মাগুরছড়া বিস্ফোরণ: দেড় যুগেও তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ হয়নি
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের মাগুরছড়া গ্যাসকূপে বিস্ফোরণে দেড় যুগ পরও তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ হয়নি। পরিবেশ ও গ্যাস বাবদ কোনো ক্ষতিপূরণ পাওয়া যায়নি। ক্ষতিগ্রস্তরা আংশিক ক্ষতিপূরণ পেলেও তাদের দাবির বিষয়টি মিমাংসিত হয়নি।
১৯৯৭ সালের ১৪ জুন রাত ১টা ৪৫ মিনিটে এ বিস্ফোরণ ঘটে।
বিস্ফোরণে পরিত্যক্ত এলাকার উত্তর টিলায় সবুজায়ন করা হয়েছে। বিস্ফোরণ হওয়া মূল কূপটি এখনো পুকুরের মতো বড় গর্ত হয়ে আছে। চারদিকে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে নিরাপত্তা বেষ্টনি তৈরি করা হয়েছে।
মাগুরছড়া বিস্ফোরণে ৬৩ প্রজাতির পশু-পাখি ধ্বংস হয় বলে পরিবশেবাদিরা দাবি করেছে। মোট ক্ষয়ক্ষতি ধরা হয় ১৫ হাজার কোটি টাকা। ক্ষয়ক্ষতির কিছু শোধ করলেও বন বিভাগ ও গ্যাসের জন্য কোনো ক্ষতিপূরণ পাওয়া যায়নি। দীর্ঘ ১৮ বছরেও ক্ষতিগ্রস্তদের দাবি করা ক্ষতিপূরণের বিষয়টি এখনো অমীমাংসিত।
মৌলভীবাজার-১ গ্যাসকূপ (১৪ নং ব্লক) খননের সময় ৮৫০ মিটার গভীরে যেতেই বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণে প্রায় ৫০০ ফুট উচ্চতায় লাফিয়ে উঠা আগুনের লেলিহান শিখায় লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছিল বিস্তীর্ণ এলাকা। আগুনের শিখায় গ্যাসফিল্ড সংলগ্ন লাউয়াছড়া রিজার্ভ ফরেস্ট, মাগুরছড়া খাসিয়াপুঞ্জি, জীববৈচিত্র্য, বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন, ফুলবাড়ী চা বাগান, সিলেট-ঢাকা ও সিলেট- চট্টগ্রাম রেলপথ এবং কমলগঞ্জ-শ্রীমঙ্গল সড়কে ব্যাপক ক্ষতি হয়।
বিস্ফোরণে শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ ১৫ কিলোমিটার (৩৩ হাজার কেভি) বৈদ্যুতিক লাইন পুড়ে যায়। ৬৯৫ হেক্টর বনাঞ্চলের গাছ, পরিবেশ ও জীববৈচিত্রের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এছাড়া ২৪৫ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উবে যায়। যার বাজার মূল্য ৫০ কোটি ডলার।
দুই বছর পর ফুলবাড়ি চা বাগান, মাগুরছড়া খাসিয়া পুঞ্জির বাড়ি-ঘর, পান জুম এলাকার ক্ষয়ক্ষতি বাবদ আংশিক টাকা দেয় ইউনোকল। এছাড়া দুর্ঘটনাস্থলের কাছাকাছি কমলগঞ্জ শ্রীমঙ্গল সড়কের পাশে সামাজিক বনায়নের জন্য তিনজনকে ১০ লাখ টাকা ক্ষতি দেয়া হয়। দীর্ঘ ৬ মাস কমলগঞ্জ শ্রীমঙ্গল সড়ক যোগাযোগ বন্ধ থাকার কারণে বাস মালিক সমিতিকে ২৫ লাখ টাকা দেয়া হয়। এছাড়াও বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন সময়ে কিছু ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়েছে। কিন্তু পরিবেশ ও গ্যাস বাবদ কোনো ক্ষতিপূরণ এখনও পাওয়া যায়নি।
দুর্ঘটনার পর তৎকালীন সরকারের খনিজ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মাহফুজুল ইসলামকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। তদন্ত কমিটি ১৯৯৭ সালের ৩০ জুলাই মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন পেশ করে। তাদের প্রতিবেদন অনুযায়ী অক্সিডেন্টালের দায়িত্বহীনতাকেই দায়ি করা হয় বলে সংশ্লিষ্টরা জানায়।
এদিকে পরিবেশ মন্ত্রণালয় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ৬০৯ কোটি টাকা নিরূপণ করে মার্কিন কোম্পানি অক্সিডেন্টালের কাছে দাবি জানায়।
সিলেট বিভাগীয় বনকর্মকর্তা (বন্যপ্রাণী) মাহবুবুর রহমান বলেন, বনের ১৭৭ কোটি টাকার ক্ষতি নিরূপণ করে দেয়া হলে এ পর্যন্ত কিছুই পাওয়া যায়নি।
মাগুরছড়ার গ্যাস সম্পদ ও পরিবেশ ধ্বংসের ক্ষতিপূরণ আদায় জাতীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আমিরুজ্জামান বলেন, মাগুরছড়া ক্ষতিপূরণ আদায়ে সরকার ব্যর্থ হয়েছে।