নেপালের সঙ্গে বিদ্যুৎ আমদানিসহ তিন চুক্তি হবে

নেপালে যৌথ বিনিয়োগে বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন ও বিদ্যুৎ আমদানি করতে বাংলাদেশ-নেপাল সমঝোতা সই হচ্ছে। দীর্ঘ আলোচনার পর দুদেশের মধ্যে এটিই প্রথম আনুষ্ঠানিক কোন সমঝোতা। ভারত সম্মত হলে উভয় দেশ এবিষয়ে দ্রুত চুক্তি করবে।
আগামীকাল মঙ্গলবার নেপালের জ্বালানি মন্ত্রী রাধা কুমারী গেওয়ালী তিনদিনের সফরে বাংলাদেশ আসছেন। তার বাংলাদেশ সফরের সময় বুধবার হোটেল সোনারগাও এ সমঝোতা সই হবে। এসময় বাংলাদেশ নেপাল মন্ত্রী পর্যায়ে বিদ্যুৎ বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বিদ্যুৎ বিষয়ে বাংলাদেশ-নেপাল মন্ত্রী পর্যায়ের এটিই প্রথম বৈঠক। এসময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথেও রাধা কুমারী সাক্ষাৎ করবেন বলে জানা গেছে।
নেপালের সাথে বাংলাদেশের তিনটি বিষয়ে সমঝোতা সই হবে। নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করা। নেপালে বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে যৌথ বিনিয়োগ করা এবং দুই দেশের বিদ্যুৎ বিষয়ে অভিজ্ঞতা বা জনবল বিনিময় করা।
সমঝোতার আলোকে নেপাল-বাংলাদেশের সচিব পর্যায়ে একটি যৌথ স্টিয়ারিং কমিটি এবং একটি ওয়ার্কিং কমিটি গঠন করা হবে। এই কমিটি দুই দেশের বিদ্যুতখাতের বিভিন্ন দিক পর্যালোচনা করে সরকারের কাছে বিভিন্ন বিষয় সুপারিশ করবে।

বিদ্যুৎ জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, আন্ত:দেশীয় বিদ্যুত বাণিজ্য নিয়ে আলোচনা শুরু করছি। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশকে সঙ্গে নিয়ে বিদ্যুতখাতের উন্নয়ন করা হবে। ভারতের সঙ্গেও এ বিষয়ে আলোচনা চলছে।
পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন জানান, নেপালের সাথে সমঝোতা করতে একটি খসড়া তৈরী করা হয়েছে। এবিষয়ে আলোচনায় ভারতও সম্মত আছে। বাংলাদেশের স্বার্থ বিবেচনা করেই এই সমঝোতা করা হবে। বিষয়গুলো আরও আলোচনার পর চূড়ান্ত চুক্তি করা হবে। তিনি বলেন, যেহেতু ভারতীয় কোম্পানি বিদ্যুৎ উৎপাদন করে আমাদের কাছে বিক্রি করতে চাইছে তাই সঞ্চালনে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। এছাড়া ভারত এখন দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশের সঙ্গে বিদ্যুৎ বিনিময়ে সম্মতি দিয়েছে। নেপালই চাইছে বাংলাদেশ সেখানে বিনিয়োগ করুক। ভারতের সঙ্গে যে প্রক্রিয়ায় বিদ্যুৎখাতের সম্প্রসারণে কাজ হচ্ছে একই প্রক্রিয়ায় নেপালের সঙ্গেও হবে।
নেপালে এখন যে বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে তা থেকে আমদানি করা হবে। আবার নেপাল-বাংলাদেশ যৌথ বিনিয়োগ করে বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করে সেখান থেকেও বিদ্যুৎ আনা হবে। এমনই পরিকল্পনা করা হচ্ছে। ভারতের জিএমআর পাওয়ার করপোরেশন লিমিটেড নেপালে ১১২০ মেগাওয়াটের দুটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করছে। সেখান থেকে তারা বাংলাদেশে বিদ্যুৎ বিক্রি করতে চায়। বাংলাদেশও এই বিদ্যুৎ কিনতে সম্মত আছে।
বাংলাদেশ-নেপাল যৌথভাবে নেপালে বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করার বিষয়ে নেপাল মৌখিকভাবে সম্মতও হয়েছে। এবিষয়ে কর্মপরিকল্পনা তৈরী করতে মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে আলোচনা হবে বলে জানা গেছে।
নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আমদানির বিষয়ে কর্মকর্তা পর্যায়ে বেশ কয়েকবার আলোচনা হয়েছে। সার্ক সহ বিভিন্ন পরিষদে আলোচিত হয়েছে বিষয়টি। কিন্তু ভারতের অনুমতির অপেক্ষায় সে আলোচনা আর বেশি দূর আগায় নি। বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে ভারতের কাছে বিদ্যুতের করিডোর চেয়ে আসছে। সম্প্রতি ভারতের পূর্বাঞ্চল থেকে বাংলাদেশের উপর দিয়ে বিদ্যুৎ নেয়ার অনুমতি দিয়েছে বাংলাদেশ। এরপর ভারত বাংলাদেশ-নেপালের বিষয়টি আলোচনা করবে বলে জানিয়েছে। নেপাল থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ নেয়া বিষয়ে বাংলাদেশ-ভারত-নেপাল-ভুটান চারদেশের আগামী বৈঠকের আলোচ্যসুচি হিসেবে নথিভূক্ত করা হয়েছে। নেপাল থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ নিতে হলে ভারতের উপর দিয়েই আনতে হবে। সেজন্য ভারতের সম্মতি ছাড়া নেপাল বাংলাদেশ চুক্তি করলেও তা বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।
বাংলাদেশ-নেপাল যৌথভাবে বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করলে বাংলাদেশের উৎপাদন খরচ কম হবে। নেপালে পানি থেকে বিদ্যুৎ করা হয় বলে উৎপাদন খরচ কম। নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করলে বাংলাদেশের আমদানি করা কয়লা বা তেল ভিত্তিক যে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয় তার চেয়ে কম খরচ হবে। এরআগে নেপাল বাংলাদেশকে তিন হাজার মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের প্রস্তাব দিয়েছিল। নেপালে জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রর প্রচুর সম্ভাবনা। হিমালয়ের পানি সেখানে অকারণে নদীতে চলে আসছে। সেই পানিকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে।
নেপালে ৮০ হাজার মেগাওয়াটের জল বিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভাবনা আছে। কিন্তু তারা মাত্র ৮০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে। দেশটির রাজধানী কাঠমুন্ডুতেই দৈনিক ১৪ ঘন্টা লোডশেডিং করতে হয়। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে ভারত, নেপাল এবং ভুটানের ব্যাপক জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভাবনা আছে। যদিও জল বিদ্যুতের বেশিরভাগ উৎসরই ব্যবহার করতে পারছে এসব দেশই। ভারত অরুনাচল প্রদেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনের উদ্যোগ নিয়েছে।
দুই দেশের সরকারের জ্বালানি মন্ত্রী পর্যায়ের এটি প্রথম বৈঠক। এর আগে গত বছর বিদ্যুৎ বিভাগের যুগ্ম সচিব (উন্নয়ন) নেপাল সফরে গিয়ে বিদ্যু’ৎখাতের সহায়তা সম্প্রসারণ নিয়ে আলোচনা করে। এছাড়া গত ফেব্রুয়ারীতে বিদ্যুৎ সচিব মনোয়ার ইসলাম নেপালে একটি সম্মেলনে যোগ দিতে যান। তিনি ওই সময় নেপালের জ্বালানি মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে দেশটির জল বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিনিয়োগ করার আগ্রহের কথা জানান।
বাংলাদেশ আগামী পাঁচ থেকে ১০ বছরের মধ্যে নেপাল থেকে অন্তত ১০ হাজার মেগাওয়াট এবং ভূটান থেকে তিন হাজার মেগাওয়াট জল বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী মূল্যে আমদানি করতে পারে।