রামপালের উদ্যোগ বন্ধের দাবিতে ‘সুন্দরবন রক্ষা অভিযাত্রা’

রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ পরিবেশের ক্ষতি করে এমন বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ বন্ধ করার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশের কমিউনিষ্ট পার্টি (সিপিবি) ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ। এজন্য ১৩ থেকে ১৭ অক্টোবর ‘সুন্দরবন রক্ষা অভিযাত্রা’ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। ১৩ অক্টোবর বিকেল ৩টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ শেষে এই অভিযাত্রা শুরু হবে। ১৭ অক্টোবর বিকেল ৩টায় বাগেরহাটে সমাপনী সমাবেশ করা হবে।
বুধবার রাজধানির মুক্তিভবনের প্রগতি মিলনায়তনে সিপিবি ও বাসদ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন সিপিবি’র সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, বাসদ-এর সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান, সিপিবি’র কেন্দ্রীয় নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স। লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সিপিবি’র সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবু জাফর আহমেদ। সংবাদ সম্মেলনে বাসদ-এর বজলুর রশীদ ফিরোজ, রাজেকুজ্জামান রতন, জাহিদুল হক মিলু, সিপিবি’র সাজ্জাদ জহির চন্দন, আহসান হাবিব লাবলু, অনিরুদ্ধ দাশ অঞ্জন, বিপ্লব চাকী, রাগিব আহসান মুন্নাসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, দেশের স্বার্থবিরোধী ও পরিবেশ বিধ্বংসী সুন্দরবনের কাছে বিদ্যুৎ প্রকল্প এবং অবৈধ স্থাপনা বন্ধ করতে হবে। তিনি এসব প্রকল্পের লাভ ক্ষতি বিবেচনা করার জন্য প্রধানমন্ত্রী বা তার প্রতিনিধিদের উম্মুক্ত বিতর্কে আসার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী পরিবেশ রক্ষায় পুরস্কার পেয়েছেন, তিনি সুন্দরবনের কাছে কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিল করে সুন্দরবন রক্ষায় দায়িত্বশীল আচরণ করবেন আশা করি।
খালেকুজ্জামান বলেন, ওই অঞ্চলে জমি অধিগ্রহণ ও মাটি ভরাটসহ অন্যান্য কাজে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। কয়লা পরিবহনে নদীতে জাহাজ চলাচলে ও রাত্রে লাইটের কারণে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র ধ্বংসের মুখে পড়বে। লিখিত বক্তব্যে সৈয়দ আবু জাফর আহমেদ বলেন, বিদ্যুৎ চাই। তবে তা সুন্দরবন ধ্বংসের বিনিময়ে নয়। বিদ্যুৎ উৎপাদনের অনেক বিকল্প আছে। সেসব পথ বিবেচনা না করে সুন্দরবনের পাশে ১৪ কিলোমিটারের মধ্যে ভারতের এনটিপিসি’র সাথে যৌথ উদ্যোগে রামপাল কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ প্রকল্প করা হচ্ছে। ভারতে ইআইএ গাইডলাইন ২০১০ অনুযায়ী বনাঞ্চলের ২৫ কিলোমিটারের মধ্যে কোন বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করা যায় না। ইতিমধ্যে কর্নাটক, মধ্যপ্রদেশ, তামিলনাড়ূতে তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্র বাতিল করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির হিসাব অনুযায়ী, রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে অতিরিক্ত দামে বিদ্যুৎ কিনতে গিয়ে ৩০ বছরে বাংলাদেশের ক্ষতি হবে এক লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকা। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে পরিবেশগত ক্ষতি হবে। পাঁচ লাখ মানুষের জীবিকা আর কোটি মানুষের আশ্রয় বাসস্থান ধ্বংস হবে।
১৩-১৭ অক্টোবর সুন্দরবন রক্ষা অভিযাত্রা
সুন্দরবন রক্ষা অভিযাত্রায় আগামী ১৩ অক্টোবর মঙ্গলবার বিকেল ৩টায় ঢাকা জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ শেষে যাত্রা। সন্ধ্যায় সাভার বাজার বাসষ্ট্যান্ডে সমাবেশ। ১৪ অক্টোবর বুধবার সকালে জাজাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যাত্রা শুরু। সকাল ১১টায় মানিকগঞ্জ কোর্ট চত্বরে সমাবেশ। বিকেল ৩টায় গোয়ালন্দ মোড়ে এবং বিকেল ৪টায় ফরিদপুরে জনসভা। ১৫ অক্টোবর’১৫ বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় ফরিদপুর থেকে যাত্রা। সকাল ১০টায় মধুখালীতে পথসভা, দুপুর ১২টায় মাগুরায়, বিকেল ৩টায় ঝিনেদায় এবং বিকেল ৫টায় যশোরে জনসভা। ১৬ অক্টোবর শুক্রবার সকাল ৯টায় যশোর থেকে যাত্রা শুরু। সকাল ১০টায় নওয়াপাড়ায়, ২টায় ফুলতলায়, দুপুর ১২টায় দৌলতপুরে পথসভা। বিকেল ৪টায় খুলনা হাদিস পার্কে জনসভা। ১৭ অক্টোবর শনিবার সকাল ১০টায় খুলনা থেকে যাত্রা শুরু। সকাল ১১টায় কাটাখালিতে পথসভা এবং বিকেল ৩টায় বাগেরহাট/ দিগরাজে সমাপনী সমাবেশ করা হবে।