বাণিজ্যিক স্বার্থ নয়, জাতীয় ও ভোক্তা স্বার্থ গুরুত্ব দিতে হবে

১৮ই মার্চ ২০২১:
বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বাণিজ্যিক স্বার্থ নয়, জাতীয় ও ভোক্তা স্বার্থ গুরুত্ব দিতে হবে। স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। অতীতে পরিকল্পনায় ভুল হয়েছে। যার প্রভাব অর্থনীতিতে পড়ছে। এ থেকে শিক্ষা নিতে হবে। স্বল্প মেয়াদে পরিকল্পনা করতে হবে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানিখাতের প্রস্তাবিত মহাপরিকল্পনা নিয়ে অনলাইন সেমিনাওে বক্তারা একথা বলেন। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এরআয়োজন করে।
বক্তারা বলেন, মহাপরিকল্পনায় বিদ্যুতের চাহিদা মূল্যায়নে ভুল হয়েছে। অতিরিক্ত চাহিদা প্রক্ষেপণের কারণে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র এখন অর্থনীতির জন্য বোঝা। বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালপত্র আমদানির নামে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ম. তামিম বলেন, ২০১০ সালে করা প্রথম মহাপরিকল্পনার ৬০ শতাংশ বাস্তবায়িত হয়েছে। তিনি বলেন, বাস্তবিক পরিকল্পনা নেওয়া দরকার। দীর্ঘমেয়াদে নেওয়া পরিকল্পনায় ভুল মূল্যায়নের কারণে চাহিদার অতিরিক্ত বিদ্যুৎকেন্দ্র করা হয়েছে। শিল্প খাতের প্রবৃদ্ধি নিয়ে পূর্বাভাস মেলেনি। তাই স্বল্পমেয়াদে পরিকল্পনা নেওয়া দরকার।
অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ বলেন, বিশ্ব এখন নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারে যাচ্ছে। আর বাংলাদেশের সরকার সারা দুনিয়ার পরিত্যক্ত পারমাণবিক ও কয়লাবিদ্যুৎ উৎপাদনে যাচ্ছে। তারা জাতীয় স্বার্থ দেখে না। সরকারের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে বহুজাতিক কোম্পানি, রাশিয়া, চীন যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের লবিস্টরা প্রভাব বিস্তার করে। নাগরিকদের মতামত সেখানে উপেক্ষিত হয়।
পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসেন বলেন, শূন্য কার্বন নিঃসরণে যাওয়ার লক্ষ্য নিয়েই এগোনো হচ্ছে। এর ভিত্তিতেই স্থানীয় বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করে মহাপরিকল্পনা পর্যালোচনা করা হবে।
সিপিডির প্রধান গবেষক ও সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, নতুন মহাপরিকল্পনায় চাহিদার প্রক্ষেপণ যথাযথভাবে করতে হবে। বিদেশিদের সহায়তা নেওয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশি বিশেষজ্ঞ ও সামাজিক বিজ্ঞানীদের যুক্ত করা জরুরি। বাণিজ্যিক স্বার্থ নয়, জাতীয় ও ভোক্তা স্বার্থ গুরুত্ব দিতে এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। এ দায়িত্ব সরকারের।সেমিনারে নিবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। তিনি বলেন, সারাদেশ থেকে তথ্য সংগ্রহ না করে শুধু জিডিপি প্রবৃদ্ধিও ওপর ভর করে হিসাব করলে হবে না। নগরায়ণ, শিল্পখাতের বিকাশ মূল্যায়ন করে বিদ্যুতের চাহিদা হিসাব করতে হবে। জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে সরে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে জোর দিতে হবে। কয়লার পরিবর্তে তরল প্রাকৃতিক গ্যাসভিত্তিক (এলএনজি) বিদ্যুৎকেন্দ্র না করে নবায়নযোগ্য উৎপাদনে যেতে হবে।
জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি বলেন, ২০৪১ সালের রূপকল্প অনুসারে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, জলবায়ু পরিবর্তন ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি এবং সবার জন্য জ্বালানি নিশ্চিত করার বিষয় তিনটি বিবেচনায় নিয়েই মহাপরিকল্পনা তৈরি করতে হবে।
আলোচনায় অংশ নিয়ে আরও বক্তব্য দেন বুয়েটের অধ্যাপক ইজাজ হোসেন, বাংলাদেশে জাইকার প্রধান প্রতিনিধি ইউহো হায়াকাওয়া, নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলাউদ্দিন, বাংলাদেশ ইনডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রোডিউসার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ইমরান করিম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোশাহিদা সুলতানা প্রমুখ। শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন।