রমজানে সব বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু রাখার উদ্যোগ

বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়লেও সংকট পিছু ছাড়েনি। একদিকে গরম, অন্যদিকে রমজানে রাতে তারাবি, সেহরি। ফলে প্রায় ২৪ ঘণ্টায় টানা সমান হারে বিদ্যুতের চাহিদা থাকবে। এজন্যই সংকট সামাল দেওয়া নিয়ে চিন্তিত কর্তৃপক্ষ। আর তাই সবার কাছে কর্তৃপক্ষের অনুরোধ, যেন এই সময় বিদ্যুৎ ব্যবহারে একটু বেশি সাশ্রয়ী হন সবাই।
গভীর রাত থেকে বিকেল পর্যন্ত সাধারণত বিদ্যুতের চাহিদা কম থাকে। সন্ধ্যায় চাহিদা থাকে সবচেয়ে বেশি। এজন্য জ্বালানি খরচ বাঁচানোসহ নানা কারণে শুধু সন্ধ্যার সময় বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়; অন্য সময় কম। দু’একদিন পরই শুরু হবে রমজান। রমজানে মধ্যরাতে সেহরির জন্য বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে যাবে, কিন্তু উৎপাদন খুব বেশি বাড়বে না। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যুৎ বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, চেষ্টা করছি সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদনের। সব বিদ্যুৎ কেন্দ্র এসময় যাতে চালু থাকে সে ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আশা করি, ইফতার, তারাবি ও সেহরির সময় বিদ্যুৎ নিয়ে মানুষের সমস্যা হবে না। তিনি বলেন, চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। তবে বিতরণ ব্যবস্থার ত্রুটির কারণে কোথাও কোথাও বিদ্যুৎ বিভ্রাট দেখা দিতে পারে।
আজান, ইফতার, তারাবি, সেহরির সময় যেন কোথাও লোডশেডিং না হয়, সেজন্য উৎপাদন ও বিতরণের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের সতর্ক থাকার জন্য বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। যদি কোনো কর্মকর্তার অবহেলার কারণে বিদ্যুৎ বিভ্রাট বা সরবরাহে সমস্যা দেখা দেয়, তবে তার বা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে ।
সূত্র জানায়, বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে তেলচালিত সব কেন্দ্র চালু রাখা হবে। এ জন্য বাড়িয়ে দেওয়া হবে খরচ। বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাস সরবরাহও বাড়ানো হবে। তবে বেশ কিছু বিদ্যুৎ কেন্দ্র মেরামতের জন্য বন্ধ আছে। জ্বালানির অভাবে বন্ধ আছে কিছু কেন্দ্র। আবার অনেক কেন্দ্র আছে, যা থেকে এখনই উৎপাদন সম্ভব নয়।
পিডিবি সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে ৯ হাজার ৭২৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা থাকলেও কারিগরি ত্রুটি ও জ্বালানি সংকটের কারণে গড়ে ৭ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। বিতরণ লোকসান বাদ দিয়ে সরবরাহ করা হচ্ছে ৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। এদিকে গ্যাস সংকটের কারণে ৭৭৩ মেগাওয়াট এবং ত্রুটির কারণে প্রায় দুই হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কম হচ্ছে। সূত্র জানায়, এবারও রমজানে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে শিল্প কারখানায় গ্যাস সরবরাহ বিকেল ৫টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে। ১৫ রমজান পর্যন্ত রাত ৮টার পর দোকান বন্ধ রাখা হবে। বিপণি বিতানে আলোকসজ্জা না করা এবং শীতাতপ যন্ত্র না চালানোর জন্য দোকান মালিকদের অনুরোধ করা হবে।

এছাড়া জোনভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহ কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে দল গঠন, গ্রিড সাবস্টেশন এবং নিয়ন্ত্রণ কক্ষগুলো সর্বোচ্চ চাহিদার সময় জ্যেষ্ঠ প্রকৌশলীদের দায়িত্বে রাখা, কোনো ট্রান্সফরমার নষ্ট হলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রতিস্থাপন, সব বিতরণ কোম্পানিকে আগেভাগেই প্রয়োজনীয় ট্রান্সফরমারসহ যন্ত্রপাতি সংরক্ষণ করতে বলা হয়েছে। একই এলাকায় বারবার লোডশেডিং না করা বা লোডশেডিং করতে হলেও তা আগে থেকেই জনগণকে অবহিত করার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। এসব সিদ্ধান্ত প্রতি বছর নেওয়া হলেও তা পুরোপুরি বাস্তবায়ন কখনোই হয় না।