রূপপুর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখবে: বিজ্ঞান সচিব

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সচিব আনোয়ার হোসেন

রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রর কাজ এগিয়ে চলেছে। এই কেন্দ্র দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে বলে মনে করেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সচিব আনোয়ার হোসেন
সম্প্রতি এবিষয়ে বিস্তারিত আলাপ হয় তার সাথে। তারই অংশ বিশেষ তুলে ধরা হলো।
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রফিকুল বাসার।

রাশিয়ার সহযোগিতা নিয়ে বাংলাদেশ রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করছে। বাংলাদেশ যে উন্নয়নশীল দেশ হলো এই উন্নয়নের অর্থনীতিতে পরমাণু বিদ্যুৎ কতটা ভূমিকা রাখবে বলে আপনি মনে করেন?
বিদ্যুৎ যে কোন অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি। দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ অপরিহার্য। বাংলাদেশ অতি সম্প্রতি স্বল্পন্নোত দেশ থেকে যে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছে এর পেছনে দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা পাঁচ হাজার মেগাওয়াট হতে প্রায় ১৬ হাজার ৫০০ মেগাওয়াটে বৃদ্ধি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। রাশান ফেডারেশনের সহযোগিতায় বাংলাদেশ প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র অর্থাৎ রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করছে। এ কেন্দ্র হতে ২০২৩ সালে ১২০০ এবং ২০২৪ সালে আরো ১২০০ মেগাওয়াট মোট ২৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রীডে যুক্ত হবে যা দেশের বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা যায়। এতে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন হবে।
বর্তমানে বাংলাদেশ ভিশন ২০২১, এসডিজি ২০৩০ এবং ভিশন ২০৪১ এর লক্ষ্যমাত্রাকে সামনে রেখে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধির পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। সে প্রেক্ষিতে সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদন লক্ষ্য ২০২১ সালে ২৪ হাজার মেগাওয়াট, ২০৩০ সালে ৪০ হাজার  মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালে ৬০ হাজার মেগাওয়াট নির্ধারণ করেছে। দেশের ক্রমবর্ধমান বিদ্যুতের চাহিদার আলোকে বর্তমান সরকার ২০১০ সালে বিদ্যুতের মহাপরিকল্পনা হালনাগাদ করে। পরবর্তীকালে ২০৪১ সালের দেশের লক্ষ্যকে অন্তর্ভুক্ত করে ২০১৬ সালে আবার বিদ্যুতের মহাপরিকল্পনা হালনাগাদ করে। যেখানে  বিদ্যুৎ উৎপাদনে একক জ্বালানি অর্থাৎ প্রাকৃতিক গ্যাসের উপর নির্ভরতা কমিয়ে বহুমুখী জ্বালানি ব্যবহারের নীতি নেয়া হয়। পারমাণবিক বিদ্যুৎ নিরাপদ, নির্ভরযোগ্য, মূল্য সাশ্রয়ী এবং পরিবেশ বান্ধব হওয়ায় বিশ্ব জ্বালানি মিশ্রণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। নির্মাণাধীন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি হবে একটি বেইজলোড বিদ্যুৎ কেন্দ্র যা ২৪ ঘন্টা চলবে। এ কেন্দ্রটি চালু হলে দেশের ক্রমবর্ধমান বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। ফলে কলকারখানা এবং অর্থনৈতিক কর্মকান্ড গতিশীল হবে। প্রত্যাশা এবং পরোক্ষভাবে প্রায় ২০ হাজার লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে। মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটবে এবং দারিদ্র বিমোচনে সহায়ক হবে। এতে জিডিপি’র প্রবৃদ্ধি বাড়বে। এভাবে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা যায়।

বাংলাদেশের মানুষের বিদ্যুৎ ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখতে পরমাণু বিদ্যুৎ কোন ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন?
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির ভিভিইআর-১২০০ শ্রেণির জেনারেশন ৩+ রিঅ্যাক্টর স্থাপন করা হচ্ছে। এ রিঅ্যাক্টরের আয়ুষ্কাল ন্যূনপক্ষে ৬০ বছর যা ৮০ বছর পর্যন্ত বাড়ানো যাবে। যেখানে জীবাশ্ম জ্বালানির বিদ্যুৎ প্ল্যান্টের আয়ুষ্কাল সর্বোচ্চ ২৫ বছর। রিঅ্যাক্টরে জ্বালানি হিসেবে ইউরেনিয়াম-২৩৫ ব্যবহার করা হবে যার মাত্র এক গ্রাম ব্যবহার করে প্রায় ২৪ হাজার কিলোওয়াট আওয়ার বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব। সমপরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে জীবাশ্ম জ্বালানির বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রায় ৩ মেট্রিক টন কয়লা প্রয়োজন হয়। তাছাড়া পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র র¶ণাবে¶ণ ও পরিচালনা খরচ যে কোন জীবাশ্ম জ্বালানির কেন্দ্রর চেয়ে অধিক সাশ্রয়ী। সুতরাং রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে উৎপাদিত বিদ্যুতের দাম সাধারণ জনগণের ক্রয় ¶মতার মধ্যে থাকবে বলে মনে করি।

বাংলাদেশে কী আরও পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র করা হবে?
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র ছাড়াও ২০৩১ সালের মধ্যে ২ দুই হাজার ৪০০ মেগাওয়াট ¶মতার পারমাণবিক বিদ্যুতের ২টি ইউনিট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ২  হাজার ৪০০ মেগাওয়াট ¶মতার পারমাণবিক বিদ্যুতের আরও ২টি ইউনিট করার পরিকল্পনা আছে।

বাংলাদেশের বিদ্যুৎ চাহিদার কতভাগ পরমাণু থেকে উৎপাদন করার পরিকল্পনা করা হয়েছে?
২০১৬ সালে হালনাগাদ করা বিদ্যুতের মহাপরিকল্পনায় বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান বিদ্যুৎ চাহিদার শতকরা ১০-১২ ভাগ পরমাণু শক্তি থেকে উৎপাদন করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।

পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিচালনায় বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা নেই। জববলও নেই। জনবল তৈরিতে প্রশি¶ণ শুরু হয়েছে বলে জানতে পেরেছি। এটা কী যথেষ্ট মনে করেন?
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা ও র¶ণাবে¶ণের জন্য বিভিন্ন ধাপে প্রায় ৩ হাজার জনবল নিয়োগ করা হবে। রাশান ঠিকাদারের সাথে স্বাক্ষরিত চুক্তির আওতায় ২০১৭ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত এক হাজার ৪২৪ জনকে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের নিরিখে বিভিন্ন মেয়াদে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। রাশান ফেডারেশনে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত উল্লিখিত জনবল কমিশনিং পর্যায় থেকে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত হবেন। অবশিষ্ট জনবলকে বাংলাদেশে পর্যায়ক্রমে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে।
দক্ষ মানব সম্পদ গড়ে তোলার জন্য মস্কো ইঞ্জিনিয়ারিং ফিজিক্স ইনস্টিটিউট (গঊচযও)- এ নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং-এ উচ্চ শিক্ষার জন্য সরকারের বিশেষ বৃত্তির আওতায় ৬০ জন শিক্ষার্থীকে রাশান ফেডারেশনে পাঠানো হয়েছে।  শিক্ষার্থীদের প্রথম ব্যাচ উচ্চ শিক্ষা শেষে সেপ্টেম্বর মাসে দেশে ফিরবে। তারা সরাসরি রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে যোগ দেবে। ২০২২ সাল পর্যন্ত এ উচ্চশিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা’র আওতায় বিভিন্ন বিষয়ে স্বল্প মেয়াদি প্রশিক্ষণ দেয়ার মাধ্যমে সহযোগিতা করে আসছে।
এছাড়াও দক্ষ জনবল তৈরির জন্য রাশান ফেডারেশনের পাশাপাশি একই টেকনোলজি ব্যবহার করে পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকেও সহযোগিতা নেয়া হচ্ছে। ভারত ইতোমধ্যে ৮৮ জন কারিগরি কর্মকর্তাকে বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। আরও ৫৫ জন কর্মকর্তা প্রশিক্ষণের জন্য ভারত গিয়েছেন। কাজেই জনবল তৈরিতে যে প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চলছে তা যথাযথ বলে মনে করি।

পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের রাসায়নিক বর্জ্য নিয়ে অনেকের চিন্তা আছে। চুক্তি অনুযায়ী রাশিয়া নিয়ে যাবে। কিন্তু তবুও কিছু ঝুঁকি এখানে আছে। সেগুলো কীভাবে প্রতিরোধ করা হয়েছে।  
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে পারমাণবিক নিরাপত্তার বিষয়ে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এই প্রকল্প দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক সকল বাধ্যবাধকতা বিবেচনা করে এবং আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণ করেই বাস্তবায়িত হচ্ছে। গত ১০০ বছরের বন্যার ইতিহাস পর্যালোচনা করে রিঅ্যাক্টর স্থান নির্বাচন করা হয়েছে। নির্মাণাধীন রিঅ্যাক্টর ৮ থেকে ৯ মাত্রার ভূমিকম্প সহনশীল হবে। জাপানের ফুকুসিমা পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে দুর্ঘটনার পর যেসব প্রতিকার ও প্রতিরোধের বিষয়গুলো উঠে এসেছে তা বিবেচনায় নিয়ে রূপপুরের রিঅ্যাক্টরের নকশা করা হয়েছে। এ রিঅ্যাক্টরে পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান থাকবে। কোনক্রমেই তেজস্ক্রিয়তা বাইরে ছড়িয়ে পড়বে না। এছাড়াও রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জ্বালানি বর্জ্য রাশান ফেডারেশনে ফেরত নেবে। এজন্য বাংলাদেশ এবং রাশান ফেডারেশনের মধ্যে গতবছর ৩০শে আগস্ট সহযোগিতা চুক্তি হয়েছে। এ চুক্তির আওতায় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বর্জ্য রাশান ফেডারেশনে ফেরত পাঠানো হবে। যেহেতু বর্জ্য জ্বালানি রাশান ফেডারেশনে ফেরৎ পাঠানো হবে, কাজেই এ কেন্দ্র থেকে তেজস্ক্রিয় বর্জ্যের কোন ঝুঁকির আশংকা নেই।

নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি পরিবেশ রক্ষার বিষয়ও তো আছে। সেটা আপনারা কতটা গুরুত্ব দিচ্ছেন?
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের ক্ষেত্রে পারমাণবিক নিরাপত্তার পাশাপাশি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার বিষয়টিও অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হচ্ছে। এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে পারমাণবিক জ্বালানি ইউরেনিয়াম-২৩৫ ব্যবহার করা হবে যা পরিবেশের জন্য ¶তিকর কার্বন, সালফার ও নাইট্রোজেন যৌগ নিঃসরণ করেনা। তাই এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি প্রতক্ষ্যভাবে হাইড্রোকার্বন যৌগ ব্যবহারের কারণে পরিবেশের ও জলবায়ুর উপর সৃষ্ট ক্ষতিকর প্রভাব প্রশমনে ভুমিকা রাখবে। এ বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে ইতোমধ্যে পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে ছাড়পত্র পাওয়া গেছে। পরিবেশ অধিদপ্তর ছাড়াও বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ এ বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে পরিবেশগত দিকগুলো নিয়ন্ত্রন করছে।

রূপপুরের কাজ কতদূর হয়েছে? নির্ধারিত সময়ে উৎপাদনে আসবে কী?
নির্ধারিত সময় অনুযায়ী রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজ এগিয়ে চলেছে। ইতোমধ্যে প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ হয়েছে এবং মূল পর্যায়ের কাজ আরম্ভ হয়েছে। আশা করা যায় নির্ধারিত সময় অর্থ্যাৎ ২০২৩ সালে এ কেন্দ্রের ১ম ইউনিট হতে ১২০০ এবং ২০২৪ সালে ২য় ইউনিট থেকে আরো ১২০০ মেগাওয়াট মোট ২৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে।

বিদ্যুৎ কেন্দ্রর সাথে সঞ্চালন লাইন, উপকেন্দ্র ইত্যাদি অবকাঠামো পরিবর্তন ঠিক মত হচ্ছে কী? এগুলো যথাসময়ে শেষ হবে?
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদিত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রীডে যুক্ত করার জন্য পাওয়ার গ্রীড কোম্পানী বাংলাদেশ লিমিটেড ট্রান্সমিশন লাইন নির্মাণের কার্যক্রম শুরু করেছে। কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ হবে বলে আশা করা যায়।

প্রতিবেশি দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশে এই কেন্দ্র করতে খরচ বেশি হচ্ছে বলে কেউ কেউ অভিযোগ করেন, এ ব্যপারে আপনি কী বলেন?
প্রতিবেশি দেশসমূহে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে যে ব্যয় হয় বাংলাদেশেও অনুরূপ ব্যয়ে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মিত হচ্ছে। নতুন দেশ হিসেবে বাংলাদেশে এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মাণ ব্যয় আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

বাংলাদেশে পরমাণু গবেষণা বাড়ানোর জন্য নতুন আরও একটা চুল্লি স্থাপন করা হচ্ছে । এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলবেন?
২০২১-এর মধ্যে সাভারস্থ পরমাণু শক্তি গবেষণা প্রতিষ্ঠানে ২০-৩০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন একটি গবেষণা চুল্লি স্থাপনের জন্য সম্ভাব্যতা যাচাইপূর্বক প্রকল্প বাস্তবায়নের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। দেশে পরমাণু শক্তি ব্যবহারে দ¶ জনশক্তি গড়ে তোলার লক্ষ্য উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ও গবেষণার জন্য এ চুল্লি স্থাপন করা হবে।

বিদ্যুৎ ছাড়াও কৃষি ও চিকিৎসায় পরমাণু ব্যবহার হচ্ছে। জনবহুল এই দেশে কৃষি বিপ্লব এনেছে বিনা। কৃষি ও চিকিৎসা সেবার অগ্রগতিতে নতুন কোন পরিকল্পনা আছে?
বিদ্যুৎ উৎপাদন ছাড়াও বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের আওতায় দেশে স্থাপিত ১৪টি ইনমাস  ও ১টি নিনমাসে চিকিৎসা খাতে পরমাণু শক্তির ব্যবহার হয়ে আসছে। এ সকল প্রতিষ্ঠানে স্থাপিত অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে বোন মিনারেল ডেনসিটোমেট্রি, বিভিন্ন ধরণের সিনটিগ্রাফি, কিডনী, পরিপাক, শ্বাস ও হৃদযন্ত্রের রোগ নির্ণয় এবং বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারের চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে। বর্তমানে আরও ৮টি ইনমাস স্থাপনের কাজ চলছে। পর্যায়ক্রমে দেশের সকল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও জেলা সদর হাসপাতালে ইনমাস স্থাপনের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এছাড়াও নিনমাস ও ইনমাসগুলোতে আধুনিক সরঞ্জামাদি সংযোজনপূর্বক আধুনিকায়নের কার্যক্রম চলছে।
জনগণের কাছে পরমাণু চিকিৎসা সেবা অধিকতর সহজলভ্য করার জন্য গোপালগঞ্জ, সাতক্ষীরা, কক্সবাজার, কুষ্টিয়া, পাবনা ও যশোর জেলায় এবং মহাখালী বক্ষব্যাধী হাসপাতাল ও সোহরাওয়ার্দী হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে মোট ৮টি ইনমাস স্থাপনের কার্যক্রম চলমান আছে। পর্যায়ক্রমে দেশের সকল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও জেলা সদর হাসপাতালে ইনমাস স্থাপনের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। সাভারের ইনস্টিটিউট অফ নিউক্লিয়ার মেডিকেল ফিজিক্সে ইতোমধ্যে পেট-সিটি স্ক্যান ও লিনাক স্থাপন করা হয়েছে যেখান থেকে রোগীদের পরমাণু চিকিৎসা সেবা বিশেষ করে ক্যান্সার চিকিৎসা সেবা দেয়ার জন্য সংশিষ্ট চিকিৎসক ও টেকনিশিয়ানদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। সাভার ছাড়াও ঢাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় নিনমাসে ২টি, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ইনমাসে ১টি এবং ময়মনসিংহ ও চট্রগ্রাম ইনমাসে ০১টি করে পেট-সিটি স্ক্যান স্থাপনের প্রকল্প নেয়া হয়েছে। পেট-সিটি স্ক্যান ছাড়াও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় নিনমাস ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ইনমাসে সাইক্লোট্রন স্থাপন করা হচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে যে, অদূর ভবিষ্যতে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের জনগোষ্ঠীর কাছেও পরমাণু চিকিৎসা সেবা পৌঁছে দেয়া সম্ভব হবে।

সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশে পরমাণু ব্যবহার নিয়ে কিছু বলুন।
বাংলাদেশ পরমাণু শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। এরই ধারাবাহিকতায় সরকার ও রাশান ফেডারেশনের মধ্যে স্বাক্ষরিত আন্তঃরাষ্ট্রীয় চুক্তির আওতায় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ পুরোদমে চলছে। আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার সকল নির্দেশনা ও বিধিবিধান অনুসরণপূর্বক সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মিত হচ্ছে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মাধ্যমে বাংলাদেশ বিশ্ব নিউক্লিয়ার ক্লাবে সদস্য হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে যা বাংলাদেশকে সারা বিশ্বে ভিন্ন মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছে। এ বিদ্যুৎ কেন্দ্র শুধু দেশের ক্রমবর্ধমান বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতেই সীমাবদ্ধ থাকবে না বরং বৃহৎ জনগোষ্ঠির কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সোনার বাংলা বিনির্মাণে এ বিদ্যুৎ কেন্দ্র হবে গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সচিব আনোয়ার হোসেন
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সচিব আনোয়ার হোসেন