পটুয়াখালী বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য ৮০৬ কোটি টাকা বরাদ্দ

পটুয়াখালীতে এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণ ও অন্যান্য অবকাঠামো তৈরি করতে ৮০৬ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। নর্থ-ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেড (এনডবি্লউপিজিসিএল) এই কেন্দ্র স্থাপন করবে। এজন্য সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ৮০১ কোটি টাকা এবং বাস্তবায়নকারী সংস্থা ৫ কোটি টাকার জোগান দেবে। শিগগির প্রকল্পটি সরকারের অনুমোদনের জন্য জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় উত্থাপন করা হতে পারে বলে জানা গেছে।

জানা গেছে, চলতি মাসের প্রথম দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফরের সময় চীনের অর্থায়নে কয়লাভিত্তিক বৃহৎ এ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য দু’দেশের মধ্যে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এর পর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে প্রকল্প এলাকায় কাজ শুরু করার উপযোগী করে তুলতে প্রয়োজনীয় প্রকল্প গ্রহণের নির্দেশনা দেয়া হয়। এ প্রেক্ষাপটে দ্রুত ল্যান্ড ইকুইজেশন, ল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড প্রটেকশন ফর পটুয়াখালী এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট প্রকল্পটি গ্রহণ করা হচ্ছে। প্রকল্পটি ইতিমধ্যে পরিকল্পনা কমিশনের প্রাক-মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) কাছে পাঠানো হয়েছে। কমিটি যাচাই-বাছাই করে শিগগির এটি অনুমোদনের জন্য একনেক সভায় উপস্থাপন করবে বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, প্রকল্পটির মাধ্যমে পটুয়াখালীর কলাপাড়ার ধানখালী ইউনিয়নে এক হাজার একর জমি অধিগ্রহণ করা হবে। ছয় কিলোমিটার নদী রক্ষা বাঁধ ও ভূমি নিরাপত্তা বেষ্টনী নির্মাণ করা হবে। ৪৫ কিলোমিটার ৩৩ কিলোভোল্টের বৈদ্যুতিক লাইন নির্মাণ ও ৩৩/১১ কেভির একটি সাব-স্টেশন নির্মাণ করা হবে। পাঁচ কিলোমিটার অ্যাপ্রোচ রোড ও দুই কিলোমিটার আভ্যন্তরীণ সড়ক তৈরি, নয় কিলোমিটার বাউন্ডারি ওয়াল, কার্যালয় ভবন, আবাসিক ডরমেটরি এবং রেস্টহাউস নির্মাণসহ মোট আট ধরনের অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে।
জানা গেছে, প্রকল্পটি এখনও বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) অননুমোদিত প্রকল্পের তালিকায় যুক্ত হয়নি। তাই প্রকল্পটির জন্য আগামী অর্থবছরে কোনো বরাদ্দও রাখা হয়নি। পরিকল্পনা কমিশন মনে করে, ২০১৫ সালের মধ্যে প্রকল্পটি শেষ করতে হলে নতুন অর্থবছরের ৪৩১ কোটি টাকা বরাদ্দের দরকার হবে। জরুরি ভিত্তিতে এ বরাদ্দ নিশ্চিত করার পাশাপাশি বিশেষ করে প্রকল্প এলাকার জমি অধিগ্রহণের জন্য সরকারের বিশেষ হস্তক্ষেপ দরকার হতে পারে।
জানা গেছে, পটুয়াখালীতে প্রস্তাবিত কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যয় এখনও নির্ধারণ করা হয়নি। বৃহৎ এ প্রকল্প বাস্তবায়নে একটি সমীক্ষা পরিচালনা করবে বাস্তবায়নকারী সংস্থা এনডবি্লউপিজিসিএল। ওই সমীক্ষায় অর্থায়নকারী দেশ চীনও সম্পৃক্ত থাকবে। এতে মূল প্রকল্পটির মোট ব্যয় নির্ধারণ করা হবে।
এদিকে কক্সবাজারের মাতারবাড়িতে এক হাজার ২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন আরেকটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য জাপানের সঙ্গে চূড়ান্ত চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। ওই প্রকল্পের বাস্তবায়ন ব্যয়ে প্রস্তাব করা হয়েছে ৪০ হাজার ৩২০ কোটি ৯২ লাখ টাকা। আর্থিক দিক বিবেচনায় এ যাবতকালে কক্সবাজারের মহেশখালীর এ প্রকল্পটিই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন প্রকল্প। ২০২৩ সালের মধ্যে এ প্রকল্পের কাজ শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে সরকার। এ প্রকল্পের বিবেচনায় পটুয়াখালীর এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের ব্যয় আরও বেশি হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা মনে করেন।