য পূরণ নিয়ে সংশয় রয়েছে বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষ।
পদ্মাসেতু রেলসংযোগ (১ম সংশোধিত) প্রকল্পের জন্য ৩ হাজার ৮২৩ কোটি ৫১ লাখ টাকার বরাদ্দ রাখা হয়েছে এবার। বিদায়ী অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ৩ হাজার ৬৮৪ কোটি টাকা।
আগামী ২০২৪ সালের মধ্যে পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ করার লক্ষ্য থাকলেও ২০২২ সালের জুনের মধ্যে পদ্মা বহুমুখী সেতুর উপর দিয়ে রেল চলাচলের উপযোগী করা হবে।
এরপরের বড় বরাদ্দ পাচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু নির্মাণ প্রকল্প। নতুন বাজেটে এই প্রকল্পে বরাদ্দ ২৩ শতাংশের বেশি বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ৩ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে এ প্রকল্পে ২ হাজার ৭৪৩ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল।
এর পরের বরাদ্দ ৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে পদ্মা বহুমূখী সেতু প্রকল্পে। আগামী বছরের জুনের মধ্যে শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে চলমান প্রকল্পটির জন্য গেলবার বরাদ্দ ছিল ৫ হাজার কোটি টাকা। প্রকল্পটি এ পর্যন্ত ৮৬ শতাংশ বাস্তবায়িত হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী আগামী বছরের জুনের মধ্যে শেষ হবে।
নতুন অর্থবছরে সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাওয়া দশটি প্রকল্পের মধ্যে এবার নতুন প্রবেশ করেছে ঢাকা আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। ‘ঢাকা আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে’ নামের এ প্রকল্পের জন্য নতুন বাজেটে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৩ হাজার ২২৭ কোটি টাকা। এছাড়া এক্সপানশন অ্যান্ড স্ট্রেংদেনিং অব পাওয়ার সিস্টেম নেটওয়ার্ক অন্ডার ডিপিডিস প্রকল্পের জন্য ৩ হাজার ৫১ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
আর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ (প্রথম পর্যায়) (প্রথম সংশোধিত) প্রকল্পে আগামী অর্থবছরের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ২ হাজার ৮২৭ কোটি ৫২ লাখ টাকা।