নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরে জ্বালানি ও পানি বণ্টন চুক্তির সম্ভাবনা

নিজস্ব প্রতিবেদক:
স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী ও মুজিববর্ষের অনুষ্ঠানে (২৬শে মার্চ) যোগ দিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঢাকা আসছেন। এসময় বাংলাদেশ ভারত জ্বালানি বিনিময় ও পানি বণ্টনসহ কয়েকটি চুক্তি হতে পারে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী, দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে দুই দেশের মধ্যে নিবিড় বন্ধুত্বেও ঐতিহাসিক সহযোগিতার সম্পর্ক আরও বিস্তৃত ও জোরদাওে উভয়পক্ষ সম্মত হয়েছে।
এসময় জ্বালানি বিনিময়, দুই দেশের অভিন্ন নদীর পানিবণ্টন, সীমান্ত হত্যা বন্ধে যৌথ সীমান্ত ব্যবস্থাপনা এবং বাণিজ্য সহযোগিতাসহ কয়েকটি চুক্তি ও সমঝোতা হবে বলে জানা গেছে।
এরআগে দু’দেশের উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে কভিড-১৯ ভ্যাকসিন, বাণিজ্য, কানেক্টিভিটি, বিদ্যুৎ-জ্বালানি, পানি বণ্টন বিষয়ে সহযোগিতা আরও জোরদার করার বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
নরেন্দ্র মোদীর ঢাকা সফরের প্রস্তুতি চূড়ান্ত করতে ঢাকায় আসা ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কও বলেছিলেন, তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি নিয়ে ভারত সরকার আগের অবস্থানেই আছে।
জয়শঙ্কও ঢাকায় বলেন, আন্তঃসংযোগ ভবিষ্যতে গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র হয়ে উঠতে পারে। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সঠিক আন্তঃসংযোগ হলে পুরো অঞ্চলের ভূ-অর্থনীতির পরিবর্তন হবে।বঙ্গোপসাগওে কানেকটিভিটির ক্ষেত্রে জাপানকে নিয়ে কাজ করতে পারি, কারণ জাপানের সাথে আমাদেও উভয় দেশের চমৎকার সম্পর্ক আছে।
জ্বালানি সহযোগিতা
বাংলাদেশ ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করছে। এই বিদ্যুৎ আমদানি আরও বাড়াতে চায় বাংলাদেশ। আমদানি করা কয়লা ও এলএনজি দিয়ে উৎপাদন খরচ এর চেয়ে ভারত থেকে আমদানি করা বিদ্যুতের খরচ কম। আর তাই আমদানির দিকেই ঝুঁকছে বাংলাদেশ। নরেদ্র মোদিও বাংলাদেশ সফরের সময় এবিষয়টি বড় কওে আলোচনায় আনা হতে পাওে বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশ ভারত যৌথ বিনিয়োগে রামপালে হচ্ছে বিদ্যুৎকেন্দ্র। চট্টগ্রাম পর্যন্ত পাইপে তেল সরবরাহে আগ্রহী ভারত। বাংলাদেশে এলপিজি ও এলএনজিও সরবরাহ করতে চায়।
ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করতে সকল সিডি, ট্যাক্স ও ভ্যাট অব্যাহতি চায় বাংলাদেশ। বিষয়টি আলোচনায় স্থান পেতে পাওে বলে জানা গেছে। এছাড়া ভারতের সাথে বিদ্যুৎ জ্বালানির যেসব চুক্তি আছে রাজনৈতিক কারণে বা ভারতীয় আইন পরিবর্তন হলে যদি কোন আর্থিক ক্ষতি হয় তবে তা কীভাবে মেটানো হবে তাও জানতে চায় বাংলাদেশ।
গেল ডিসেম্বওে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদিও ভার্চুয়াল বৈঠকের আগে জ্বালানি, কৃষিসহ কয়েকটি বিষয়ে সমঝোতা সই হয়। এই সব সমঝোতার কিছু নরেন্দ্র মোদিও ঢাকা সফওে চুক্তি হতে পাওে বলে জানা গেছে।
জ্বালানিতে দ্বিমুখী বিনিয়োগ, প্রযুক্তি হস্তান্তর, যৌথ গবেষণা এবং সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সম্মত হয়েছে দুই দেশ। বাংলাদেশে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান এবং সরবরাহে ভারতের অংশগ্রহণ আরও বাড়বে।
তিস্তারপানিবণ্টন
গতকয়েক দশক তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে বাংলাদেশ-ভারত চুক্তির কথা বলা হচ্ছে। ১৯৮৩ সাল থেকে তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে আলোচনা। এখনও তা সমাধান হয়নি। দুই দেশের উচ্চপর্যায়ের বৈঠক হলেই তিস্তা চুক্তির বিষয়টি সামনে আসে। আলোচনা হলেও চুক্তি হয়নি এখনও। ২০২০ সালের ডিসেম্বওে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদিও ভার্চুয়াল বৈঠকে তিস্তা চুক্তির বিষয়ে বাংলাদেশকে আশ্বাস দেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী।
২০১১ সালের সেপ্টেম্বওে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরের সময় তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি সইয়ের কথা ছিল। চুক্তি অনুযায়ী তিস্তা নদীর পানির ৪২ দশমিক ৫০ শতাংশ ভারতের এবং ৩৭ দশমিক ৫০ শতাংশ বাংলাদেশের হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরোধিতার কারণে সে সময় চুক্তি হয়নি। সম্প্রতি মমতা বলেছেন, আগে নিজেদেও প্রয়োজন মিটিয়ে পরে অন্যকে পানি দেয়ার কথা ভাববো। ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফওে আবার আলোচনা হয়। কিন্তু তখনও চুক্তি হয়নি। পরে ২০১৫ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঢাকায় এসে তিস্তা নিয়ে ইতিবাচক আশ্বাস দেন।