ধৈর্য ধরা ছাড়া উপায় নেই: তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী

নিজস্ব প্রতিবেদক/ বিডিনিউজ :
বর্তমান পরিস্থিতিতে ‘ধৈর্য ধরা ছাড়া উপায় নেই’ মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি ও বিদ্যুৎ উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী রামপাল ও ভারত থেকে বিদ্যুৎ আসার পরই লোড শেডিং সমস্যার সমাধান দেখছেন।

রোববার ঢাকার গুলশানে এক রেস্তোরাঁয় রাষ্ট্রায়ত্ত উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএস এর এক আলোচনা সভা শেষে সাংবাদিকদের সামনে তিনি এসব কথা বলেন।

ইউক্রেইন ও রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে তৈরি জ্বালানি সংকটের কারণে শিগগির বিদ্যুৎ পরিস্থিতি উন্নতির খবর দেওয়া যাচ্ছে না বলেও জানান তিনি।

‘অ্যাসপিরেশনাল মোমেন্টাম: দ্য ডেভেলপমেন্ট স্টোরি অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তৌফিক-ই-ইলাহী।

সাংবাদিকদের সামনে লোড শেডিং প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘আমরা মনে করেছিলাম শীতের আগেই ইউক্রেইন-রাশিয়ার যুদ্ধ থেমে যাবে। এজন্য বলেছিলাম অক্টোবর নাগাদ বিদ্যুতের লোড শেডিংয়ের উন্নতি হবে, কিন্তু হয়নি।

‘‘ফুয়েল সংকটে এখন বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে না। আমাদের কিন্তু চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্যাপাসিটি রয়েছে।‘’

কবে নাগাদ বিদ্যুৎ পরিস্থিতির উন্নতি হবে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘‘একটি অনিশ্চিত পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছি তা তো বলা যায়। আমাদের ধৈর্য ধরতে হবে। ধৈর্য ধারণ করা ছাড়া উপায় নেই।’’

আরও অপেক্ষা করার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, বিদ্যুতের জাতীয় সঞ্চালন লাইন ‘ফল করলে’ তা দ্রুত সময়ে ঠিক করা যায় না। বিশ্ব পরিস্থিতি উন্নতি হলে এবং জ্বালানির দাম কমলে তা হবে সোনায় সোহাগা। নইলে জ্বালানির ঘাটতির জন্য কষ্ট করতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

বিদ্যুতে এত সাফল্যের পরও দুর্যোগ পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার বিকল্প পরিকল্পনার বিষয়ক আরেক প্রশ্নে জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন, ‘‘আমরা আপত্তি সত্ত্বেও বিকল্প হিসেবে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র রামপাল করেছি। কিন্তু সেখান থেকে বিদ্যুৎ আসতে দেরি হচ্ছে। আশা করছি ডিসেম্বর নাগাদ রামপাল থেকে বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে।

‘‘এছাড়া ভারতের ঝাড়খণ্ড কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ আমদানি হলে এ সমস্যার সমাধান হবে।’’

ঝাড়খণ্ডের গোড্ডা বিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে ১ হাজার ৪৯৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বাংলাদেশে রপ্তানি করার কথা ভারতের আদানি গ্রুপের। সেই বিদ্যুৎও আগামী ডিসেম্বরে পাওয়ার আশা করা হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লি সফরকালে গত ৬ সেপ্টেম্বর তার সঙ্গে সাক্ষাতের পর এক টুইটে আদানি গ্রুপের চেয়ারম্যান গৌতম আদানি এ বছর ১৬ ডিসেম্বরের মধ্যে বিদ্যুৎ রপ্তানির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।

২০১৫ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশ সফরের সময় হওয়া সমঝোতার ভিত্তিতে ঝাড়খণ্ডের গোড্ডা জেলায় ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার এই তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করেছে আদানি পাওয়ার।

২৫ বছরের চুক্তি অনুযায়ী, এ কেন্দ্র থেকে ১ হাজার ৪৯৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ তাদের বাংলাদেশে রপ্তানি করার কথা।

অপরদিকে ভারতের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে নির্মিত বাগেরহাটের রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি ইউনিটে অক্টোবর থেকে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হওয়ার কথা আগে জানানো হলেও তা এখন কিছুটা পিছিয়ে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিআইএফপিসিএল) এর নির্মাণাধীন বিদ্যুৎকেন্দ্রটির কাজ প্রায় শেষের দিকে। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের সময় শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদি ৬ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রটি উদ্বোধন করেন।

এ কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সবশেষ অগ্রগতির বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক সুভাস চন্দ্র পাণ্ডে রোববার রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, তারা একটি ইউনিটে পরীক্ষামূলক বিদ্যুৎ উৎপাদন করছেন, যা পর্যায়ক্রমে বাড়ানো হচ্ছে। এ বিদ্যুৎ খুলনা অঞ্চলের সরবরাহ লাইনে যোগ হচ্ছে।

গত ১৪ অক্টোবর রাতে ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরীক্ষা সম্পন্ন করার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “জ্বালানি সংকট ও কিছু মেশিনারিজ এখনও না পৌঁছানোতে সক্ষমতা বাড়ানো হয়নি। এখন মেশিনারিজ এসেছে।

‘‘রোববার রাতেই আবার পরীক্ষামূলক উৎপাদন করা হবে। ধীরে ধীরে উৎপাদন সক্ষমতা বাড়িয়ে অক্টোবরের বাকি দিনগুলোতে পুরো ৬৬০ মেগাওয়াটে উন্নীত করা হবে। এখন আমাদের প্রয়োজনীয় সব মেশিনারিজ চলে এসেছে। এগুলো

পর্যায়ক্রমে সংযোজন করা হবে। আশা করছি আগামী নভেম্বরের প্রথম দিকে প্রথম ইউনিটের ৬৬০ মেগাওয়াট খুলনা অঞ্চলে সরবরাহ করা যাবে।“

অপর ইউনিটের ৬৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পেতে মার্চ পর্যন্ত অপেক্ষার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, পদ্মা সেতু দিয়ে সঞ্চালন লাইন প্রস্তুত হলে রামপাল থেকে দেশের অন্যান্য স্থানে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যাবে।

যুদ্ধ ও আন্তর্জাতিক বাজার পরিস্থিতির কারণে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে চাপ তৈরি হলে ডলার সাশ্রয়ের পথে রয়েছে সরকার। অন্যান্য উদ্যোগের পাশাপাশি জ্বালানির খরচ বাঁচাতে পুরনো লোড শেডিং ফিরিয়ে আনা হয়। তখন জানানো হয়েছিল সেপ্টেম্বরে নাগাদ পরিস্থিতির উন্নতির কথা জানানো হয়েছিল। তবে অক্টোবরে লোড শেডিং আরও বেড়েছে।

রামপাল ও আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ আসার পাশাপাশি বাড়তি চাহিদা মেটাতে সরকার এক হাজার মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে বলে জানান সংকট জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক ইলাহী।

“এটি হলে দিনের বেলা চাহিদার বড় একটি অংশ সেখান থেকে আসবে,” যোগ করেন তিনি।

সাম্প্রতিক লোড শেডিংয়ে ভোগান্তি ও দুর্ভোগের বিষয়ে আরেক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘‘ফুয়েল সংকটে ৮-১০ ঘণ্টা লোড শেডিং চলছে। কিন্তু একটা সমস্যা দেখা দিল সমাধানে সময় লাগে।’’

সামনে রমজান আসছে। তখন বিদ্যুতের চাহিদা আরও বাড়বে। এরকম পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকারের বিশেষ পরিকল্পনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘ কয়লা ও ভোলার গ্যাস সিএনজি করে আনা হবে ঢাকায়। সেটি হলে কিছুটা চাপ কমবে। ৮০ এমএমসিএফটির মত গ্যাস সেখান থেকে পাব বলে আশা করছি।’’

জ্বালানি সমস্যার দীর্ঘমেয়াদী সমাধানে পেট্টোবাংলা ও বাপেক্সে এ খাতের বিশেষজ্ঞদের পরিবর্তে আমলাদের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তৌফিক ইলাহী বলেন, ‘‘আমলা তো প্রশাসন চালান। সেখানে তাকে সহযোগিতা করতে বিশেষজ্ঞ রয়েছেন। তারা আইনিভাবে স্বাধীন। তারা তো স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেন।’’

বিদ্যুৎ পরিস্থিতির আরও অবনতি হবে কি না এমন প্রশ্নে তার আশা, এরচেয়ে আর খারাপ হবে না। বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এসি ও হিটার ব্যবহার কমাতে হবে এ শীতে।

বিআইডএস এর মহাপরিচালক বিনায়ক সেনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা মসিউর রহমান। আলোচক ছিলেন অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ।