রেন্টাল-কুইক রেন্টাল: ‘নো ইলেকট্রিসিটি নো পে’ ভিত্তিতে চুক্তি
অরুণ কর্মকার
তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কমিয়ে আনার লক্ষ্যে রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ নতুন করে আর না বাড়ানোর সরকারি সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। তবে গ্যাসভিত্তিক রেন্টাল-কুইক রেন্টাল কেন্দ্রগুলোর সঙ্গে ‘নো ইলেকট্রিসিটি নো পে’ নীতিভিত্তিক চুক্তি স্বাক্ষর করা হচ্ছে।
ইতিমধ্যে ভোলায় ভেনচার এনার্জির মালিকানাধীন ৩৪ দশমিক ৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার গ্যাসচালিত রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি থেকে ‘নো ইলেকট্রিসিটি নো পে’ ভিত্তিতে বিদ্যুৎ নেওয়ার চুক্তি সই করেছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। আরও ৫টি গ্যাসচালিত কেন্দ্রের চুক্তি স্বাক্ষরের আবেদন পিডিবির কাছে জমা পড়েছে। সেগুলোর সঙ্গেও চুক্তি হবে বলে জানা গেছে।
তবে তেলচালিত কোনো রেন্টাল-কুইক রেন্টাল কেন্দ্রের আবেদন গ্রহণ করা হচ্ছে না। যদিও তেলচালিত রেন্টাল- কুইক রেন্টাল কেন্দ্রের মালিকেরা ‘নো ইলেকট্রিসিটি নো পে’ নীতিভিত্তিক চুক্তি করতে আগ্রহী। কিন্তু সেগুলোর সঙ্গে আর কোনো চুক্তি না করার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেছে সরকার। বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় ও পিডিবির নির্ভরযোগ্য সূত্রে এই খবর জানা গেছে।
অবশ্য মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, পিক আওয়ারের (দৈনন্দিন সর্বোচ্চ চাহিদার সময়) চাহিদা পূরণ, সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যবস্থা স্থিতিশীল রাখাসহ কোনো জরুরি প্রয়োজন মোকাবেলার জন্য যদি কোনো তেলভিত্তিক রেন্টাল, কুইক রেন্টাল কেন্দ্র অপরিহার্য হয় সেক্ষেত্রে চুক্তি করা হবে। সে চুক্তিও হবে ‘নো ইলেকট্রিসিটি নো পে’ নীতিভিত্তিক। এই চুক্তির অধীনে কোনো কেন্দ্র কোনো ক্যাপাসিটি চার্জ পাবে না। কোন কেন্দ্র থেকে কী পরিমান বিদ্যুৎ কেনা হবে এবং তার দাম কত হবে তাও নতুন করে নির্ধারণ করা হবে।
ভেনচার এনার্জির সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তির শর্তাবলী, দাম প্রভৃতি সম্পর্কে জানতে চাইলে পিডিবির চেয়ারম্যান প্রকৌশলী বেলায়েত হোসেন বলেন, প্রথমত কেন্দ্রটি থেকে দৈনিক ২০ মেগাওয়াট পর্যন্ত কিনতে হবে। পুরানো চুক্তিতে এর দাম ছিল প্রতি কিলোওয়াট/প্রতি মাস ১৩ মার্কিন ডলার। নতুন চুক্তিতে নির্ধারণ করা হয়েছে ১২ ডলার।
দ্বিতীয়ত, পিডিবির প্রয়োজন হলে কেন্দ্রটি তার অফিসিয়িাল ক্যাপাসিটির (৩৪ দশমিক ৫ মেগাওয়াট) পুরোটাই দিতে বাধ্য থাকবে। সেক্ষেত্রেও দাম হবে প্রতি কিলোওয়াট/প্রতি মাস ১২ ডলার। তৃতীয়ত, কেন্দ্রটির প্রকৃত উৎপাদন ক্ষমতা ৪০ মেগাওয়াট। তাই পিডিবির প্রয়োজন হলে ৪০ মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে কেন্দ্রটি বাধ্য থাকবে। সেক্ষেত্রে ৩৪ দশমিক ৫ মেগাওয়াটের বেশি যেটুকু সরবরাহ করবে তার দাম হবে প্রতি কিলোওয়াট/প্রতি মাস ১০ ডলার।
পিডিবি চেয়ারম্যান বলেন, ভোলায় বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য এই কেন্দ্রটি অপরিহার্য। তাই প্রয়োজনে কেন্দ্রটির সর্বোচ্চ উৎপাদন ক্ষমতা ব্যবহারের সুযোগ নতুন চুক্তিতে রাখা হয়েছে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে পিডিবি চেয়ারম্যান বলেন, তেলচালিত রেন্টাল-কুইক রেন্টাল কেন্দ্রগুলোর সঙ্গে নতুন করে আর হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তাঁদের এ-সংক্রান্ত কোনো আবেদনও গ্রহণ করা হচ্ছে না। তবে গ্যাসভিত্তিক কেন্দ্রগুলোকে নতুন চুক্তির আওতায় আনা হবে।
পিডিবির সূত্র জানায়, দেশে এখন গ্যাসভিত্তিক রেন্টাল-কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে ১১টি যার সর্বমোট উৎপাদন ক্ষমতা ৫০০ মেগাওয়াটের বেশি। এ ছাড়া তেলভিত্তিক কেন্দ্র রয়েছে ১০টি যার সর্বমোট উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় ৮০০ মেগাওয়াট।
সরকার গত বছর ডিসেম্বরে তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়ে তার বাস্তবায়ন শুরু করেছে। এর ফলে অলস বা অব্যবহৃত উৎপাদন ক্ষমতা কমবে। বেসরকারি খাতকে প্রতি বছর বিপুল অংকের ক্যাপাসিটি চার্জ দেওয়ার দায় থেকে বিদ্যুৎ খাত মুক্ত হবে। বর্তমানে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতা ২২ হাজার মেগাওয়াটের বেশি। এর বিপরীতে এ বছর গ্রীষ্মে সর্বোচ্চ চাহিদা হতে পারে ১৪ হাজার মেগাওয়াট।
বিদ্যুৎ খাত মহাপরিকল্পনা ২০১৬-তে প্রাথমিকভাবে ২০৩০ সালে দেশে বিদ্যুতের চাহিদা ৪০ হাজার মেগাওয়াট হওয়ার যে ধারণা করা হয়েছিল সেখানেও পরিবর্তন হয়েছে। সর্বশেষ প্রক্ষেপন অনুযায়ী ২০৩০ সালে দেশে বিদ্যুতের চাহিদা হবে ৩০ হাজার মেগাওয়াটেরও কিছু কম। বর্তমানে পাইপ লাইনে নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের যে কার্যক্রম রয়েছে তাতেই ২০৩০ সালের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হবে। তাই বিপুল পরিমান তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য আর্থিক দায় বহন করার কোনো প্রয়োজন নেই বলে মনে করেন বিশিষ্ট জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ম, তামিম।
দেশে বর্তমানে ছোট-বড়, সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে সর্বমোট ৭৬টি তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে। এগুলোর সর্বমোট উৎপাদন ক্ষমতা ৭ হাজার ৭৫ মেগাওয়াট যা দেশের মোট উৎপাদন ক্ষমতার প্রায় এক তৃতীয়াংশ।