পেইপে তেল সরবরাহ: শুরুতেই হোঁচট, সতর্ক থাকতে হবে

সম্পাদকীয়:

বড় জাহাজ থেকে ডিপোতে পাইপে করে তেল আনা শুরু হয়েছে। দীর্ঘদিনের উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলো জ্বালানি তেল বহনে। তবে শুরুটাই হলো হেঁচট দিয়ে। কক্সবাজারের মাতারবাড়ি থেকে পাইপে করে প্রথমবারের মতো জাহাজ থেকে তেল খালাস করতে গিয়েই পাইপ ফেটে গেছে। কিছু জ্বালানি তেল ভেসে গেছে সাগরে।

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) অধীন ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড ৮ হাজার ২২২ কোটি টাকা খরচ করে এই পাইপ স্থাপন করেছে।

সমুদ্রের গভীরতা কম হওয়ায় বড় জাহাজ থেকে এতদিন ছোট ছোট জাহাজে করে ডিপো পর্যন্ত তেল বহন করা হতো। জাহাজ থেকে ডিপো পর্যন্ত ছোট জাহাজে তেল আসতে চুরিসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। সেই অনয়িম ঠেকাতে এবং সময় ও অর্থ বাঁচাতে পাইপ করা হয়। যাতে জাহাজ থেকে সরাসরি পাইপে করে ডিপোতে তেল নেওয়া যায়। এতে সময় ও খরচ বাচঁবে। সাথে চুরি বা উবে যাওয়ার ঘটনা বন্ধ হবে।

কিন্তু শুরুতেই সেই প্রক্রিয়া হোঁচট খেল। এখন আবার সনাতন পদ্ধতিতেই তেল আনা হচ্ছে।

যদিও ইতিমধ্যেই পাইপ মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

বিষয়টি ভালো ভাবে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। এটি কারিগরি ত্রুটি না অন্য কোন পক্ষের কারসাজি তা খতিয়ে দেখতে হবে।

ছোট ছোট জাহাজে করে তেল বহন এবং সেই অল্প জায়গার মধ্যে অনিয়ম করার একটি চক্র দীর্ঘদিন সক্রিয় ছিল বলে বিভিন্ন সময় খবর প্রকাশ হয়েছে। কিন্তু তাদেরকে কিছুই করা যায়নি। তাই গেন শক্তিশালী দুষ্টু চক্রের কুনজর এই পাইপ লাইনে আছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে হবে।

বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, প্রায় ৮২ হাজার টন অশোধিত তেল নিয়ে জাহাজটি ২৪শে জুন দেশে পৌঁছায়। পাইপে করে তেল খালাস শুরুর একদিন পরে পাইপ ফেটে যায়। এতে আগের মতই ছোট ছোট জাহাজে আবার তেল খালাস করা হচ্ছে। এজন্য বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন থেকে দুটি জাহাজ গেছে মাতারবাড়ীতে।

জাতীয় দৈনিক সমকালের খবরে বলা হয়েছে, প্রথম জাহাজ থেকে পরিকল্পনা অনুযায়ী তেল খালাস করতে না পারায় এসপিএম প্রকল্পের চ্যালেঞ্জ আরও বেড়ে গেছে। সাগরের তীব্র স্রোতে জাহাজ দাঁড়িয়ে থাকতে না পারায় পাইপ নির্ধারিত স্থান থেকে ছুটে গেছে বলে জানা গেছে। আরেকটি সূত্র বলছে, পাইপ লিক করেছে। সাগরে কিছু তেল ভেসে গেছে। ঠিক কী পরিমাণ তেল সাগরে পড়েছে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। পরিবেশ অধিদপ্তরেরও কেউ এ ব্যাপারে কিছু জানেন না। কঠোর গোপনীয়তা রক্ষা করেছে ইস্টার্ন রিফাইনারি কর্তৃপক্ষ।

‘ইনস্টলেশন অব সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) উইথ ডাবল পাইপলাইন’ নামে প্রকল্প অনেক দিনের। বাংলাদেশ ও চীন সরকারের মধ্যে জিটুজি ভিত্তিতে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়।

গভীর সমুদ্রের বড় জাহাজ থেকে পাইপে করে জ্বালানি তেল ডিপোতে নিতে ৪৮ ঘণ্টা সময় লাগার কথা। যা ছোট ছোট জাহাজে আনতে লাগতো ১১ দিন। ছোট জাহাজে বহন করা লাগবে না বলে খরচ বাঁচবে আটশ’ কোটি টাকা। এই সময় লোকসান বা তেল উবে যাওয়ার ঘটনাও বন্ধ হবে। কোনো প্রকার উবে যাওয়া খবর থাকবে না। অর্থাৎ পুরো তেলটাই পাওয়া যাবে। এই অল্প পথ আনতে আগে বড় পরিমান তেল উবে যেত বলে বলা হতো। আদোতে যার বড় অংশই ছিল চুরি।

ইস্টার্ন রিফাইনারি বছরে ১৫ লাখ টন অপরিশোধিত জ্বালানি তেল পরিশোধন করতে পারে। দ্বিতীয় ইউনিট চালু হলে ক্ষমতা ৪৫ লাখ টন হবে। জাহাজের তেল পাইপে করে আসা শুরু হলে শোধন ক্ষমতা বাড়াতেও সহায়তা করবে।

গভীর সমুেদ্র থেকে প্রায় ১৫০ কিলোমিটার পাইপলাইন স্থাপন করা হয়েছে। আর স্থলভাগে প্রায় ৭০ কিলোমিটার। একইভাবে চট্টগ্রাম ডিপো থেকে সরাসরি নারায়ণগঞ্জ ডিপো পর্যন্ত পাইপলাইন স্থাপনের কাজ চলছে। একবারে ঢাকা পর্যন্ত এই পাইপ হবে। এই পুরো প্রক্রিয়ায় এখন নজরদারি ভালোভাবে বাড়াতে হবে। সাশ্রয়ী এমন কাজে যেন বাঁধা না আসে।