মন্ত্রীকেই মিথ্যা তথ্য, গ্রাহকরা কী সেবা পান- প্রশ্ন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর
মিথ্যা দিয়ে শুরু হলো ডিপিডিসি কল সেন্টার। তাও আবার বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর কাছে। আর এতে গ্রাহকরা কেমন সেবা পাচ্ছেন তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন স্বয়ং প্রতিমন্ত্রী।
স্বয়ং বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীই যথাযথ সেবা পেলেন না বিদ্যুতের। তাকে দেয়া হলো মিথ্যা তথ্য। এতে অসন্তোষ তিনি।
বৃহষ্পতিবার গ্রাহককে মানসম্মত সেবা দিতে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি ( ডিপিডিসি) কল সেন্টার চালু করেছে। রাজধানীর বিদ্যুৎ ভবনের বিজয় হলে এই সেন্টার উদ্বোধন করা হয়। যার নম্বর ১৬১১৬। প্রতিমন্ত্রী এর উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান থেকে প্রতিমন্ত্রী কল সেন্টারে ফোন করে সন্তষজনক জবাব পাননি। পরে তিনি তার নিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন। অতীতে তাকে মিথ্যা তথ্য দেয়া হয়েছে বলে জানান।
মন্ত্রী হয়েই যদি ঝামেলা পোহাতে হয় তাহলে গ্রাহকরা কী সেবা পাবেন? একটি কল সেন্টারের উদ্বোধন করতে গিয়ে এমন প্রশ্ন স্বয়ং বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী। বিদ্যুৎ গ্রাহকদের সমস্যা সমাধানে তাই এক ছয় এক এক ছয় কল সেন্টারকে আরো দায়িত্বশীল হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
নসরুল হামিদ বলেন, মঙ্গলবার সচিবালয়ের নিজ কক্ষ থেকে ডিপিডিসির নতুন কল সেন্টারে ফোন দিয়েছিলাম। আব্দুল জলিল তালুকদার নামে একজন ফোন ধরেন। শুরুতে আমার কাছে গ্রাহক নম্বর ও এলাকার কোড জানতে চান। আমি বলি, এসব আমার মনে নেই। তারপর বলি, ফতুল্লা পোস্ট অফিসের গলিতে বিদ্যুৎ নেই। সঙ্গে সঙ্গেই কল সেন্টার থেকে জানানো হয়, ফতুল্লার কমপ্লেইন সুপারভাইজার মোবারক হোসেন জানিয়েছেন, সেখানে তার ছিঁড়ে গিয়েছে, কিছুক্ষণের মধ্যেই বিদ্যুৎ চলে আসবে। এরপর আমি ফতুল্লার ডিপিডিসি অভিযোগ কেন্দ্রে ফোন করে জানতে পারি সেখান মোবারক হোসেন নামের কেউ কাজ করেন না। আরও জানানো হয়, ফতুল্লায় তার ছেঁড়ার কোনো ঘটনা ঘটেনি।
নসরুল হামিদ আরও বলেন, বুধবার আমার একান্ত কর্মকর্তা সচিবালয় থেকে আবার ডিপিডিসির কল সেন্টারে ফোন দেন। ফোন দেয়ার সময় পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসেনও উপস্থিত ছিলেন। পিএস কল সেন্টারের প্রতিনিধিকে বলেন, তিনি চকবাজার থেকে বলছেন, সেখানে বিদ্যুৎ নেই। তখন কল সেন্টার থেকে বলা হয়, সেখানে গ্রিড মাত্র ফেল করেছে। কিছু সময়ের মধ্যেই বিদ্যুৎ চলে আসবে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, খোঁজ নিয়ে জেনেছি তখন চকবাজারে বিদ্যুৎ ছিল।
এমনকি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের ভিডিও কনফারেন্সেও একই ধরনের অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হন নসরুল হামিদ। ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ভিডিও কনফারেন্সে কল সেন্টারে ফোন দিয়ে তা প্রতিমন্ত্রীকে ধরিয়ে দেন। এ সময় খুশবু নামের একজন কলসেন্টার প্রতিনিধি ফোন ধরলে প্রতিমন্ত্রী তাকে বলেন, শাহবাগে বিদ্যুৎ নেই। কল সেন্টার থেকে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে বলা হয়। এরপর অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবাই ভিডিওতে খুশবুকে অকারণে সময় ব্যয় করতে দেখেন। কিছুক্ষণ পর খুশব প্রতিমন্ত্রীকে জানান, তিনি কলটি সংশ্লিষ্ট এলাকায় হস্তান্তর করছেন। সেখানে কথা বলতে পারেন। এর দুই তিন সেকেন্ড পরেই খুশবু প্রতিমন্ত্রীকে বলেন, শাহবাগে দ্রুত বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হবে। এরপর নসরুল হামিদ কলটি কেটে দিয়ে উপস্থিত দর্শকদের উদ্দেশে বলেন, ‘এই হচ্ছে কল সেন্টারের অবস্থা!’ এ সময় হলরুমে হাসির রোল পড়ে যায়। প্রতিমন্ত্রীও বিদ্রুপের হাসি দিয়ে বিদায় নেন।
এর আগে অনুষ্ঠানের শুরুতেই নসরুল হামিদ বলেন, ‘কলসেন্টারে ফোন করলে গ্রাহক নম্বর ও এলাকার কোড জানতে চাওয়া হয়। এটা ক’জনে মনে রাখতে পারে?
প্রতিমন্ত্রী ডিপিডিসির কমকর্তা কর্মচারীদের প্রশ্ন করেন তারা সকলে বিদ্যুৎ গ্রাহক কি না? সবাই হাত তুলে হ্যাঁ সূচক জবাব দেন। এরপর তিনি তাদের কাছে গ্রাহক নম্বর আর এলাকার কোড জানতে চান। এ সময় একজনও তা বলতে পারেনি। তখন প্রতিমন্ত্রী কলসেন্টারকে আরো গ্রাহকবান্ধব করার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, পরীক্ষামূলক শুরু হয়েছে বলে কিছু কিছু ভুল ত্রুটি থাকবে। নিরুৎসাহিত করছি না। তবে স্মার্ট সেবা দিতে স্মার্ট জনবল দরকার। এ সময় তিনি সব বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিকে কল সেন্টার স্থাপনের উদ্যোগ নিতে বলেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, গ্রাহক যেন অনায়াসে বিদ্যুৎ সেবা নিতে পারে সেজন্য একটি কেন্দ্রীয় কলসেন্টার দরকার।
এখন থেকে ১৬১১৬ নম্বরে ফোন করলেই গ্রাহকেরা নানান ধরনের বিদ্যুৎ সেবা পাবেন। তারা এই নম্বরে ফোন করে অভিযোগ করার পাশাপাশি নতুন সংযোগ, বৈদ্যুতিক ত্রুটি ভোল্টেজ আপ-ডাউন, মিটার সংক্রান্ত সমস্যা, প্রি-পেইড মিটার রিচার্জ জটিলতার বিষয়ে জানতে পারবেন।
বক্তৃতা করেন ডিপিডিসির পরিচালনা পরিষদের চেয়ারম্যান ও বিদ্যুৎ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ শফিকউল্লাহ, পিডিবির চেয়ারম্যান প্রকৌশলী খালেদ মাহমুদ ও ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী বিকাশ দেওয়ান।