লোডশেডিংয়ে ক্যাপাসিটি চার্জ বাড়বে
রফিকুল বাসার:
পরিকল্পিত এই লোডশেডিংয়ে ক্যাপাসিটি চার্জ বাড়বে। একদিকে কিছু জ্বালানি খরচ কমবে। অন্যদিকে বিদ্যুৎ না কিনেও টাকা দেয়ার পরিমান বাড়বে।
বিদ্যুৎ উৎপাদন না করলেও নির্দিষ্ট পরিমাণ যে অর্থ দেয়া লাগে তা দিতেই হবে উৎপাদনকারীকে। ফলে এখন যে ক্যাপাসিটি চার্জ দেয়া লাগে তা লোডশেডিংয়ের কারণে আরও বাড়বে।
চুক্তি অনুযায়ী বিদ্যুতে বিনিয়োগকারীদের লাভ নিশ্চিত করা হয়েছে। ঝুঁকিমুক্ত বিনিয়োগের সুবিধা দেয়া হয়েছে বিদ্যুৎ উৎপাদনে। তাই বিদ্যুৎ প্রয়োজন না হলেও বা বিদ্যুৎ কেনা না হলেও একটা নির্দিষ্ট পরিমান অর্থ দিতে হয় বিনিয়োগকারীকে। একে ক্যাপাসিটি চার্জ বলে। তবে চুক্তি অনুযায়ী ন্যুনতম বিদ্যুৎ নিলে আর ক্যাপাসিটি চার্জের প্রয়োজন হয় না।
চুক্তি অনুযায়ী একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ বিদ্যুৎ কিনতে বাধ্য থাকে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। যদি সেই পরিমাণ বিদ্যুৎ না কেনে তবে তা ক্ষতিপূরণ হিসেবে দিতে হয়। আর এটাই ক্যাপাসিটি চার্জ। যদি ন্যুনতম একশ’ ইউনিট বিদ্যুৎ কেনার কথা থাকে আর পিডিবি ৮০ ইউনিট বিদ্যুৎ কেনে তবে বাকি ২০ ইউনিটের অর্থ এমনি এমনিই দিয়ে দিতে হয়। এতে দাম বেড়ে যায়। কিন্তু যদি সক্ষমতার পুরো বিদ্যুৎ কেনে তবে আর এই অর্থ দেয়া লাগে না।
এই পরিস্থিতির কারণে একই বিদ্যুৎকেন্দ্রের এক ইউনিট বিদ্যুতের দাম বছর ফেরে অনেক পরিবর্তন হয়ে যায়। ধরি, প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ১০ টাকা করে নির্ধারণ করা হয়েছে। একশ’ ইউনিট বিদ্যুৎ নিলে দাম এক হাজার টাকা। দুইশ’ ইউনিট বিদ্যুৎ নিলে দুই হাজার টাকা। আর এখানে সর্বনিন্ম বিদ্যুৎ কেনার পরিমান যদি নির্ধারণ করা থাকে একশ’ ইউনিট তবে যতটা বিদ্যুৎ নেয়া হোক না কেন কমপক্ষে এক হাজার টাকা দিতেই হবে। এখন একশ’ ইউনিটের বেশি বিদ্যুৎ নিলে প্রতি ইউনিট ১০ টাকাই থাকবে। কিন্তু যদি তার কম হয়, যেহেতু এক হাজার টাকা দিতেই হচ্ছে তখন প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম বেড়ে যাচ্ছে।
তাই পরিকল্পিত লোডশেডিং মানে বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রাখা হবে। অলস বসে থাকবে। আর বন্ধ রাখা মানেই বিদ্যুৎ না নিয়েই নির্দিষ্ট পরিমান টাকা দিয়েই যেতে হবে।
বিদ্যুতে বেশি বিনিয়োগ লাগে বলে ‘ঝুঁকি মুক্ত বিনিয়োগ’ এর এই নিয়ম পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে চালু আছে। তবে পরিকল্পিতভাবে কেন্দ্র স্থাপন করলে বসিয়ে রাখার প্রয়োজন হয় না, সাথে ক্যাপাসিটি চার্জও লাগে না।
গত এপ্রিলে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছিল ১৪ হাজার ৭৮২ মেগাওয়াট। আর এখন উৎপাদন হচ্ছে কম বেশি ১৩ হাজার মেগাওয়াট। ১৪ হাজার মেগাওয়াট উৎপাদনেই বছরে প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ দেয়া লেগেছে। এখন এর সাথে আরও এক হাজার মেগাওয়াট যোগ হলে সেই পরিমান অলস বসিয়ে টাকা দেয়ার পরিমানও বাড়বে।