পরমাণু ব্যবহার করে বিনা ১৩ ফসলের ৯০ জাত উদ্ভাবন করেছে
বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট এখন পর্যন্ত ১৩টা ফসলের ৯০টা উন্নত জাত উদ্ভাবন করেছে। বাংলাদেশের খাদ্য ঘাটতি মেটাতে এই উদ্ভাবন অগ্রণি ভূমিকা রেখে চলেছে। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন জাত উদ্ভাবনে গবেষণা চলছে।
বিনা উদ্ভাবিত বীজের মধ্যে ধানবীজ ১৭টা। এছাড়া গমের একটা, ১০ জাতের সরিষা, নয় জাতের চীনাবাদাম, চার জাতের তিল, চার জাতের সয়াবীন, আট জাতের মুগডাল, ১০ জাতের ছোলা, ১০ জাতের মসুর ডাল, এক জাতের মাষ, এক জাতের খেসারীডাল, তিন জাতের পাট আর ১২ জাতের টমেটো উদ্ভাবন করেছে। এছাড়া আট জাতের ফসলের জন্য জীবাণুসার উদ্ভাবন করেছে। এই সারের দাম কম। নাইট্রোজেন সারের পরিবর্তে এই সার ব্যবহার করা হচ্ছে।
পরমাণু শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যব্হার ও উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে এই জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। এসব জাতের বীজের ব্যাপক চাহিদাও তৈরি হয়েছে। বিনা উদ্ভাবিত জাতের কারণে এখন প্রায় ১২ মাস অর্থাৎ বছর জুড়ে কোন না কোন ধান উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে। যে কোন পরিস্থিতিতেই ধান লাগানো যাচ্ছে। তা সে লবনাক্ত এলাকা হোক, কিম্বা বন্যায় জমি ডুবে যাক। কিম্বা অন্য মৌসুমের অন্য কোন পরিবর্তন হোক। সকল পরিস্থিতিতেই ধান লাগানো যাচ্ছে।
উদ্ভাবন করা ধান বীজের সবচেয়ে ফলনশীল বোরো বিনাধান-১৮। প্রতি হেক্টর জমিদে গড়ে প্রায় সাড়ে সাত টন এই ধান হয়। ১৪৮ থেকে ১৫২ দিন লাগে এই ধান পাকতে। আর বিনাধান-১৭ হচ্ছে আমন। এটাও হেক্টর প্রতি জমিতে প্রায় সাত টন পর্যন্ত ফসল জন্মে। বিনাধান-১৭ম তে আবার পানি ও সার অনেক কম লাগে। অন্য ধানে যে পরিমান পানি ও সার প্রয়োজন হয় এই ধানে তার থেকে ৩০ ভাগ কম পানি ও সার প্রয়োজন হয়। এজন্য এই ধান চাষে আগ্রহীর সংখ্যা বেশি।
উৎপাদন তুলনামূলক কম হলেও বিনাধান-১৬ অনেক আগে পেকে যায়। এই বীজের ধান পাকতে সময় লাগে মাত্র ১০০ থেকে ১০৭ দিন। যত বীজ আছে তারমধ্যে এই বীজ থেকে ফসল সবার আগে উঠে। আমন মৌসুমে এই ধান লাগানো হয়। হেক্টর প্রতি জমিতে এই ধান উৎপাদন হয় গড়ে সাড়ে পাঁচ টন করে। ২০১৪ সালে এই ধান উদ্ভাবন করা হয়েছে। বিনাধান-১৭ তে-ও সময় কম লাগে। বীজ লাগানোর পর ধান হতে সময় লাগে ১১৫ থেকে ১২০ দিন। ২০০৭ সাল থেকে এই ধান চাষ করা হচ্ছে। এছাড়া দেশের দক্ষিনাঞ্চলের জন্য উদ্ভাবন করা হয়েছে লবনাক্ত সহিষ্ণু ধান। লবনাক্তসহিষ্ণু জাতের বীজ উদ্ভাবন করেছে দুটো। বন্যাসহিষ্ণু জাতের ধানবীজও আছে দুটো। আছে সুগন্ধী ও নারী রোপনযোগ্য ধান। বিনাধান-১৫ যেমন আগাম হয় তেমন এতে সুন্দর ধান হয়। এজন্য এই ধান বিদেশে রপ্তানিও করা হয়।
ফসল উৎপাদনের জন্য পরমাণুর ব্যবহার করে কিছু সারও উদ্ভাবন করা হয়েছে। ভিন্ন ভিন্ন ফসলের জন্য ভিন্ন ভিন্ন সার আছে। সারের কারণে ফলন বাড়ছে। কোন কোন ফসলের ফলন প্রায় দেড়শ শতাংশ বেড়েছে। বিনা’র উদ্ভাবন করা সার মূলত আটটা ফসলে ব্যবহার করা হচ্ছে। এরমধ্যে বিনা-এসবি-৪ জীবাণুসার ব্যবহার হচ্ছে সয়াবীনে। এই সার ব্যবহারের ফলে সয়াবীন উৎপাদন ৭০ থেকে ১৫০ শতাংশ পর্যন্ত বেশি হচ্ছে। মসুর, ছোলা, মুগ, বরবটি, চীনাবাদাম, সয়াবীন, মাসকলাই ও ধৈঞ্চা চাষের জন্য এই সার উদ্ভাবন করা হয়েছে।
বিনা’র পরিচালক ড. হোসনেয়ারা বেগম বলেন, বিনার কাজই গবেষণা করা। এখানে বিজ্ঞানীরা আছেন। তারা প্রতিনিয়ত গবেষণা করে নতুন নতুন জাত উদ্ভাবন করছেন। বিনা বাংলাদেশের খাদ্য চাহিদাপূরণে অগ্রণি ভূমিকা রেখে চলেছে। ভবিষ্যতে এই কার্যক্রম আরও বেগবান করার জন্যও নেয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ। বিনা যে ৯০ জাতের বীজ উদ্ভাবন করেছে তারমধ্যে ৩১টাই উদ্ভাবন হয়েছে গত পাঁচ বছরে। এরমধ্যে ২০১৬ সালেই প্রায় ১০টা জাত উদ্ভাবন করেছে বিনা। পরিকল্পিতভাবে এই গবেষণা করা হচ্ছে বলে এর সফলতা আসছে।