রামপাল নিয়ে কর্তৃপক্ষের জবাব অর্ধসত্য ও বিভ্রান্তিকর: সুলতানা কামাল

সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক সুলতানা কামাল বলেছেন, রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্পের কারণে সুন্দরবনের ক্ষতি হবে, এটা নিশ্চিত জেনে আমরা সুন্দরবন রক্ষার জন্য আন্দোলন করছি। এ কেন্দ্র নির্মাণের কারণে সুন্দরবন ধ্বংস হয়ে গেলে ইতিহাসের কাছে দায়ী থাকতে হবে আমাদের।
তিনি জানান, তিনি যে ১০টি প্রশ্ন করেছেন এবং রামপাল প্রকল্প কর্তৃপক্ষ যে উত্তর দিয়েছে, তা অর্ধসত্য ও ভুল। অপ্রাসঙ্গিক, বিভ্রান্তিকর ও পরিবেশ সমীক্ষা প্রতিবেদনের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ। এসবের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার যে জবাব দিয়েছে, তা অবৈজ্ঞানিক ও অপর্যাপ্ততাভিত্তিক।
মঙ্গলবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে বিলিয়া মিলনায়তনে সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটির পক্ষ থেকে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সভাপতির বক্তব্যে সুলতানা কামাল এসব কথা বলেন। ‘রামপাল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র বিষয়ে দশটি বিভ্রান্তিমূলক অপপ্রচার ও বিজ্ঞানভিত্তিক জবাব’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধূরী, তেল গ্যাস বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব আনু মুহম্মদ, জাতীয় কমিটির সদস্য শরীফ জামিল প্রমুখ।

bapa rampal

সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন সুলতানা কামাল। তিনি বলেন, একাধিকবার সরকারের ডাকে তাদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। দুঃখজনক অভিজ্ঞতা হচ্ছে, যতবারই বিজ্ঞানভিত্তিক তথ্য-উপাত্ত পেয়ে তাদের সামনে উপস্থাপন করেছি, তাদের অবস্থানগত সুবিধা যেহেতু রয়েছে, শেষ কথাটি তাদেরই থেকে গেছে। এখন পর্যন্ত যে বিষয়গুলো নিয়ে আমরা প্রশ্ন তুলছি, সেগুলোর কোনো সদুত্তরই কিন্তু আমাদের কাছে সেভাবে আসেনি।
সুন্দরবন নিয়ে আন্দোলনকারীদের ‘মায়ের চেয়ে মাসির দরদ বেশি’ এমন মন্তব্য করার বিষয়ে সুলতানা কামাল বলেন, এই ধরনের কথা সংবিধান বিরোধী। কারণ, সংবিধানে বাংলাদেশের সবার সমান অধিকারের কথা বলা হয়েছে। সুন্দরবন বাংলাদেশের সব মানুষের সম্পত্তি। তাই এ নিয়ে কথা বলার অধিকার আমাদের আছে।
রাশেদা কে চৌধূরী বলেন, রামপাল প্রকল্পে সুন্দরবনের ক্ষতি বিষয়ে আমরা বিভিন্ন সময়ে তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরেছি। কিন্তু আমাদের প্রশ্ন নিয়ে সরকারের তো কোনো আলোচনা দেখিনি। এক প্রবাসী প্রকৌশলী প্রশ্ন তুললেন, রামপাল কর্তৃপক্ষ যে জবাব দিয়েছে তাতে সরকার থেকে সন্তুষ্টি প্রকাশ করা হলো। এই পুরো ঘটনাটি আমার কাছে সাজানো নাটক বলে মনে হয়েছে।
আনু মুহম্মদ বলেন, সবাই রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থগিত রেখে নতুনভাবে স্বাধীন বিশেষজ্ঞ ও প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে ইআইএ (পরিবেশের সমীক্ষা) করানোর পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু সরকার তা না শুনে এক সপ্তাহের মাথায় চুক্তি করে। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশ যে বড় ধরণের হুমকির মুখে পড়বে এবং পড়ছে, তা সর্বজন স্বীকৃত। সেই জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি মোকাবেলার জন্য বাংলাদেশের মানুষের সবচেয়ে বড় আশ্রয় এই সুন্দরবন। ‘পয়সা খরচ করে ঋণগ্রস্ত হয়ে জনমতের বিরুদ্ধে গিয়ে মানুষের প্রতিরোধকে দমন-পীড়ন করে সরকার সুন্দরবন ধ্বংস করবে-এটা তো হতে পারে না কখনো।