নিজের টাকায় তেল কিনবে বিপিসি
নিজেই নিজের টাকায় তেল কেনার সক্ষমতা অর্জন করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) তেল কেনার পুরো অর্থই এখন ঋণে করে আনে। পরে বিক্রি করে তা শোধ করে। আবার নতুন করে ঋণ নেয়। এভাবেই চলছে। কিন্তু বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমে যাওয়াতে লাভ করছে বিপিসি।
লাভের পরিমান এমন পর্যায়ে পৌছেছে যে, ভবিষ্যতে মোটা অংকের ঋন না নিলেও চলবে বিপিসি’র। আগামী জুলাই মাসের মধ্যে পুঞ্জিভূত ঋণ শোধ হবে। পরে জমতে থাকবে নিজস্ব তহবিল। আগামী একবছর এভাবে চললে তেল কেনার জন্য আর ঋণ নেয়া লাগবে না।
ঋণ শোধ করা এবং নিজস্ব তহবিল শোধ করার জন্য এখনই জ্বালানি তেলের দাম কমানো হবে না। তবে কৃষিতে বিশেষ ভর্তূকি দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বেশিরভাগ সময় বিপিসি বেশি দামে কিনে কম দামে তেল বিক্রি করেছে। কখনও কখনও লাভ করলেও তার পরিমান ছিল খুবই কম। যার কারণে পুঞ্জিভূত ঋণের পরিমান ক্রমান্বয়ে বেড়েছে। বেড়েছে দায়। এখন বিপিসি দায় শোধ পর্ব পার করছে। এখন লাভের অর্থে জমে থাকা ঋণ শোধ করা হচ্ছে। ঋণ শোধের পরেই গঠন করা হবে বিশেষ তহবিল। আর সেই সময় পর্যন্ত দেশে জ্বালানি তেলের দাম কমানো হবে না। তবে কৃষিতে বিশেষ সুবিধা দেয়ার কথা ভাবা হচ্ছে।
বিপিসি সূত্র জানায়, বর্তমানে যে হারে লাভ হচ্ছে আর যে ঋণ আছে তা শোধ করতে চলতি অর্থবছর লেগে যাবে। অর্থাৎ আগামী তিন মাসে ঋণ শোধ হবে বিপিসি’র। বর্তমানে বিপিসির দেশি বিদেশী ব্যাংকের কাছে ঋণ আছে ৪৩ হাজার ৫৭৭ কোটি টাকা কোটি টাকা। প্রতিবছর প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয় বিপিসি। এরমধ্যে আইটিএফসি’র কাছ থেকে নেয়া হয় প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা। তেল বিক্রির টাকায় এই ঋণ শোধ করে। কিন্তু কিছুটা জমতে থাকে।
বিপিসি জানায়, ২০০৭-০৮ থেকে ২০১৪-১৫ অর্থবছর পর্যন্ত সরকার অর্থ বিভাগের মাধ্যমে ৩ ও ৫ শতাংশ সুদে ২৬ হাজার ৩৪৯ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে। এছাড়া ২০০৫-০৬, ২০০৭-০৮, ২০১১-১২ ও ২০১২-১৩ অর্থবছরে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে বিপিসির নেয়া ঋণের বিপরীতে ১৭ হাজার ২২৮ কোটি টাকার বন্ড ইস্যু করা হয়। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে বিপিসির লোকসান ছিল এক হাজার ২২ কোটি টাকা। ২০০৯-১০ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়ায় দুই হাজার ৫৭১ কোটি টাকা। ২০১০-১১ অর্থবছরে নয় হাজার ৭৯৯ কোটি ও ২০১১-১২ অর্থবছরে ১০ হাজার ৫৫১ কোটি টাকা। ২০১১ সালে ছয় দফা জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর পর ২০১২-১৩ অর্থবছরে লোকসান নেমে আসে পাঁচ হাজার ৫২৭ কোটি টাকায়।
দীর্ঘদিন ধরেই বিপিসি লোকসান দিচ্ছে। তিন বছর আগেও প্রতিলিটার ডিজেলে ১৮ টাকা লোকসান দিতে হয়েছে। বছরে প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা ভর্তূকি দিতে হয়েছে। এই লোকসানের বোঝা কমানোর জন্য কিছুদিন লাভ করতে চায় বিপিসি। বিশ্ববাজারে তেলের দাম যখন অনেক বেশি ছিল তখন বাংলাদেশেও দাম বাড়ানো হয়। কিন্তু কমে গেলে আর কমানো হয়নি। সেই বাড়তি দাম এখনও রয়েগেছে। এজন্য এখন লাভ হচ্ছে।
জ্বালানি সচিব আবুবকর সিদ্দিকী বলেন, এই মুহূর্তে সরকারের জ্বালানি তেলের দাম কমানোর সিদ্ধান্ত নেই। বিপিসি বছরের পর বছর আন্তর্জাতিক বাজার থেকে বেশি দামে তেল কিনে কম দামে বিক্রি করেছে। এতে হাজার হাজার কোটি টাকা লোকসান গুনতে হয়েছে। এখন জ্বালানি তেলের দাম কমে যাওয়ায় খানিকটা স্বস্তিতে ফিরেছে।
বিপিসির চেয়ারম্যান এ এম বদরুদ্দোজা বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমেছে ঠিকই। কিন্তু এটি স্থায়ীভাবে কমেনি। যেকোনো সময় তা বেড়ে যেতে পারে। এই সাময়িক অবস্থা বিবেচনা করে সরকার তেলের দাম কমাতে পারছে না। জুন পর্যন্ত এই অবস্থা গেলে বিপিসির লাভ হবে। বছর শেষে লোকসান থাকবে না বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, কৃষিতে কোন বিশেষ সুযোগ দেয়া যায় কিনা তা ভাবা হচ্ছে।
চলতি বছরের বাজেটেও বিপিসির জন্য প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি রাখা হয়েছে। এবছর এই ভর্তূকির অর্থ প্রয়োজন হচ্ছে না।
বর্তমানে বাংলাদেশে লিটার প্রতি ডিজেল ও কেরোসিনের দাম ৬৮ টাকা। আর পেট্রল ৯৬ টাকা এবং অকটেন ৯৯ টাকা। ডিজেল কোরোসিনে লিটার প্রতি প্রায় পাঁচ টাকা লাভ হচ্ছে। অকটেন পেট্রোলে আরও বেশি। জ্বালানি তেল ব্যবহারে ৫৫ শতাংশই ডিজেল। মোট ৫৭ লাখ মেট্রিক টন আমদানি করা তেলের মধ্যে ৩৩ লাখ টনই ডিজেল, ৯ লাখ টন ফার্নেস অয়েল।
গত সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ব্যারেল প্রতি অপরিশোধিত তেলের দাম চার শতাংশ কমে ৪২ দশমিক ৮৫ ডলার হয়েছে। ২০০৯ সালের মার্চে পর এই দাম সবচেয়ে কম। অর্থাৎ গত ছয় বছরে সবচেয়ে কম দামে বিক্রি হয়েছে জ্বালানি তেল।