বিদ্যুতের সিস্টেম লস কমাতে পারেনি সরবরাহ কোম্পানিগুলো
বিদ্যুতের সিস্টেম লস বা পদ্ধতিগত লোকসান কমেনি। ২০১৭-১৮ অর্থব্ছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর) মাত্র দুই বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি ছাড়া অধিকাংশই সিস্টেম লস কমানোর লক্ষে পৌছতে পারেনি।
২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রথম তিন মাস (জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) সিস্টেম লস কমিয়ে ১০ শতাংশে আনার কথা ছিল। কিন্তু সিস্টেম লস হয়েছে ১৪ দশমিক ১৯ শতাংশ। বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (বিআরইবি) সিস্টেম লস কমিয়ে ১১ দশমিক ১০ শতাংশে নিয়ে আসার কথা থাকলেও হয়েছে ১২ দশমিক ৩৫ শতাংশ।
একইভাবে পশ্চিমাঞ্চল বিদ্যুৎ বিতরণ প্রতিষ্ঠানের (ওজোপাডিকো) সিস্টেম লস কমিয়ে ৯ দশমিক ৪০ করার কথা থাকলেও হয়েছে ১০ দশমিক ৫৬ ভাগ। নর্দান পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (নেসকো) সিস্টেম লস ১১ দশমিক ৫০ হওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হলেও হয়েছে ১৫ দশমিক ৬৫ ভাগ।
তবে ঢাকার দুই বিদ্যুৎ বিতরণ প্রতিষ্ঠান ডিপিডিসি ও ডেসকো তাদের লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি কমিয়েছে সিস্টেম লস। ডিপিডিসির লক্ষ্য ছিল ৮ দশমিক ২৫। তারা কমিয়ে করেছে ৭ দশমিক ৭৬ ভাগ। অন্যদিকে ডেসকোর লক্ষ্য ছিল ৭ দশমিক ৫০। তারা কমিয়ে এনেছে ৪ দশমিক ৫৯ ভাগে।
গত কয়েক বছরের সিস্টেম লসের তথ্য যাচাই করে দেখা যায়, এর মোট পরিমাণ প্রায় একই আছে। ২০১০-১১ অর্থবছরে দেশের বিদ্যুৎ বিতরণে ক্ষতি ছিল ১২ দশমিক ৭৫ শতাংশ। পরের চার অর্থবছর পর্যন্ত এ হার ছিল যথাক্রমে ১২ দশমিক ২৬; ১২ দশমিক শূন্য ৩; ১১ দশমিক ৯৬ ও ১১ দশমিক ৩৬ শতাংশ। বর্তমানে এই সিস্টেম লসের পরিমাণ ১১ শতাংশ।
বিদ্যুৎ বিভাগের মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০১৫ সালের মধ্যে সিস্টেম লস এক অঙ্কের ঘরে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নেওয়া হলেও ঢাকার দুই প্রতিষ্ঠান ছাড়া কেউই সেই জায়গায় যেতে পারেনি।
বিদ্যুৎ বিভাগ জানায়, বিআরইবি তাদের সমিতির অর্থায়নে ২০ হাজার ৫০০টি প্রি-পেমেন্ট মিটার স্থাপন করেছে। ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি)প্রি-পেইড মিটার স্থাপন করেছে ঢাকার তিন অঞ্চলে। আজিমপুর, লালবাগ ও শ্যামলী এলাকায় ইতোমধ্যে ৮০ হাজার ৫৬৮টি প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
ডেসকোর অধীন এলাকায় ১ লাখ ২ হাজার ৭৭৪টি প্রি-পেইড মিটার স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া আরও ১ লাখ মিটার স্থাপনের ওয়ার্ক অর্ডার দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে পিডিবি, ওজোপাডিকো ও নেসকো তাদের অধীন এলাকাগুলোতে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজ করছে। আগামী বছরের মধ্যে এগুলোর কাজ শেষ হবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের।
২০১০-১১ অর্থবছরে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় ৪ হাজার ৮৯০ মেগাওয়াট। পরের বছর সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন বেড়ে দাঁড়ায় ৬ হাজার ৬৬ মেগওয়াট। ২০১২-১৩ অর্থবছরে সর্বোচ্চ উৎপাদন হয় ৬ হাজার ৪৩৪ মেগাওয়াট।
২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৭ হাজার ৩৫৬ এবং ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৭ হাজার ৪১৮ মেগাওয়াট। এভাবে বর্তমানে বিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতা গিয়ে দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ৭০১ মেগাওয়াটে। বর্তমানে ১১২টি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ১৩ হাজার ১৪৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়। তবে পিডিবি জানায়— চাহিদা না থাকায় বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে ৮ হাজার ১১০ মেগাওয়াট।