দাম বাড়ানোর আগে ব্যবস্থাপনা উন্নত হোক
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে। কদিন আগে যে প্রস্তাব আমলে নেয়া হয়নি তা ছিল সাময়িক। প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ আবার সব গ্যাস সরবরাহ ও বিতরণ কোম্পানি প্রস্তাব জমা দিয়েছে।
নতুন প্রস্তাব মূল্যায়ন করতে কারিগরি কমিটি গঠন করেছে বিইআরসি। কাজ শুরু করেছে বিইআরসি গঠিত কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি।
কোম্পানিগুলোর প্রস্তাব আগের মতনই আছে, অর্থাৎ দাম দ্বিগুণ করার আবেদন।
জ্বালানি থেকে পর্যায়ক্রমে ভর্তুকি তুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত অনেক আগের। দ্বিগুণ দাম প্রস্তাব করার মানে হচ্ছে এইখাতে পুরোপুরি ভর্তুকি তুলে দেয়ার পথে এগিয়ে যাওয়া।
পেট্রোবাংলার মোট গ্যাস কেনা ও বিক্রির মাঝে যে পার্থক্য তা বিবেচনা করেই বিতরণ কোম্পানিগুলো দাম দ্বিগুণ করার প্রস্তাব দিয়েছে।
আর এই প্রস্তাব মূল্যায়ন শুরু হয়েছে মানে এখন গণশুনানি হবে। তারপর গ্যাসের নতুন দাম নির্ধারণ করবে বিইআরসি।
যা প্রস্তাব করেছে তা নাহলেও কিছু তো বাড়বে?
প্রস্তাব দিলেই তো তার বাস্তবায়ন হচ্ছে না। তাই চাইতে গেলে কম চাইবো কেন এই নীতিতে দ্বিগুণ দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে কোম্পানিগুলো। স্বপ্নে চাওয়া গল্পের মত।
প্রস্তাবেও যে একটি নৈতিকতার প্রশ্ন থাকতে হয়, তা আর বিবেচনা করা হয়নি।
এত দাম নিশ্চয়ই একবারে বাড়বে না – সেটা সবারই জানা। তারপরও এই প্রস্তাব। এটা যে রাজনৈতিক সমালোচনার জন্ম দিয়েছে তা বোঝা উচিৎ ছিল সংশ্লিষ্টদের। এর খেসারত কম নয়। সবার মনের মধ্যে এক বিরূপ প্রতিক্রিয়া হয়েছে।
এতে যে রাজনৈতিকভাবেও সমালোচনা হয়েছে সেটাও বিবেচনা করেনি সরকার।
যাহোক গ্যাসের দাম বাড়ালে বিদ্যুতেরও দাম বাড়বে।
বিদ্যুৎ গ্যাসের দাম বাড়াতে সরল অকাট্য যুক্তি সংশ্লিষ্টদের হাতেই আছে। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়ে যাচ্ছে। খরচ বাড়ছে। এত ভর্তুকি দিয়ে পারা যাচ্ছে না। আর তাই দাম বাড়াতে হবে। চোখের সামনে আর কোন বিকল্প নেই। সরল হিসাবে যখন বিইআরসি এই প্রস্তাব মূল্যায়ন করবে তখন দাম বাড়ানোর বিকল্প উত্তর আসবে না।
ফলে কয়েক মাসের মাথায় গ্যাস বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সমূহ সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে।
যেহেতু দাম বাড়িয়ে দিলেই হয়ে যায়, তাই এর বিকল্পগুলো খোঁজার উদ্যোগ দেখা যায় না।
সামগ্রিক ব্যবস্থাপনা উন্নত করে এই খাতের খরচ কিছুটা হলেও কমানো সম্ভব। কিন্তু সেদিকে তেমন উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না।
এমন অনেক বিদ্যুৎ কেন্দ্র আছে যা বছরের-পর-বছর অলস পড়ে আছে। কোন উৎপাদনই নেই। কিন্তু তার পেছনে মোটা অংকের খরচ থেমে নেই।
দীর্ঘমেয়াদী চুক্তির আওতায় ওমান আর কাতার থেকে যে পরিমাণ গ্যাস আনার কথা তা পুরোটা আনা সম্ভব হয় না। এ নিয়ে তেমন কোনো কূটনৈতিক তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না। অল্প হলেও সেখানে কিছুটা সাশ্রয় হত। দীর্ঘমেয়াদী চুক্তির আওতায় এভাবে আরও বেশি গ্যাস আনার, নতুন চুক্তিরও কোন উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। প্রয়োজনের সময় মুক্তবাজার থেকে বেশি দামে কেনাই যেন এখন একমাত্র উপায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর দেশের গ্যাস উত্তোলনে উদ্যোগে যে ভাটা তা তো নতুন নয়।
সামগ্রিকভাবে বিদ্যুৎ জ্বালানি খাতের ব্যবস্থাপনা উন্নত করে খরচ কমাতে হবে। অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থা বিবেচনা করে এর দাম সবসময় মানুষের নাগালের মধ্যে রাখতে হবে। আমদানি নির্ভরতা যেহেতু আমাদের বাড়ছে, আর ভবিষ্যতেও বাড়বে, তাই এর এক বিন্দু অপচয় কাম্য নয়।