দুই একদিনে যোগ হচ্ছে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ: প্রধানমন্ত্রী
আড়াই হাজার থেকে সাড়ে তিন হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের যে লোডশেডিং, সেটি দুই এক দিনের মধ্যে কমে আসবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এই সময়ের মধ্যে পাঁচশ মেগাওয়াট জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে জানিয়ে তিনি বলেছেন, ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে পরিস্থিতির উন্নতি হবে।
“অতিরিক্ত গরমে মানুষের কষ্ট বুঝতে পারছি আমরা”- এ কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমরা বারবার চেষ্টা করছি মানুষের কষ্ট কীভাবে কমানো যায়। এই কষ্ট শুধু আমাদের একা না, সারা বিশ্বব্যাপী। বৈশ্বিক কারণেই কষ্ট। বাংলাদেশকে আমরা সুন্দরভাবে রেখেছিলাম, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দিয়েছিলাম, মানুষের খাবার আছে।”
ঐতিহাসিক ৬ দফা দিবস পালনে বুধবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের এক আলোচনায় অন্যান্য নানা বিষয়ের পাশাপাশি বিদ্যুৎ নিয়েও কথা বলেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, “মানুষের কষ্টটা আমি উপলব্ধি করতে পারি। আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছি। এই দুই একদিনের মধ্যে ৫০০ মেগাওয়াট যুক্ত হবে। আর ১৫ দিন পর আর কষ্ট থাকবে না।
এক যুগ ধরে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি ভালো থাকার বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন “আমরা জানি কখন কোন সিদ্ধান্ত নিতে হয়।“
অস্বাভাবিক গরম আর প্রায় বৃষ্টিহীন গ্রীষ্মের বিষয়টিও উঠে আসে সরকারপ্রধানের বক্তব্যে। তিনি বলেন, “বাংলাদেশে ৪১ ডিগ্রি পর্যন্ত তাপমাত্রা হবে তা আমরা ভাবতে পারি না। আর বৃষ্টি নাই। সেখানেও আরেকটা কষ্ট। এ কষ্টটা সবার হচ্ছে। তা আমরা জানি। তারপরও আমরা বারবার বসে এ কষ্টটা লাঘব করার চেষ্টা করছি।”
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর বিদ্যুৎ খাত নিয়ে নানা পরিকল্পনা হাতে নেয়। এক যুগের বেশি সময়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন বেড়ে চার গুণ হয়েছে, উৎপাদনক্ষমতা বেড়েছে পাঁচ গুণ। দেশের শতভাগ এলাকা বিদ্যুৎসুবিধার আওতায় আসাকে সরকার তাদের বড় সাফল্য হিসেবেও প্রচার করে।
বিদ্যুৎ নিয়ে ফুরফুরে মেজাজে থাকা সরকার ধাক্কা খায় গত বছরের শেষ দিকে। ইউক্রেই যুদ্ধ শুরুর পর জ্বালানির দাম ব্যাপকহারে বেড়ে যাওয়ার কারণে পরিকল্পনা করে উৎপাদন কমানোর ঘোষণা আছে। দুই মাস ভোগান্তির পর শীতকাল ডিসেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত পরিস্থিতি সরকারের জন্য স্বস্তি নিয়ে আসে।
তবে মজুদ ফুরিয়ে আসার পরও ডলার সংকটে কয়লা আমদানি নিয়ে অনিশ্চয়তা, জ্বালানি তেল ও গ্যাস সরবরাহের অভাবে আবার ফিরে এসেছে দেড় দশক আগের লোডশেডিংয়ের স্মৃতি। রাজধানী ঢাকাতেই দিনে রাতে বিদ্যুৎ যাচ্ছে বারবার। মফস্বল ও গ্রামের পরিস্থিতি আরও খারাপ।
কয়লার অভাবে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াটের পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে।
বিদ্যুৎ পরিস্থিতি নিয়ে সমালোচকদের বক্তব্য নিয়েও কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, “আমাদের যারা জ্ঞানী-গুণী আছেন, বুদ্ধি বেচে জীবিকা নির্বাহ করেন, যাহারা-বুদ্ধিজীবী। অনেক পড়াশোনা জানে এটা ঠিক। অনেক কিতাব পড়ে। ওই কিতাবই পড়েছে।
“আমি বিদ্যুৎ দিয়েছি, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে বসে তারা বক্তৃতা করে। ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি, সেটার সুযোগ নেয়। প্রাইভেই টেলিভিশন আওয়ামী লীগ দিয়েছে। সেই সুযোগ নিয়ে টক শো করে বলে দেবে এই বাজেট আওয়ামী লীগ কোনোদিনই বাস্তবায়ন করতে পারবে না। আমি স্পষ্ট করতে চায় কতটুকু বাস্তবায়ন করতে পারব এটা জেনেই বাজেট দিয়েছি।”
‘কিছু মানুষ সুযোগটা নিচ্ছে’
ইউক্রেইন-রাশিয়ার যুদ্ধ পরিবহন ব্যয়ও বাড়িয়ে দিয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “স্যাংশন পাল্টা স্যাংশনে প্রত্যকটা জিনিসের দাম বেড়ে গেল। এ জাহাজে এল কেন? ওই জাহাজে এল কেন? এটা ভিড়তে দেবে না, ওটা ভিড়তে দেবে না।
“শুধু দেশের ওপর স্যাংশন নয়, জাহাজের ওপরেরও স্যাংশন দিয়ে বসে আছে আমেরিকা। ফলে প্রত্যেকটা দেশে আজকে মুদ্রাস্ফীতি।”
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে সীমিত আয়ের মানুষ কষ্ট পাচ্ছে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, “কিছু লোক আছে সুযোগটা নেয়, মজুদ করে রাখে।”
পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়ার বিষয়টিও উঠে আসে তার বক্তব্যে। বলেন, “উৎপাদন যখন করেছি তখন দাম হু হু করে বেড়ে গেল। আমদানি করার কারণে ওমনিই দাম কমে গেছে। মজুদদারা অপকর্ম না করলে উৎপাদিত পেঁয়াজ দিয়েই আমাদের হত। আমারও জানি কখন কোন জবাবটা দিতে হয়, কখন কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়।”