রাশিয়ার তেলে ঘনত্ব বেশি, শোধন সম্ভব নয়: ইআরএলের প্রতিবেদন

নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাশিয়ার অপরিশোধিত জ্বালানি তেল দেশে শোধন সম্ভব নয়। ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড (ইআরএল) নমুনা পরীক্ষা করে এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে। এবিষয়ে গঠিত ইআরএল কারিগরি কমিটি তাদের প্রতিবেদন বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনে (বিপিসি) জমা দিয়েছে।
বিপিসি’র চেয়ারম্যান এ বি এম আজাদ বলেন, বর্তমান অবকাঠামো ও যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে রাশিয়ার জ্বালানি তেল শোধন করা সম্ভব নয়। কারিগরি কমিটি প্রতিবেদনে এমনই জানিয়েছে। নমুনা সরবরাহকারীকে বিষয়টি জানানো হবে। তিনি বলেন, কেমিকেল পর্যালোচনা করে কিছু ফাইন্ডিংস এসেছে। ইআরএল এর যে মেশিনারি, তা রাশিয়া থেকে পাঠানো অশোধিত তেল শোধনের ‘উপযুক্ত না’ বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। তিনি বলেন, রাশিয়ান অশোধিত তেল খারাপ তা না। এটা আমাদের মেশিনের উপযুক্ত না। সে দেশের জ্বালানির বিশাল জগত। পাঠানো নমুনা সেখানকার একটা জায়গার মাত্র। এই নমুনা আমরা নিজ থেকে আনিনি। রাশিয়ান প্রতিষ্ঠান নিজ থেকে পাঠিয়ে পরীক্ষা করতে বলেছিল।
মে মাসে রাশিয়া থেকে অপেক্ষাকৃত কম দামে অপরিশোধিত তেল কেনার প্রস্তাব পায় বাংলাদেশ। তখনই এটা শোধন সম্ভব নয় বলে জানানো হয়েছিল। পরে রাশিয়া থেকে আগস্টের শেষ দিকে ৫০ লিটার তেল পাঠানো হয়েছিল ল্যাবে পরীক্ষার জন্য। এখন ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করে একই ফল পাওয়া গেল।
১লা সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামে ইআরএল-এ পৌঁছায় রাশিয়ান তেলের নমুনা। এই তেল পরীক্ষার জন্য ইস্টার্ন রিফাইনারির মহাব্যবস্থাপক (অপারেশন অ্যান্ড প্ল্যানিং) রায়হান আহম্মদকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের কমিটি করা হয়।
ইস্টার্ন রিফাইনারি সূত্রে জানা যায়, ল্যাবে ১৪টা আইটেম পরীক্ষা করা হয়েছে। পুরাতন মেশিন হওয়ায় শোধন সম্ভব নয়। প্রতিবেদনে এটা জানানো হয়েছে। রাশিয়ান অপরিশোধিত তেলের যে বৈশিষ্ট্য তা শোধনের মতো যন্ত্রপাতি আমাদের নেই।
অপরিশোধিত তেলের ঘনত্বের মাত্রা বোঝানো হয় এপিআই (আমেরিকান পেট্রোলিয়াম ইন্সটিটিউট) গ্র্যাভিটি দিয়ে। এপিআই গ্র্যাভিটি যত বেশি হবে, ওই তেল তত হালকা হবে। এই মান ১০ এর বেশি হলে তেল পানিতে ভাসবে। আর ১০ এর কম হলে তা পানির চেয়ে ভারী হওয়ায় তলিয়ে যাবে।
ম্যাকেঞ্জি অ্যান্ড কোম্পানির এনার্জি ইনসাইটে দেখা যায়, রাশিয়ার পাঁচ ধরনের অপরিশোধিত তেলের মধ্যে ইএসপিও এর এপিআই গ্র্যাভিটি ৩৬, সাখালিন ব্লেন্ডের ৪৪ দশমিক ৭, সাইবেরিয়ান লাইটের ৩৪ দশমিক ৮, সোকল এর ৩৫ দশমিক ৬ এবং ইউরালস এর ৩০ দশমিক ৬। আর অ্যারাবিয়ান মারবানের এপিআই গ্র্যাভিটি ৪০ দশমিক ৪।
রাশিয়ান অপরিশোধিত তেলে ডিজেল ও কেরোসিন মিলিয়ে আছে ৩৪ শতাংশ। বর্তমানে যেসব অপরিশোধিত তেল আমদানি করা হয় তাতে ডিজেলের পরিমাণ ৩৯ ও ৪২ শতাংশ। অপরিশোধিত তেলে সাধারণত তিনটি স্থর থাকে। আমরা সাধারণত ওপরের দুটি স্থর বেশি ব্যবহার করি। ওই দুটি স্তর দিয়ে কাজ হয়ে যায়। কিন্তু রাশিয়ান তেল বেশি ভারী। অর্ধেক বা তার বেশি নিচের স্তরে পড়ে থাকে। নিচের স্তর ব্যবহার করা কঠিন। প্রক্রিয়াও দীর্ঘ।
আমরা আমদানি করি সৌদি আরব থেকে এএলসি (অ্যারাবিয়ান লাইট ক্রড) ও সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে মারবার। এগুলো হালকা। আর রাশিয়ানটা গাঢ়। ঘনত্বে সমস্যা। রাশিয়ারটার ঘনত্ব বেশি। এছাড়া রাশিয়ান তেলের মধ্যে ডিজেল ও ওপরের গ্যাসোলিন কম। এজন্য ইআরএলে সমন্বয় হচ্ছে না।
ইস্টার্ন রিফাইনারিতে বছরে ১৫ লাখ মেট্রিক টন তেল পরিশোধনের সক্ষমতা আছে। এ থেকে বছরে ৬ লাখ টন ডিজেল পাওয়া যায়।