পরমাণু কৌশলে দেশে বছরে প্রায় ৫০ লাখ টন ফসল উৎপাদন
পরমাণু কৌশল কাজে লাগিয়ে দেশে প্রতিবছর প্রায় ৫০ লাখ টন ফসল উৎপাদন হচ্ছে। যা মোট উৎপাদিত ফসলের প্রায় আটভাগ। পরমাণু কাজে লাগিয়ে এখন পর্যন্ত বিভিন্ন ফসলের ১০৭টা জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। পরমাণু শক্তি ব্যবহার করে বিনা ধান, গম, ডাল, তৈলবীজ, মসল্লা সবজি ও বিভিন্ন ফলের জাত উদ্ভাবন করেছে।
বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) কৃষিতে পরমাণুর গবেষণা করে। বিনা’র বিজ্ঞানীরা জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে খাপখাওয়ানো এসব জাত উদ্ভাবন করেছে।
বিনা’র মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের প্রধান ড. মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম এনার্জি বাংলাকে বলেন, দেশের খাদ্য চাহিদা মেটাতে বিনা কাজ করে যাচ্ছে। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন ফসলের জাত উদ্ভাবন করছে। পরমাণু কৌশল কাজে লাগিয়ে এখন পর্যন্ত ফলনশীল ধান উৎপাদনে সবচেয়ে ভূমিকা রেখেছে বিনা।
মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম বলেন, প্রকৃতির প্রতিকূল পরিবেশে বাংলাদেশের কৃষকেরা ফসল উৎপাদন করছে। এই প্রতিকূল পরিবেশের সঙ্গে সহনশীল নতুন নতুন জাত উদ্ভাবন করে কৃষকদের হাতে তুলে দেয়া হচ্ছে। এখন বাংলাদেশের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, কম জমিতে ও কম পানি দিয়ে বেশি নিরাপদ ফসল উদ্ভাবন। সেই লক্ষপূরণে কাজ হচ্ছে।
বিনা’র উদ্ভাবন করা ফসলের বিভিন্ন জাত দেশের দারিদ্র্য বিমোচনে অগ্রণিভূমিকা রাখছে। গ্রামীণ জীবনযাত্রা উন্নত হচ্ছে। লবণাক্ত, বন্যা ও খরার মধ্যেও ফলছে ফসল। এতে দেশের খাদ্য ঘাটতি পূরণ হচ্ছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশের উপকূলে লবণাক্ততা বাড়ছে। এতে দেশের উপকূলের ১০ লাখ একর জমিতে ফসল হয় না। কিন্তু বিনার লবণসহিষ্ণু ও বন্যাসহিষ্ণু ধানের জাত চাষ হলে এই জমি আর অনাবাদী থাকবে না। এতে দেশে অতিরিক্ত ৬০ লাখ টন ধানের উৎপাদন হবে।
ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটমিক এনার্জি এজেন্সি (আইএইএ) এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ার কারণে ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের উপকূলের ২ কোটি ৭০ লাখ মানুষ অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হবে। বিনার উদ্ভাবন করা জাত এসব এলাকায় এখন চাষ হচ্ছে। ফলে উপকূলের এসব মানুষ নিজের এলাকায় চাষবাস করতে পারবে।
বিনা-৮ জাতের ধানের উৎপাদন দেশের উপকূলীয় এলাকায় ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে বলে জানিয়েছে আইএইএ।
এত দিন লবণাক্তসহিষ্ণু ধানের জাত হিসেবে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) ব্রি ধান-৪৭, ব্রি-৬১ ও ব্রি-৬৭ চাষ হতো। এখন বিনা-৭ ও ৮ জনপ্রিয় হচ্ছে। বিশেষ করে উপকূলের ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, সাত¶ীরা, খুলনা ও বাগেরহাটে এই জাতের চাষ বেশি হচ্ছে।
বন্যার কারণে বাংলাদেশে ফসলের অনেক ক্ষতি হয়। হঠাৎ বন্যায় পানিতে ডুবে গিয়ে নষ্ট হয় ফসল। বন্যায় পানির নিচে তিন থেকে পাঁচ দিন ডুবে থাকলে ধানের ফসল নষ্ট হয়ে যায়। বিনা উদ্ভাবিত বিনা-৭ ও ২০১৮ সালে উদ্ভাবন করা বিনা-১২ বন্যার পানি থেকে ফসল র¶া করছে। এখন সর্বোচ্চ ২৪ দিন ধান পানির নিচে ডুবে থাকলেও নষ্ট হয় না। দেশের মধ্য ও উত্তরাঞ্চলের কৃষকের কাছে এই জাত খুব জনপ্রিয় হচ্ছে।
ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটমিক এনার্জি এজেন্সির (আইএইএ) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশে নানা ধরনের বিপদ বাড়ছে। কিন্তু বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা এসব বিপদ সহ্য করতে পারে এমন ফসলের জাত উদ্ভাবন করে চলেছেন, যা বিশ্বে অনুকরণীয়। বাংলাদেশের সামনে জলবায়ু পরিবর্তনের যে বিপদ, তা মোকাবিলা করার ¶েত্রে বিনা’র এসব জাত অস্ত্র হতে পারে।