দুর্যোগে নয় অসর্তকতাতেই আবার বিদ্যুৎ বিপর্যয়
অব্যবস্থাপনা বা গাফিলতি বা অসর্তকতার কারণেই আবার বিদ্যুৎ বিপর্যয় হয়েছে। টর্নেডো বা ঝড়ের কারণে নয়। টর্নেডোতে বিদ্যুতের টাওয়ার পড়ে গিয়েছিল সোমবার। আর দেশের অর্ধেক জেলায় বিদ্যুৎ বিপর্যয় হয়েছিল মঙ্গলবার। টাওয়ার ভেঙে যাওয়ার একদিন পর। ফলে টর্নেডো বা ঝড়ের সাথে বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের তাৎক্ষনিক কোন সম্পর্ক ছিল না।
সংশ্লিষ্ঠরা জানিয়েছেন, অতিরিক্ত বিদ্যুৎ প্রবাহের কারণেই গত সপ্তাহে বিদ্যুৎ বিপর্যয় হয়। আর অতিরিক্ত বিদ্যুৎ প্রবাহ করা হয়েছে অসতর্কতা বা দায়িত্বে অবহেলার কারণে। সর্তক থাকলে এই বিপর্যয় হত না। প্রথমে একটা সঞ্চালন লাইন টর্নেডোতে বিকল হয়। আর তার চাপ অন্য লাইনে দেয়াতে সেটা বন্ধ হয়েছে। নতুন লাইনের সক্ষমতা বিচার না করেই বিদ্যুৎ প্রবাহ করা হয়েছে।
গত ২রা মে সকাল ১১টা ২০ মিনিটে জাতীয় গ্রিড বিপর্যয় হয়। এতে দেশের ৩৮ জেলায় এক সাথে বিদ্যুৎ চলে গিয়েছিল। উত্তর ও দক্ষিনাঞ্চলের সব বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ হয়ে যায়।
২০১৪ সালের ১লা নভেম্বর সারাদেশে স্মরণকালের বিদ্যুৎ বিপর্যয় হয়েছিল। এরপর নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে গ্রিডকে ঝুঁকিমুক্ত করার। কিন্তু সেসব উদ্যোগের কিছুই কাজে লাগেনি। নতুন করে আবার বিপর্যয় হলো।
১লা মে রাতে টর্নেডোতে আশুগঞ্জ-সিরাজগঞ্জ ২৩ হাজার ভোল্টের বিদ্যুতের সঞ্চালন টাওয়ার ভেঙে যায়। এতে ঐ সঞ্চালন লাইন বিকল হয়ে যায়। এটা ছিল মেঘনা নদী পারাপারের বিশেষ সঞ্চালন লাইনের টাওয়ার। এরপর ২রা মে সকালে ঘোড়াশাল-ঈশ্বরদী সঞ্চালন লাইনে বেশি বিদ্যুৎ প্রবাহ করার কারণে বিকল হয়ে যায়। ধারণ ক্ষমতার বেশি বিদ্যুৎ প্রবাহ করা হয়েছে কিন্তু এটা যে ঝুঁকিপূর্ণ তা বিবেচনায় নেয়া হয়নি। অসর্তকভাবেই এই লাইনে বেশি বিদ্যুৎ প্রবাহ করা হয়েছে। আর তার ফলে লাইনটা বিকল হয়ে গেছে। আশুগঞ্চ সিরাজগঞ্জ লাইনের চাপ নিতে পারেনি ঘোড়াশাল-ঈশরদী লাইন।
এতে রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল ও রংপুর অঞ্চলের ৩৮ জেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়।
পিডিবির হিসাব অনুযায়ি খুলনা বরিশাল রাজশাহী ও রংপুর অঞ্চলে দুই হাজার ৬৬৫ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার ২৭টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র আছে। একেন্দ্রগুলো ঐ দিন বন্ধ ছিল।
পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি)’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুম আল বেরুনী এনার্জি বাংলাকে বলেন, তদন্ত হয়েছে। প্রতিবেদন পেলে বিস্তারিত জানা যাবে। টাওয়ার স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের কারণ উদ্ঘাটনে গঠন করা কমিটির প্রধান পিজিসিবি’র পরিচালক (প্রকৌশল) কামরুল আহসান এনার্জি বাংলাকে সোমবার বলেন, দুই সঞ্চালন লাইনের মধ্যে একটা ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আর অন্যটা হঠাৎ করেই বন্ধ হয়ে গেছে। হঠাৎ করেই কেন বিকল হল তা দেখা হচ্ছে। প্রতিবেদন লেখা হচ্ছে। কর্তৃপক্ষের কাছে যথাসময়ে জমা দেব।