শহরে সৌর প্যানেল আলোর মুখ দেখেনি
বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, শহরে বাসাবাড়ির ছাদে সৌর প্যানেল বসানোর উদ্যোগ আলোর মুখ দেখেনি। কিন্তু গ্রামে সৌর বিদ্যুতের ব্যবহার বেড়েছে। শহরের তুলনায় গ্রামে বিদ্যুতের ব্যবহার কম। এবার শহরে সৌর বিদ্যুতের ব্যবহার বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে।
বৃহষ্পতিবার টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (স্রেডা) দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। স্রেডার চেয়ারম্যান আনোয়ারুল ইসলাম সিকদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বীরবিক্রম, বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মো. তাজুল ইসলাম, জ্বালানি সচিব নাজিম উদ্দিন চৌধুরী, অতিরিক্ত সচিব ড. আহমেদ কায়কাউস, স্রেডার প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান তাপস কুমার রায় বক্তব্য রাখেন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন স্রেডার সদস্য সিদ্দিক জোবায়ের।
উপদেষ্টা বলেন, সবার আগে নিজেকে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী হতে হবে। সেজন্য নিজের ঘর থেকেই সচেতনতার কাজ শুরু করতে হবে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব বিষয়ে গবেষণা করতে বলেছেন। সেই লক্ষেই সবাইকে কাজ করতে হবে। নবায়নযোগ্য খাতে কাজ করার প্রচুর সুযোগ আছে। তিনি সবাইকে সাশ্রয়ী হওয়ার আহবান জানান।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ মাটির নিচের জ্বালানির ওপর নির্ভরশীল। এই জ্বালানি দ্রুত ফুরিয়ে আসছে। এটি শুধু বাংলাদেশে নয় সারা বিশ্বের এই অবস্থা। এজন্য বিকল্প জ্বালানি হিসেবে নবায়নযোগ্য জ্বালানিকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। বাংলাদেশকেও নবায়নযোগ্য জ্বালানি ক্ষেত্রে এগিয়ে যেতে হবে। তিনি বলেন, এই নবায়নযোগ্য জ্বালানি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই আলোচনা হচ্ছে। কিন্তু সরকারি অফিসগুলো এখনো সব জ্বালানি সাশ্রয়ী হতে উঠেনি। আগামী এক বছরের মধ্যে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিভাগের অফিসগুলো জ্বালানি সাশ্রয়ী অফিসে পরিণত করার উদ্যোগ নিতে হবে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, শহরের সৌর বিদ্যুৎ ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী অনেকেই কিন্তু তেমন কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। স্রেডা উদ্যোগ নিলে বিনিয়োগকারীর অভাব হবে না।
তাজুল ইসলাম বলেন, বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের নামে অনেক ধরনের বাতি বাজারে বিক্রি করা হয়। সেসব বাতির মান নিয়ন্ত্রণ করা জরুরী। বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের ক্ষেত্রে এলইডি বাতি ব্যবহার করা যেতে পারে। তিনি বলেন, গ্রামে বায়োগ্যাসের ব্যবহারে বেড়েছে। এইখাতে স্রেডার উচিত আরো বেশি করে কাজ করা। গ্রামে গ্রামে বায়োগ্যাসের প্রচার করা গেলে গ্রাম অর্থনৈতিকভাবে আরো উন্নত
অনুষ্ঠানের শুরুতেই স্রেডার লোগো, ওয়েবসাইট, নতুন অফিসের উদ্বোধন ও তাদের মহাপরিকল্পনার মোড়ক উন্মোচন করা হয়। এছাড়া জ্বালানি সাশ্রয়ে প্রামাণ্য চিত্র তৈরির জন্য দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের চারজন শিক্ষার্থীকে সনদ দেয়া হয়।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ২০২০ সালের মধ্যে বিদ্যুতের মোট উৎপাদনের ১০ ভাগ অর্থাৎ দুই হাজার মেগাওয়াট নবায়ন যোগ্য জ্বালানি থেকে করা হবে। তবে এসডিজিতে ২০২০ এবং ২০৩০ সালের মধ্যে যথাক্রমে ১৫ এবং ২০ শতাংশ বিদ্যুৎ নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে উৎপাদনের লক্ষ ঠিক করা হয়েছে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে ২০২১ সালে প্রায় তিন হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৩০ সালে প্রায় আট হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা কমিয়ে আনা সম্ভব হবে এবং প্রায় ১১ হাজার ৩০০ কোটি ঘন মিটার গ্যাস সাশ্রয় হবে। ফলে ২০৩০ সালের মধ্যে প্রতি বছর প্রায় ৫৩ লাখ মিলিয়ন টন জ্বালানি বা প্রতিবছর দশ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় করা সম্ভব হবে।