মোবারকপুরে গ্যাস অনুসন্ধান কুপ খনন শুরু
পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার মোবারকপুরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে কুপ খনন শুরু হয়েছে। শুক্রবার সকালে অনুসন্ধান কূপ খনন শুরু করা হয়। আগামী তিন/চার মাস পর এখানের গ্যাসের অবস্থান বা পরিমান বিষয়ে জানা যাবে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নের খবরে এলাকার মানুষের মধ্যে উৎসব আমেজ বিরাজ করছে।
পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. হোসেন মনসুর অনুষ্ঠানিকভাবে এই কুপ খনন কাজের উদ্বোধন করেন। এসময় বাপেক্স ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো: আব্দুল বাকীসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
বাপেক্সের নতুন রিগ (খনন যন্ত্র) বিজয়-১২ দিয়ে এই কূপ খনন করা হবে। ৩৪ বছর পর উত্তরাঞ্চলের একমাত্র এই গ্যাস ক্ষেত্র খনন কাজ শুরু করা হলো। মোবাকরপুরে নতুন বৈশিস্টের ভূ-কাঠামো। এধরণের কাঠামোর জমিতে আগে বাপেক্স অনুসন্ধান করেনি।
কূপ খননকাজের উদ্বোধন করার পর পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান সমকালকে বলেন, নতুন এই ধরণের ভূ-তাত্ত্বিক কাঠামোয় তেল-গ্যাস অনুসন্ধান কাজ খুবই কঠিন। এই কঠিনকে চ্যালেঞ্জ দিয়ে বাপেক্স কাজ শুরু করেছে। আশা করি, এখানে আমরা তেল গ্যাস পাব।
গ্যাস ক্ষেত্রর প্রকল্প পরিচালক গোলাম মোস্তফা সমকালকে জানান, তেল গ্যাস উত্তালনের জন্য মোবারকপুর গ্যাসত্রেটির কূপ খনন শুরু হয়েছে। ৩/৪ মাস পর তেল গ্যাস পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হবে। তবে আশা নিয়েই কাজ করছি।
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন এন্ড প্রোডাকশন কোম্পানী লিমিটেড (বাপেক্স) সূত্র জানায়, ১৯৮০ থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত জার্মান কোম্পানী (জিজিএজি) উত্তরাঞ্চলের বেশ কয়েকটি জেলায় গ্যাস ও তেল অনুসন্ধান ভূ-তাত্ত্বিক জরিপ করে। এ সময় পাবনার সুজানগর উপজেলার মোবারকপুর গ্রামে তেল ও গ্যাসের সম্ভাব্য মজুতের সম্ভাবনা দেখা দেয়।
মোবারকপুরের গ্যাস উত্তোলনের জন্য ২০০৪-০৫ অর্থ বছরে বার্ষিক উন্নয়ন প্রকল্পে একটি প্রকল্প অন্তর্ভূক্ত করা হয়। ঐ সময় প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্প হিসাবে ২০০৬ সালের ৬ জুন একনেক বৈঠকে ৫৬ কোটি ৪০ লাখ টাকার ‘মোবারকপুর অনুসন্ধান কূপ খনন প্রকল্প’ নামে অনুমোদন দেয়া হয়। প্রকল্পে শর্ত দেয়া হয় যে, কূপ খননের আগে গ্যাস পাওয়ার বিষয়ে ভূ-তাত্ত্বিক দ্বি-মাত্রিক (টু-ডি) জরিপের ফলাফল ভালো হলেই অনুসন্ধান করার অনুমতি পাওয়া যাবে। পরে ২০০৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সেখানে ১৬০.৩৮ কিলোমিটার লাইন জরিপ করা হয় এবং ডিসেম্বর মাসে এর ফলাফল প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। দ্বিমাত্রিক জরিপের তথ্য-উপাত্ত থেকে বাপেক্স সেখানে গ্যাসের অস্তিত্বের ব্যাপারে আবারও আশাবাদি হয়। কিন্তু পরবর্তীকালে এই প্রকল্পটির কাজের কোন অগ্রগতি দেখা যায়নি।
এরপর ২০১২ সালের ডিসেম্বর পর্যস্ত সময় বেঁধে দিয়ে ৮৯ কোটি ২৬ লাখ টাকা অর্থায়নে ঐ প্রকল্পটি আবার অনুমোদন দেয়া হয়। পরে বাপেক্স কারিগরি কারন দেখিয়ে মোবারকপুর থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার উত্তর পশ্চিমে সাঁথিয়া উপজেলার পাগলাদহ, চন্ডিপুর ও বিষষ্ণুবাড়ীয়া মৌজায় প্রায় নয় একর জমি ২০১০ সালে দুই বছরের জন্য ইজারা নিয়ে নতুন করে সেখানে প্রকল্পটি স্থানান্তর করে। অবকাঠামো নির্মানের পর প্রায় দু’বছর পেরিয়ে গেলেও ’রিগ’ না পাওয়া যাওয়ায় নির্দিস্ট সময়সীমার মধ্যে এ কূপ খনন শুরু করা যায়নি।
গত ৪ ফেব্রুয়ারি মাসে রিগ বসানোর কাজ শুরু হয় এবং মে মাসে শেষ হয়।