বিদ্যুৎ বিতরণে দ্বৈত লাইন স্থাপন চলছেই: কমিটি গঠন

একই রাস্তা। একই খুঁটি। কিন্তু বিদ্যুতের বিতরণ লাইন দুটো। প্রয়োজন নেই তবুও এমন বিদ্যুৎ বিতরণ লাইন আছে দেশজুড়ে। বিতরণ কোম্পানিগুলোর অবৈধ প্রতিযোগিতার কারণে একই খুঁটিতে দুই লাইন লাগিয়েছে।
এ অব্যবস্থা দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে দেশের একাধিক জেলায়। এভাবে হাজার কোটি টাকা অপচয় হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। সম্প্রতি এ বিষয়টি খতিয়ে দেখতে এবং বিতরণ কোম্পানিগুলোর ভৌগোলিক সীমানা নির্ধারণ করতে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ নিয়ে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) সঙ্গে অন্য বিতরণ কোম্পানিগুলোর সমস্যা বেশি। বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র জানায়, কমিটি প্রথমে বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানির সীমানা নির্ধারণ করবে। এরপর নির্ধারিত এলাকার বাইরে বিতরণ লাইন স্থাপন না করার বিষয়ে নির্দেশ দেবে। সমস্যা বিস্তারিত পর্যালোচনার জন্য বিদ্যুৎ বিভাগের
অতিরিক্ত সচিব মাকছুদা খাতুনকে প্রধান করে গঠন করা হয়েছে আট সদস্যের কমিটি। কমিটিকে আগামী এক মাসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
সূত্র জানায়, একদিকে দেশের বিস্তীর্ণ এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ নেই। বিতরণ লাইন ও ট্রান্সফরমারের অভাবে ঠিকমতো বিদ্যুৎ দেওয়া যাচ্ছে না। অন্যদিকে এক জায়গাতেই রয়েছে দুটো বিদ্যুৎ বিতরণ লাইন এবং দুটো ট্রান্সফরমার। রাস্তার একপাশে বিদ্যুতের লাইন বসানো আছে। তবু অন্যপাশে আরও একটি লাইন টানা হচ্ছে। কিংবা এক খুঁটিতেই দুই প্রতিষ্ঠান দুটো লাইন টানছে। এক প্রতিষ্ঠান খুঁটির মাথায় তার টেনেছে। অন্যরা খুঁটির মাঝ বরাবর। একজন গ্রাহককে নিতে হচ্ছে দুই মিটার, দুই লাইন। এ ঘটনা দেশের প্রায় সকল জেলায়।
দেশের প্রায় ২৩টি জেলায় এভাবে ১১ হাজার ৯৫২ কিলোমিটার দ্বৈত লাইন স্থাপন করা হয়েছে। আরইবি দাবি করেছে, তাদের লাইন আছে অথচ সেখানে আবার পিডিবি বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইন টেনেছে নয় হাজার ৮৪৮ কিলোমিটার। আর পশ্চিমাঞ্চল বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি (ওজোপাডিকো) স্থাপন করেছে দুই হাজার ১০৪ কিলোমিটার লাইন।
বিদ্যুৎ বিতরণ লাইন স্থাপন নিয়ে দিনের পর দিন এভাবে কোটি কোটি টাকার অপচয় আর দুর্নীতি হলেও দেখার কেউ নেই। আলোচনা হয়। উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু আবার তা এক সময় থেমে যায়। আবার আগের মতোই চলতে থাকে দ্বৈত লাইন বসানোর কাজ। এসব বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সকল বিভাগ অবগত। ঊর্ধ্বতন কর্তাব্যক্তিরা সব জানেন। তাদের চোখের সামনেই সব ঘটছে। অপচয়ের কথা তারা স্বীকার করেছেন। তবু এই অনিয়ম ও দুর্নীতি এবং অপচয় না রোধ করা যাচ্ছে না। এতে বিদ্যুৎ, অর্থ ও শ্রমের অপচয় হচ্ছে।
এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে বাংলাদেশ আরইবি আর বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিউবো) মধ্যে কাজের সমন্বয়হীনতার কারণে। এতে নতুন করে যুক্ত হয়েছে ওজোপাডিকো। এ-সংক্রান্ত নির্দিষ্ট নীতিমালা থাকলেও তা মানছে না পিডিবি কিংবা ওজোপাডিকো। বিদ্যুৎ বিতরণের জন্য বাংলাদেশে পাঁচটি সরকারি প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানি আছে। প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানের জন্য আলাদা আলাদা ভৌগোলিক এলাকা নির্দিষ্ট করে দেওয়া আছে। দেশের পল্লী অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে থাকে আরইবি। জেলা শহরগুলোতে পিডিবি। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের শহরগুলোতে দায়িত্বে রয়েছে ওজোপাডিকো। রাজধানীর দুই অংশে কাজ করছে ডিপিডিসি ও ডেসকো। কিন্তু মূল সমস্যা তৈরি করে রাখা হয়েছে আরইবি, পিডিবি ও ওজোপাডিকোর মধ্যে। তবুও নানা অজুহাত দেখিয়ে সমস্যা জিইয়ে রাখা হয়েছে।