শতভাগ বিদ্যুতায়নের ঘোষণা: বিদ্যুতের মত অগ্রাধিকার দিতে হবে জ্বালানিতে

শতভাগ বিদ্যুতায়নের ঘোষণা দিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পটুয়াখালীতে পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন এবং শতভাগ বিদ্যুতায়নের ঘোষণা দিলেন তিনি।
দরিদ্র থেকে উন্নয়নশীল। আর তারপর উন্নয়নশীল থেকে উন্নত। ২০৪১ সালে যে উন্নত দেশের ঘোষণা তা বাস্তবায়নে এই ঘোষণা আরও একধাপ এগিয়ে দিল বাংলাদেশকে।
বিদ্যুতায়ন হয়েছে সব শহর, গ্রাম, চর, দুর্গম পাহাড়ি এলাকা। এক যুগে এ অভাবনীয় সাফল্যের মাধ্যমে দেশের সব এলাকা বিদ্যুতের আওতায় আনার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করল সরকার। আরইবি’র তথ্য অনুযায়ি ৪৬১টি উপজেলায় জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুৎ পৌঁছে গেছে।
পরিবেশ বান্ধব আল্ট্রা-সুপারক্রিটিক্যাল প্রযুক্তির কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু আর ‘মুজিববর্ষে’ দেশকে শতভাগ বিদ্যুতের আওতায় এনে নির্বাচনি ইশতেহার বাস্তবায়ন হয়েছে। একই সাথে আরেকটি মাইলফলক অর্জিত হল। ‘মুজিববর্ষ’ শেষ হচ্ছে আগামী ৩১ মার্চ।
বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ এখন ভারত ও পাকিস্তানকে পেছনে ফেলেছে, দক্ষিণ এশিয়ার যে দেশগুলো তাদের জনসংখ্যার ৯৮ শতাংশ এবং ৭৪ শতাংশকে বিদ্যুৎ নেটওয়ার্কের আওতায় এনেছে।
বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ২৫ হাজার ৫১৪ মেগাওয়াট হয়েছে যা ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে ছিল ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট। এর মধ্যে ১ হাজার ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করা হচ্ছে। ১৯ হাজার ৬২৬ মেগাওয়াট স্থানীয়ভাবে উৎপাদন করা হচ্ছে। ২০০৯ সালে জনসংখ্যার মাত্র ৪৭ শতাংশ বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ ছিল। মাথাপিছু বিদ্যুৎ উৎপাদন ২২০ কিলোওয়াট থেকে ৫৬০ কিলোওয়াটে উন্নীত হয়েছে।
সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে চর সোনারামপুর, আশুগঞ্জ, রাঙ্গাবালী, মনপুরা, সন্দ্বীপ, হাতিয়া, নিঝুম দ্বীপ ও কুতুবদিয়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে ইনডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার (আইপিপি) নীতি করে। সে সময় শেখ হাসিনা দ্রুত বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য বার্জ মাউন্টেড বিদ্যুৎ-ও নিয়ে আসেন। সেটা ছিল বিদ্যুৎখাতের নতুন দিনের সুচনা। বিদ্যুৎখাতে বেসরকারি অংশগ্রহণ শুরু হয় তখন থেকেই।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে বিদ্যুৎখাত পুরোপুরি বদলে দেয়। যার ফল হল শতভাগ বিদ্যুতায়ন।
শতভাগ বিদ্যুতায়নের এই লম্বা পথটি বাংলাদেশ পাড়ি দিয়েছে একেবারেই শূন্য থেকে। ১৯৭১ সালে স্বাধীন হওয়া বাংলাদেশে বলতে গেলে বিদ্যুৎ বলতে তেমন কিছুই ছিল না। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সক্ষমতা নিয়ে এই খাতের যাত্রা শুরু করেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের বিদ্যুৎখাত পুনর্গঠন করেন। এরই ধারাবাহিকতা রক্ষা করে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফলে তার হাত ধরেই বাংলাদেশ শতভাগ বিদ্যুতায়নের রেকর্ড হল।
আরও বড় দুটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র রামপাল আর মাতারবাড়ি উৎপাদনে আসার অপেক্ষায়। যদিও এই দুই কেন্দ্র শুরুর পরে পায়রার কাজ শুরু হয়েছে। পরে শুরু হয়েও আগে উৎপাদনে এসেছে পায়রা।
এখন টেকসই, নিরবচ্ছিন্ন এবং সাশ্রয়ী বিদ্যুৎসেবা নিশ্চিত করা হবে আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ। এখন এই বিদ্যুৎ উৎপাদন একই ধারাবাহিকতায় ধরে রাখা বড় চ্যালেঞ্জ। আর চ্যালেঞ্জ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে তা রাখা।
এখন বিদ্যুৎখাতের মত অগ্রাধিকার দিয়ে এগিয়ে নিতে হবে জ্বালানিখাতকে। তাহলেই এই সাফল্য ধরে রাখা সহজ হবে।