বায়ু বিদ্যুতে বিনিয়োগ করবে ডেনমার্ক
ডেনমার্কের কোম্পানি ভেসতা পটুয়াখালিতে ১০০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে বিনিয়োগ করতে যাচ্ছে। এটি হবে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্র। একই সাথে তারা পটুয়াখালিতে বায়ুর গতি জরিপ করবে।
সোমবার বিদ্যুৎ ভবনের মুক্তিহলে এবিষয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের সাথে ভেসতা এশিয়া প্যাসিফিক উইন্ড টেকনোলজি লিমিটেডের সাথে সমঝোতা চুক্তি হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ি আগামী এক বছরের মধ্যে তারা বায়ুর গতি জরিপ শেষে প্রতিবেদন জমা দেবে।
চুক্তি সই অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এসময় অন্যদের মধ্যে বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব মনোয়ার ইসলাম, বাংলাদেশে নিযুক্ত ডেনমার্কের চার্জ দ্যা এ্যাফেয়ার্স পিটার জেনসিন, স্রেডার চেয়ারম্যান তাপস কুমার রায়, পিডিবি চেয়ারম্যান খন্দকার মাসুদুল হাসান উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিদ্যুৎ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. আহমদ কায়কাউস। সমঝোতায় বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষে যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ আলাউদ্দিন এবং ভেসতার ব্যবসায় উন্নয়ন বিভাগের প্রধান নাভীন রাঝভান বালাচন্দন সই করেন।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বাংলাদেশে বায়ু বিদ্যুতের সম্ভাবনাময় স্থানগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। উপকূলের প্রায় নয়টি স্থানে যথেষ্ট বাতাসের গতি আছে। যা দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব। ভেসতা ১০০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি কয়েকটি স্থানে বাতাসের গতি পর্যাবেক্ষণ করবে। পটুয়াখালি থেকে ২৫ কিলোমিটার পূর্বে আমতলী, কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের চার কিলোমিটার দূরে মিসিরিপাড়া, চট্টগ্রাম জেলার চার কিলোমিটার দূরে উত্তর মিরসরাই এবং মহামায়া লেকে বাতাসের জরিপ করবে ভেসতা। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে আমেরিকার টেইলর কোম্পানি ৬০ মেগাওয়াটের বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্র করতে ইতিমধ্যে পিডিবির সাথে চুক্তি করেছে।
আগামী ২০২০ সালের মধ্যে মোট জ্বালানির ১০ ভাগ নবায়নযোগ্য থেকে চাহিদা মেটানোর লক্ষ নির্ধারন করা হয়েছে।
বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী তার বক্তৃতায় বলেন, বাংলাদেশ এখন বিনিয়োগের অন্যতম একটি স্থান। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ সবচেয়ে বিনিয়োগ বান্দব দেশ। এজন্য প্রতিদিন বিদেশী বিনিয়োগকারিরা এখানে আসছে। তিনি বলেন, বিনিয়োগ বাড়ার সাথে সাথে জ্বালানি চাহিদাও বাড়ছে। বাংলাদেশ এখন জ্বালানি ক্ষুধার্ত দেশ। এই জ্বালানির একটি অংশ আসবে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে। আর নবায়নযোগ্য জ্বালানির অন্যতম হবে বায়ু বিদ্যুৎ। প্রতিমন্ত্রী বলেন, জ্বালানি ব্যবস্থাপনার নীতিমালা করা হচ্ছে। এই নীতি অনুযায়ি প্রাধান্য দিয়ে জ্বালানি দেয়া হবে। শিল্পে জ্বালানি নিশ্চিত করা হবে। শিল্পে নিরবিচ্ছিন্ন গ্যাস ও বিদ্যুৎ দেয়া হবে। আগামী তিন চার বছরের মধ্যে শিল্পে নিরবিচ্ছিন্ন গ্যাস বিদ্যুৎ দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, সরকার নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়াতে যথেষ্ট আন্তরিক।
বিদ্যুৎ সচিব বলেন, বাংলাদেশে বায়ু বিদ্যুতের অনেক সম্ভাবনা। ৭১০ কিলোমিটার লম্বা উপকূল। এই পুরো উপকুলে বায়ু বিদ্যুৎ করা সম্ভব। বর্তমানে প্রযুক্তি উন্নত হয়েছে। অল্প বাতাসেও বিদ্যুৎ করা যায়। এজন্য এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হবে। জ্বালানির বৈচিত্র্য আনার জন্য বায়ু বিদ্যুৎ অন্যতম একটি উপায়। আগামী ২/৩ বছরের মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য পরিমান বায়ু বিদ্যুৎ দেশে যোগ হবে বলে তিনি জানান।
ডেনমার্কের চার্জ দ্যা এফেয়ার্স বলেন, বিদ্যুতের ব্যবহার ছাড়া একটি দেশের দারিদ্র দূর করা যায় না। বাংলাদেশেরও দারিদ্র দুর করতে বিদ্যুতের ব্যবহার বাড়াতে হবে। বাংলাদেশের জন্য জ্বালানি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটি অন্যতম একটি চ্যালেঞ্জ।