দেড় লাখ কোটি টাকার এডিপি: বিদ্যুতে ১৯ হাজার কোটি টাকা
নতুন অর্থবছরের জন্য এক লাখ ৬৪ হাজার ৮৪ কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী (এডিপি) অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এবার সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ পেয়েছে পরিবহন ও জ্বালানি খাত। অনুমোদন পাওয়া এই এডিপি চলতি অর্থবছরের বরাদ্দের চেয়ে ৪২ হাজার ৬৩১ কোটি টাকা বা ৩৯ শতাংশ বেশি। মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে, স্থানীয় সরকার বিভাগ, বিদ্যুত বিভাগ ও সড়ক পরিবহন এবং মহাসড়ক বিভাগ।
রোববার শেরে বাংলা নগরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় নতুন অর্থবছরের এডিপি অনুমোদন দেয়া হয়।
মূল এডিপির আকার এক লাখ ৫৩ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা। এর সঙ্গে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের বরাদ্দ ১০ হাজার ৭৫৩ কোটি ৫৮ লাখ টাকা যোগ হয়েছে।
সভাশেষে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সাংবাদিকদের জানান, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে উন্নয়ন কর্মসূচীর জন্য যে বরাদ্দ রাখা হয়েছে, তার মধ্যে ৯৬ হাজার ৩৩১ কোটি টাকার যোগান আসবে সরকারের নিজস্ব তহবিল বা দেশীয় উৎস থেকে। যা মোট বরাদ্দের প্রায় ৬৩ শতাংশ। আর প্রকল্প সাহায্য হিসেবে বৈদেশিক মুদ্রায় পাওয়া যাবে ৫৭ হাজার কোটি টাকা, যা মোট বরাদ্দের ৩৭ শতাংশ।
এবার এডিপিতে খাত ভিত্তিক সর্বোচ্চ ৪১ হাজার ৫৩ কোটি টাকা বা প্রায় ২৭ ভাগ বরাদ্দ রাখা হয়েছে পরিবহন খাতে। পদ্মা সেতু, পদ্মা রেল সংযোগ, মেট্রোরেল ও চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে টানেল নির্মাণসহ অনেক বড় প্রকল্পের চাহিদা পূরণে এ বিশাল বরাদ্দ। এর মধ্যে পদ্মা সেতু প্রকল্পে পাঁচ হাজার ৫২৪ কোটি টাকা আর পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পে সাত হাজার ৬১০ কোটি টাকা, মেট্রোরেল করতে হাজার ৪২৫ কোটি টাকা, কর্ণফুলী টানেল করতে এক হাজার ৫৭৬ কোটি টাকা, কাঁচপুর মেঘনা এবং গোমতি দ্বিতীয় সেতুতে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে।
অগ্রাধিকার খাত বিবেচনায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৮ হাজার ৮৫৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে বিদ্যুৎ খাত। বিদ্যুতে মোট আকারের ১২ দশমিক ৩০ শতাংশ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পের জন্যই প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। শিক্ষা খাতে তৃতীয় সর্বোচ্চ ১৬ হাজার ৬৭৩ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
মন্ত্রণালয় ও বিভাগভিত্তিক সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাচ্ছে স্থানীয় সরকার বিভাগ
নতুন এডিপিতে স্থানীয় সরকার বিভাগে বরাদ্দ ২১ হাজার ৪৬৪ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। দ্বিতীয় অবস্থানে বিদ্যুত বিভাগ ১৮ হাজার ৮৪৫ কোটি ২৭ লাখ টাকা। তৃতীয় অবস্থানে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ ১৬ হাজার ৮২০ কোটি ২৮ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
১৩১১ টি প্রকল্প
আগামী অর্থবছরে ৯০ নতুন প্রকল্পসহ মোট প্রকল্প রয়েছে ১ হাজার ৩১১টি। এর মধ্যে বরাদ্দসহ মোট প্রকল্প সংখ্যা হচ্ছে ১ হাজার ১৯৫টি। (এর মধ্যে বিনিয়োগ প্রকল্প ১ হাজার ৭৯টি, কারিগরি সহায়তা প্রকল্প ১১২টি এবং জেডিসিএফ অর্থায়িত প্রকল্প রয়েছে ৪টি)। ৯০টি নতুন প্রকল্পের মধ্যে বিনিয়োগ প্রকল্প ৭৭টি, কারিগরি সহায়তা প্রকল্প ১২টি এবং জেডিসিএফ একটি।
পিপিপি প্রকল্প
আগামী অর্থবছরে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপে (পিপিপি) বাস্তবায়নের জন্য ৩৬টি প্রকল্প যুক্ত করা হয়েছে এডিপিতে। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, আমাদের বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। এডিপির আকার দেখে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আমাদের চাহিদা বাড়ছে এবং রাজস্ব বাড়ছে। সুতরাং এডিপি বাস্তবায়ন করতে পারব না এটা বিশ্বাস করা ঠিক হবে না।
সাংবাদিকদের জানানো হয়, ষষ্ঠ-পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা মেয়াদে অর্জিত অর্থনৈতিক ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের সাফল্যের ধারাবাহিকতায় সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা করা হয়েছে। এতে এমডিজি পরবর্তী জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) অন্তর্ভুক্ত করে ২০২১ সালের আগেই মধ্যম আয়ের দেশে উত্তরণের উন্নয়ন নীতি-কৌশল ও লক্ষ্যসমূহ নির্ধারণ করা হয়েছে। দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা ও মধ্য মেয়াদী কৌশল ও লক্ষ্য বাস্তবায়নে সরকারের অন্যতম প্রধান মাধ্যম হচ্ছে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী (এডিপি)। এ লক্ষ্যে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের এডিপির খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে।
চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এক লাখ ১০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা এডিপি অনুমোদন দেয়া হয়েছিল। এর আগে প্রতি অর্থবছর শেষে বরাদ্দ কমিয়ে এডিপি সংশোধন করা হয়েছে। কিন্তু মূল বরাদ্দ ঠিক রেখে চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপি (আরএডিপি) অনুমোদন দেয়া হয়। সংশোধিত এডিপিতে সরকারী তহবিলের ৭০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭৭ হাজার ৭০০ কোটি টাকা করা হলেও বৈদেশিক সহায়তা ৪০ হাজার টাকা থেকে কমিয়ে ৩৩ হাজার কোটি টাকা করা হয়।