রূপপুর বিদ্যুৎ কেন্দ্র: আইএইএ এর ছাড়পত্রের পরেই আসবে পরমাণু জ্বালানি
বিশেষ প্রতিনিধি:
বিদ্যুৎকেন্দ্রের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা ব্যবস্থা এবং যারা পরিচালনা করবে তাদের যোগ্যতা ও দক্ষা পর্যবেক্ষণ করতে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশে আসছেন। বিভিন্ন বিষয় পর্যালোচনার জন্য পাঁচটি দল আসবে। যারা বিদ্যুৎকেন্দ্র যথাযথ নির্দেশণা মেনে হচ্ছে কিনা তাসহ ১৯টি বিষয় দেখবে। আগামী মাসে প্রথম দল বাংলাদেশে আসবে। পর্যালোচনা শেষে সব ঠিক থাকলে তারাই জ্বালানি আনতে সক্ষম বলে জানাবে। আর তারপর আনা হবে পরমাণু জ্বালানি।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশে জ্বালানি আসার পর তা সর্বোচ্চ নিরাপত্তায় পাবনার বেস স্টেশনে নেওয়া হবে। ২০২৩ সালের মাঝামাঝি বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য এই পরমাণু জ্বালানি আনা হতে পারে। তখন বিদ্যুৎকেন্দ্রের পরীক্ষামূলক পরিচালন শুরু হতে পারে। আইএইএ-এর নির্দেশনা মেনেই অবকাঠামো তৈরি হচ্ছে।
নকশার পাশাপাশি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে সহায়তাকারী দেশ রাশিয়ার পক্ষ থেকে এমন নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে যে, স্বাভাবিক কিংবা জরুরি পরিস্থিতিতে বিকিরণ সীমা কখনোই চুল্লীভবনের আশপাশের ৩০০ মিটার অতিক্রম করবে না। এটি আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য মাত্রা।স্বাভাবিক কার্যক্রম চলার সময় এখান থেকে নির্গত বিকিরণের পরিমাণ এতই কম হবে যে তা এখানকার কর্মীদের জন্য কখনো নির্ধারিত স্তরের ওপরে উঠবে না।
রাশিয়ার কারিগরি ও আর্থিক সহায়তায় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কাজ করছে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন।
পাবনার রূপপুরে নির্মাণাধীন পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের রিয়্যাক্টর প্রেসার ভেসেল বা চুল্লি স্থাপনের পর এর কাজ এগিয়ে চলেছে। নির্ধারিত সময়ের আগেই উৎপাদনে আসতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ঠরা।
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই চুল্লির উদ্বোধন করেন।
রূপপুরের প্রথম ইউনিট থেকে ২০২৩ সালে এবং দ্বিতীয় ইউনিট থেকে ২০২৪ সালে বিদ্যুৎ উৎপাদনের কথা।
পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রর চুল্লী স্থাপন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। একে পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের হৃৎপিণ্ড বলা হয়ে থাকে।
ভার্চুয়াল উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পারমানবিক শক্তি আমরা আমাদের শান্তির জন্য ব্যবহার করছি। বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে, সেই বিদ্যুৎ গ্রাম পর্যায়ে মানুষের কাছে যাবে। মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নতি হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, একশ’ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছি। এসব জায়গায় শিল্পায়ন হবে। যত বেশি শিল্পায়ন হবে তত বেশি বিদ্যুতের চাহিদা বাড়বে। সেটাকে মাথায় রেখেই বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং সঞ্চালন এর পরিকল্পনা করা হয়েছে।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী জানিয়েছেন, পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেই এই বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছে।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রকল্প পরিচালক শওকত আকবর বলেন, নির্ধারিত মেয়াদের কয়েক মাস আগেই ২০২৩ সাল থেকে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি চালু করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৫০ শতাংশ কাজ শেষ হবে।
রূপপুরের এই পারমাণবিক চুল্লি নির্মিত হয়েছে রাশিয়ায়। ভিভিআর-১২০০ মডেলের এই রিয়্যাক্টরে পরমাণু জ্বালানি পুড়িয়ে মূল শক্তি উৎপাদন হবে এবং ১২শ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, রূপপুরের প্রথম ইউনিট ২০২৩ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করতে পারবে বলে ধারণা দিচ্ছে কর্তৃপক্ষ।
রূপপুর কেন্দ্রে দুটি ইউনিটে ২৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে। এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে প্রাথমিকভাবে ১ লক্ষ ১৩ হাজার কোটি টাকারও বেশি খরচ ধরা হয়েছে। বাংলাদেশে একক প্রকল্প হিসেবে এটি সবচেয়ে বড় কোনো অবকাঠামো প্রকল্প। মহামারির মধ্যেও এ প্রকল্প বাস্তবায়নে ২৫ হাজার শ্রমিক সেখানে কাজ করছেন।
বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরিতে সহযোগিতা দিচ্ছে রাশিয়ার আনবিক শক্তি কর্পোরেশন রোসাটম। তারাই প্রয়োজনীয় জ্বালানি সরবরাহ করবে এবং ইউরেনিয়াম জ্বালানি ব্যবহারের পর বর্জ্য ফেরত নিয়ে যাবে।