পদ্মা সেতু দিয়ে দক্ষিণের সাথে যোগ হবে গ্যাস বিদ্যুৎ ইন্টারনেট
নিজস্ব প্রতিবেদক:
পদ্মা সেতু দিয়ে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট নেটওয়ার্কের আওতায় আসবে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ।
সেতুর নিচ দিয়ে টানা হয়েছে গ্যাস লাইন। সাথে অপটিক্যাল ফাইবার। সেতু স্টিলের হওয়ায় বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন নেয়া হচ্ছে নিরাপদ দূরত্বে। সেতুতে গ্যাস পাইপের কাজ শেষ। বিদ্যুতের টাওয়ার স্থাপনের কাজ চলছে।
সেতুর নিচে গ্যাস লাইন
পদ্মা সেতুর নিচে রেললাইনের পাশে টানা হয়েছে গ্যাস লাইন। এই লাইন দিয়ে নারায়ণগঞ্জ থেকে গ্যাস যাবে মুন্সিগঞ্জে। আর মুন্সিগঞ্জ থেকে সেই গ্যাস পদ্মা সেতু হয়ে যাবে গোপালগঞ্জ।
নারায়ণগঞ্জের লাঙ্গলবন্দর থেকে ৩০ ইঞ্চি ব্যাসের পাইপের মাধ্যমে মুন্সিগঞ্জের মুক্তারপুর হয়ে লাইন যুক্ত হবে মাওয়া উপকেন্দ্রে। এরপর পদ্মা সেতুর জাজিরা উপকেন্দ্র থেকে টেকেরহাট হয়ে গ্যাস লাইন যাবে গোপালগঞ্জে। পরে যুক্ত হবে খুলনা।
এরই মধ্যে শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে সেতুর রেলপথের পূর্ব পাশে শুরু হয়েছে পাইপ বসানোর কাজ। সেতুর ছয় দশমিক ১৫ কিলোমিটার অংশে পাইপ বসানো হয়েছে। পাইপগুলোর দৈর্ঘ্য ১২ মিটার, ব্যাস ৭৬০ মিলিমিটার, ওজন পাঁচ দশমিক ৬৭ টন।
নিরাপদ দূরত্বে বিদ্যুৎ লাইন
পদ্মা সেতুর পাশ দিয়ে নির্মিত হচ্ছে ৪০০ কেভির উচ্চক্ষমতার বিদ্যুতের সঞ্চালন লাইন। আমিনবাজার-মাওয়া-মংলা ৪০০ কেভি সঞ্চালন লাইন (প্রথম সংশোধিত) উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় এই লাইন করা হচ্ছে। মোট ১১টি টাওয়ারের মধ্যে সাতটি হবে নদীর উপরে। এই সাতটি করা হবে পদ্মা সেতুর আওতায়। বাকি চারটি নির্মাণ করছে পিজিসিবি। প্রায় ২৬০ ফুট দূরে দূরে হবে এক একটা টাওয়ার। পদ্মা সেতুর পাশ দিয়ে হবে ৯ দশমিক ৪ কিলোমিটার ৪০০ কেভি রিভার ক্রসিং লাইন। পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) এই সঞ্চালন লাইন করছে।
গোপালগঞ্জ থেকে পদ্মা নদী হয়ে আমীনবাজারে এসে এই সঞ্চালন লাইন যোগ হবে। সঞ্চালন লাইন করতে মোট খরচ ধরা হয়েছে দুই হাজার ৫০৫ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। যার মধ্যে সরকার অর্থায়ন করবে ৮৯৭ কোটি ৩২ লাখ টাকা। আর এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ১ হাজার ২৭০ কোটি ৬৯ লাখ টাকা ঋণ দেবে। এছাড়া সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন করবে ৩৩৭ কোটি ৩৬ লাখ টাকা।
রামপাল, পায়রা, পটুয়াখালিতে কয়লাভিত্তক একাধিক বিদ্যুৎকেন্দ্র করা হচ্ছে। বন্দরে কয়লাভিত্তিক পাওয়ার প্ল্যান্টসহ দক্ষিণাঞ্চলে অনেকগুলো পাওয়ার প্ল্যান্ট হচ্ছে। ফলে দক্ষিণাঞ্চলের উদ্বৃত্ত বিদ্যুৎ ঢাকাসহ আশপাশের এলাকায় সরবরাহের জন্য সেখান থেকে গোপালগঞ্জ পর্যন্ত অপর একটি লাইন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
পদ্মা সেতু দিয়ে গ্যাস যেতে
চার থেকে পাঁচ বছর লাগবে?
দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের গ্রাহকরা গ্যাস পেতে আরও চার থেকে পাঁচ বছর লাগবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। পদ্মা বহুমুখী সেতুতে গ্যাস পাইপলাইন স্থাপনের কাজ শেষ হয়েছে। এখন দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের স্থলভাগের পাইপলাইন নিমার্ণ করতে হবে। এজন্য আগামি দুই থেকে তিন বছর সময় লাগবে।
পদ্মা বহুমুখী সেতুর ওপর গ্যাস পাইপ লাইন নিমার্ণ কাজ শেষ করার পর এখন স্থলভাগের কানেকটিং পাইপলাইনের সংযোগের জন্য প্রকল্প নেয়া হচ্ছে বলে গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানী লিমিটেডের (জিটিসিএল)উবর্ধতন এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
জিটিসিএলের পরিচালক (অপারেশন) ইঞ্জিনিয়ার মো: তাজুল ইসলাম মজুমদার এ বিষয়ে এনার্জি বাংলাকে বলেন, পদ্মা সেতুতে পাইপলাইন নিমার্ণের কাজ শেষ হয়েছে। কবে নাগাদ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে গ্যাস সরবরাহ করা হবে এমন প্রশ্নের জবাবে
তিনি বলেন, এটা সরকারের সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করছে। তবে ৪/৫ বছর সময় লাগবে। কারণে স্থলভাগের পাইপলাইন নির্মাণ করতে হবে।
পরিকল্পনা বিভাগের মহাব্যবস্থাপক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, পদ্মা সেতুর ওপর পাইপ লাইন নিমার্নের কাজ শেষ। এখন আমরা কানেকটিং পাইপলাইনের কাজ করছি। স্থলভাগের কানেকটিং পাইপলাইনের ফান্ডিং নিয়ে কাজ চলছে। এটি
আলাদা প্রকল্প হবে। অর্থের বিষয়টি নিশ্চিত হলেই কাজ শুরু করবো।
জিটিসিএলের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে কবে নাগাদ গ্যাস সরবরাহ করা হবে, সেটা এখনও নিশ্চিত হয়নি। তবে আগামি দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে গ্যাস সরবরাহের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করা হচ্ছে।
জানা গেছে, পদ্মাবহুমুখী সেতুর উপর ৩০ ইঞ্চি ব্যাসার্ধের ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার পাইপলাইন স্থাপন করা হয়েছে। একইসঙ্গে পাইপলাইনের মাধ্যমে প্রবাহিত গ্যাসের হুইলিং চার্জ (সঞ্চালনখরচ) নির্ধারণ করা হয়েছে। ঘনমিটার প্রতি ২ টাকা ৫০ পয়সা রাখা হয়েছে। যমুনা বহুমুখী সেতুতেও একই হারে হুইলিং চার্জ নেওয়া হচ্ছে।
২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে পদ্মা বহুমুখী সেতুর উপর গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন স্থাপনের কাজ শুরু হয়। প্রকল্পের মেয়াদ অনুযায়ী চলতি বছরের জুনে প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে।
৩০ ইঞ্চিব্যাসের ৬.১৫ কিলোমিটার সঞ্চালন পাইপলাইন নিমার্ণে ব্যয় হয়েছে দুইশত ৫৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা। যা পদ্মা সেতুর ব্যয়ের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিল। সেতু কর্তৃপক্ষের অধীনেই পাইপলাইনের কাজ বাস্তবায়ন করা হয়েছে। সেতু কর্তৃপক্ষ নিয়োজিত মার্কিন পরামর্শক প্রতিষ্ঠান একম (ধবপড়স) এই গ্যাস পাইপলাইনের নির্মাণ ডিজাইন করে। এ কাজে সার্বিক সহায়তা করে জিটিসিএল।
পরবর্তীকালে চায়না পেট্রোলিয়াম পাইপলাইন ব্যুরোর (সিপিপি) সঙ্গে ২০২০ সালের ১লা সেপ্টেম্বর দুইশত ৭ কোটি ৫১ লাখ ৬৯ হাজার ৯০ টাকায় একটি সরবরাহ ও স্থাপন চুক্তি হয়। এই চুক্তির আওতায় সিপিপি পাইপলাইনের প্রয়োজনীয় মালামাল
সরবরাহ করে এবং স্থাপন করে।