রামপাল চুক্তি বাতিল কর: পরিবেশবিদদের দাবি

পরিবেশ ও বন সংরক্ষণের ইতিহাসে ১২ই জুলাই কলঙ্কজনক দিন হিসেবে বিবেচিত হবে। ইউনেস্কোর চূড়ান্ত প্রতিবেদন না দেখেই রামপালে কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের চুক্তি খুবই উদ্বেগের। এ চুক্তি বাতিল করতে হবে। বিদ্যুৎকেন্দ্রর স্থান পরিবর্তন করতে হবে। রামপাল চুক্তি সুন্দরবন ধ্বংসের প্রাতিষ্ঠানিক ও চূড়ান্ত মাইলফলক।

বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবে সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটির এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের পরিবেশবাদিরা একথা বলেন। মঙ্গলবার রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের প্রকৌশল ও ক্রয় চুক্তি হয়। এই চুক্তির প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করে তারা চুক্তি বাতিল করার দাবি জানান। তারা চুক্তির দিনকে কালো দিবস হিসেবে ঘোষনা করেন।
সংবাদ সম্মেলনে চারটি দাবি করা হয়। এগুলো হচ্ছে-রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুক্তি বাতিল, বিদ্যুৎকেন্দ্রটির কাজ অবিলম্বে বন্ধ ও নিরাপদ দূরত্বে স্থানান্তর, সুন্দরবনের পাশে প্রস্তাবিত ওরিয়নসহ অন্য সুন্দরবনের জন্য ক্ষতিকর সব অবকাঠামো ও কার্যক্রম বন্ধ করা এবং সুন্দরবন রক্ষায় বিজ্ঞানসম্মত পরিকল্পনা তৈরী ও তার বাস্তবায়ন করতে হবে।
সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক সুলতানা কামাল বলেন, রামপালে বিদ্যুৎ কেন্দ্র করা যাবে না। দেশের স্বার্থে এই চুক্তি বাতিল করতে হবে। দেশ-বিদেশে চরম উদ্বেগ প্রকাশের পরও সুন্দরবনের পরিবেশকে হুমকির মধ্যে রেখে এ বিদ্যুৎকেন্দ্র করা হচ্ছে। তিনি বলেন, সুন্দরবনের মাত্র চার কিলোমিটারের মধ্যে কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মিত হলে তার গ্যাস ও রাসায়নিক বর্জ্যে বনের সব মূল্যবান গাছ, তৃণলতা-গুল্ম, পশুপাখি, জলজ প্রাণিসহ অন্য জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হবে। দুই থেকে তিন কোটি মানুষের জীবিকা নষ্ট হবে। জলবাযু পরিবর্তনজনিত সংকট, বিশেষ করে ক্রমবর্ধমান সাইক্লোনজনিত ধ্বংসলীলার চারণভূমিতে পরিণত হবে এ বন।
সুলতানা কামাল বলেন, সরকার প্রায় ১৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা অর্জন করেছে। আরও ১০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের কাজ চলছে। তাই মাত্র ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের জন্য সুন্দরবন নষ্ট করার কোনও প্রয়োজন নেই। এটা যুক্তিসঙ্গতও নয়। তিনি বলেন, ইউনেস্কোর চুড়ান্ত প্রতিবেদন এখনো প্রকাশিত হয়নি। এরই মধ্যে বাংলাদেশ ও ভারত জাতিসংঘের মতামতের তোয়াক্কা না করেই মঙ্গলবার চুক্তিটি করেছেন। এটা উদ্বেগের বিষয়।

sultana kamal sundorbon
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, রামপাল নিয়ে পরিবেশগত যে সমীক্ষা হয়েছে তা বিজ্ঞানসম্মত নয়। তাই আন্তর্জাতিক কোনও বিশেষজ্ঞ দিয়ে পরিবেশগত দিকটি দেখা যেতে পারে। তারা যদি বলে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের ফলে সুন্দরবনের কোনও ক্ষতি হবে না তাহলে তা মানতে রাজি।
সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এম এম আকাশ, কমিটির সদস্য খুশি কবির, শরীফ জামিল বক্তব্য রাখেন।
এদিকে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্র বাতিলের দাবি জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে। সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবু জাফর এবং বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, সরকার জেনে শুনে সুন্দরবন ধ্বংসের সিদ্ধান্ত নিলে, জনগণ তা মেনে নেবে না। আন্দোলনের মাধ্যমে এই অপচুক্তি বাতিল করা হবে।