নতুনভাবে পরিবেশগত প্রভাব নিরূপণের দাবি
বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে নতুনভাবে পরিবেশগত প্রভাব নিরূপণ (ইআইএ) করে তার ভিত্তিতে রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন ও প্রয়োজনে প্রকল্পের স্থান পরিবর্তনের দাবি করেছে ‘সাউথ এশিয়ানস ফর হিউম্যান রাইটস (এসএএইচআর)’। নতুন ইআইএ করার আগে কয়লাভিত্তিক এই বিদ্যুৎ প্রকল্পের সব কাজ বন্ধ রাখারও দাবি জানানো হয়।
দক্ষিণ এশিয়ার আটটি দেশের মানবাধিকার সংগঠনসমূহের নেটওয়ার্ক এসএএইচআরের পক্ষ থেকে রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানানো হয়। এর আগে সংগঠনের একটি প্রতিনিধিদল রামপালে প্রকল্পের স্থান ও সংলগ্ন এলাকা পরিদর্শন করে। সেখানে ক্ষতিগ্রস্তসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ও স্থানীয় সাংসদ তালুকদার আবদুল খালেকের সঙ্গে মতবিনিময় করেন দলের সদস্যরা। ঢাকায় ফিরে তাঁরা প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরীসহ ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা ও প্রকল্প বাস্তবায়নকারী বাংলাদেশ-ভারত ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানির শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গেও আলোচনা করেন। এ বিষয়ে অল্প দিনের মধ্যে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন তৈরি করে সংশ্লিষ্ট সবাইকে দেবেন বলেও তাঁরা জানান।
সংবাদ সম্মেলনে এসএএইচআরের বোর্ড সদস্য এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক সুলতানা কামাল বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে তাঁদের কোনো দ্বিমত নেই। তবে সুন্দরবনের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকায় রামপাল প্রকল্পের স্থান নিয়ে মতভেদ আছে। এ প্রকল্পের ইআইএ যেটি করা হয়েছিল, সে সম্পর্কে পরিবেশ অধিদপ্তর ৫৯টি আপত্তি দিয়েছে। কাজেই স্বতন্ত্র কোনো পেশাদার সংস্থা নিয়োগ করে বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে নতুন ইআইএ করে তার ভিত্তিতে এই প্রকল্প বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। প্রয়োজন হলে এর স্থান পরিবর্তন করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে পরিদর্শনসংক্রান্ত একটি সংক্ষিপ্ত প্রতিবেদন ও কয়েকটি সুপারিশ উপস্থাপন করেন প্রতিনিধি দলের অন্যতম সদস্য শরীফ জামিল। এতে নতুন করে ইআইএ প্রণয়নের উপরোক্ত দাবি জানানো ছাড়াও সরকারের উদ্দেশে বলা হয়, এই প্রকল্প বাস্তবায়নের বিষয়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের অধিকার সংরক্ষণ ও সুশীল সমাজের মতামতের প্রতি সম্মান দেখাতে হবে। প্রকল্পের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত লোকজন জমি রক্ষা ও পরিবেশ সংরক্ষণের দাবিতে আন্দোলন করতে গিয়ে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। অনেকের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হচ্ছে। এগুলো অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। ইতিমধ্যে স্থানচ্যুত বা বাস্তুচ্যুত হওয়া লোকজনকে অবিলম্বে পুনর্বাসন করতে হবে। ওই এলাকার প্রাকৃতিক পরিবেশ-প্রতিবেশ পুনরুদ্ধারের সব রকম ব্যবস্থা নিতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে ভারত সরকারের উদ্দেশে বলা হয়, এ ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ভারতে যে রকম পরিবেশগত মান সংরক্ষণ করা হয়, এই প্রকল্পের ক্ষেত্রেও তা নিশ্চিত করতে হবে। একইভাবে ভারতের বিভিন্ন প্রকল্পের মতো এই প্রকল্প বাস্তবায়নেও সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক, সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক অধিকারের প্রতি পূর্ণ সম্মান দেখাতে হবে।
বাংলাদেশ ও ভারত উভয় সরকারের উদ্দেশে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, আঞ্চলিক সহযোগিতা কিংবা দ্বিপাক্ষিক চুক্তির আওতায় কোনো কাজ সম্পাদন বা প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে নিজ নিজ দেশের আইন, আন্তর্জাতিক কনভেনশন, প্রোটোকল প্রভৃতি মেনে চলার বিষয় যেন উপেক্ষিত না হয়। সব কাজ করতে হবে স্বচ্ছভাবে ও নাগরিকদের মতামত নিয়ে।
সংবাদ সম্মেলনে আয়োজক সংগঠন সম্পর্কে পরিচিতিমূলক বক্তব্য দেন বিশিষ্ট মানবাধিকারকর্মী ও এসএএইচআরের সাবেক কো-চেয়ারপারসন হামিদা হোসেন। বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে এই সংগঠনের সদস্য আছেন তিনিসহ ৫০ জন। বর্তমানে বোর্ড সদস্য হিসেবে সুলতানা কামাল ছাড়াও আছেন খুশী কবির ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অসিফ নজরুল। আসিফ নজরুল গতকালের সংবাদ সম্মেলনে সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করেন।
এসএএইচআরের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী আই কে গুজরাল। বর্তমান চেয়ারপারসন পাকিস্তানের হিনা জিলানি। সংগঠনের ইমেরিটাস সদস্য হলেন ড. কামাল হোসেন, কুলদীপ নায়ার, দেবেন্দ্র রাজ পান্ডে ও আসমা জাহাঙ্গীর।
সংবাদ সম্মেলনে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আবদুল্লাহ হারুন চৌধুরীও বক্তব্য দেন। উপস্থিত ছিলেন এসএএইচআর সচিবালয়ের (শ্রীলঙ্কা) দীক্ষা ইলাংগাসিংহে।