শিল্পে গ্যাস বিদ্যুতের নিশ্চয়তা চান উদ্যোক্তরা

শিল্পে গ্যাস বিদ্যুতের নিশ্চয়তা চান উদ্যোক্তরা। তারা বলেন, মধ্য আয়ের দেশ হতে গেলে শিল্পে যথাযথভাবে গ্যাস দিতে হবে। অর্থনীতিতে শিল্পের অবদান ৪০ ভাগ রাখতে পারলেই আট শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে। শিল্পে গ্যাস বিদ্যুতের নিশ্চয়তা না পেলে দেশে বিনিয়োগ কমে যাবে। আর বিনিয়োগ কমে গেলে অর্থনৈতিক উল্পুয়ন বাধাগ্রস্ত হবে। আবাসিক ও সিএনজিতে গ্যাস বন্ধ করে তা শিল্পে দিতে হবে।

সোমবার বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই) আয়োজিত হোটেল পূর্বানিতে অনুষ্ঠিত এক আলোচনা সভায় বক্তারা একথা বলেন।

‘শিল্পে জ্বালানি সাশ্রয়ের উন্নয়ন’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক ই ইলাহী চৌধুরী বীর বিক্রম। বিশেষ অতিথি ছিলেন এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যান এ আর খান। এতে সভাপতিত্ব করেন বিসিআই সভাপতি একে আজাদ। মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন প্রকৌশল বি্শ্ববিদ্যালয়ের কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন।

উপদেষ্টা তার বক্তৃতায় বলেন, আগামী দুই চার বছরের মধ্যে দেশে গ্যাসের চাপ কমতে থাকবে। তবে তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি করে এই চাহিদা মেটানো হবে। বর্তমানে যে সংকট আছে তাও তখন থাকবে না। আগামী ছয় মাসের মধ্যে সকল শিল্প প্রতিষ্ঠানে অন্তত ৬০ ভাগ জ্বালানি সাশ্রয়ী বয়লার স্থাপন করার নির্দেশ দেন তিনি। এবিষয়ে বলেন, যারা ক্যাপটিভে গ্যাস নিয়েছেন তাদের আগামী ছয় মাসের মধ্যে জ্বালানি ব্যবহারে ৬০ ভাগ দক্ষতা বাড়াতে হবে। এই দায়িত্ব শিল্প মালিকদেরই নিতে হবে। জ্বালানির স্বল্পতা আছে। এজন্য সকলকে সাশ্রয়ী হতে হবে। উপদেষ্টা কারখানার ‘উবে যাওয়া তাপ’ (ওয়েষ্ট হিট) প্রয়োজনে অন্যকে বিক্রি করার অনুমোতি দেন। তিনি বলেন, গভীর সাগরের গ্যাস ব্যবহার করতে আরও দশ বছর লাগবে। তবে অগভীর সমুদ্রে গ্যাস পাওয়া গেলে তা পাঁচ বছরের মধ্যে ব্যবহার করা যাবে। শিল্প প্রতিষ্ঠানে জ্বালানি সাশ্রয়ী বাতি ব্যবহারের পরাশর্ম দিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ভবন নির্মানে কোড করা হচ্ছে। এই কোড মেনে ভবন করলে জ্বালানি সাশ্রয় হবে। তিনি বলেন, দেশের ৫/৬টা এলাকা চিহ্নিত করে সেখানের শিল্পে নিরবিচ্ছিন্ন গ্যাস বিদ্যুৎ দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। শিল্পে কীভাবে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দেয়া যায় তা নিয়ে কাজ চলছে।

এ আর খান বলেন, সাশ্রয়ী হলে ৩৩ ভাগ জ্বালানী সাশ্রয় করা যাবে। নতুন শিল্প এলাকায় কো-জেনারেশন করলে ভাল হবে। শিল্পে জ্বালানি ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে হবে। তিনি বলেন, ক্যাপটিভে গ্যাসের দাম শতভাগ বেড়েছে। তবুও যেসব এলাকায় এখনও গ্যাস নেই তাদের সাথে উৎপাদন খরচে ৫০০ ভাগ পার্থক্য।

একে আজাদ তার বক্তৃতায় বলেন, গ্যাস ফুরিয়ে আসছে। আগামীতে বিকল্প কী হবে তা এখনই ভাবতে হবে। সাশ্রয়ই হবে পরের জ্বালানি উৎস। জ্বালানি সাশ্রয় করতে পারলে নতুন জ্বালানি পাওয়ার মতই কাজ হবে। তিনি বলেন, ২০১৭ থেকে গ্যাসের চাপ কমে যাবে। ১৫ বছর পরে আর গ্যাস থাকবে না। এ থেকে উত্তরণের জন্য এলএনজি আনা হচ্ছে,  কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছে। পারমানবিক বিদ্যুৎ হচ্ছে। কিন্তু এগুলোর কিছুই কবে থেকে শুরু হবে সে বিষয়ে স্বচ্ছ ধারণা নেই। এজন্য বিনিয়োগ নিয়ে উদ্যোক্তারা চিন্তিত। আট ভাগ প্রবৃদ্ধিতে যেতে হলে শিল্পে ৪০ ভাগ অবদান রাখতে হবে। যা এখন ২৯ ভাগ আছে। ২০২১ সালের মধ্যে মধ্য আয়ের দেশ হতে গেলে শিল্প উন্নত করতে হবে। আবাসিক ও সিএনজি খাত প্রবৃদ্ধিতে কোন অবদান রাখে না। এজন্য আবাসিক ও সিএনজিতে বন্ধ করে দিলে প্রায় ১৭ শতাংশ গ্যাস পাওয়া যাবে। এই গ্যাস শিল্পে দিলে অর্থনৈতিক উন্নয়ন তরান্বিত হবে।

মূল প্রবন্ধে বলা হয়, সাশ্রয়ী হলে অর্ধেক বিদ্যুতের ব্যবহার কমানো সম্ভব। শিল্পের বয়লারের দক্ষতা বাড়াতে হবে। ওয়েস্ট হিট দিয়ে কো-জেনারেশন করতে হবে। এক শিল্পের তাপ অন্যরা নিতে পারে। যে তাপ উড়ে যায় তা দিয়ে আবার বিদ্যুৎ করা যেতে পারে। উড়ে যাওয়া তাপ বেচাকেনার ব্যবস্থা করতে হবে।

বিসিআই এর সাবেক সভাপতি মতিউর রহমান বলেন, গ্যাস বিদ্যুতের অবস্থান না জানার কারণে বিনিয়োগ করা যাচ্ছে না। এরফলে বিদেশী বিনিয়োগও আসবে না। গ্যাসের চাপ না থাকার কারণে শিল্প উৎপাদনে ক্ষতি হচ্ছে। ঢাকা চেম্বারের সহসভাপতি সোয়েব চৌধুরী বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে কমেছে বলে এখানেও জ্বালানি তেলের দাম কমানো উচিত।

বিজিএমইএ এর সহসভাপতি মাহমুদ হাসান খান বলেন, জ্বালানি শিল্পের খরচ নিয়ন্ত্রন করে। নিরবিচ্ছন্ন জ্বালানি নিশ্চিত করতে হবে। শিল্পে কো-জেনারেশন বাধ্যতামূলক করতে হবে। জ্বালানি নিরীক্ষক লাগবে।  জ্বালানি সাশ্রয়ে অবদান রাখার জন্য পুরস্কারের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।

আলোচনা সভায় বাংলাদেশ লেদার গুডস ম্যানুফেকচারার্স এন্ড এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি সাইফুল ইসলাম, ক্যামিকেল ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালক প্রকৌশলী আলী আক্কাস, বিসিআই সহসভাপতি শামসুর রহমান, এফবিসিসিআই এর পরিচালক মো. ইসমাইল হোসেন, শেখ ফজলে ফাহিম, প্রবীর কুমার সাহা, টেক্সটাইল মিলস এসোসিয়েশনের পরিচালক শাহিদ আলম, নীট ডাইং এসোসিয়েশনের আবুল হাসনাত কবীর,  গুলশান নাসরিন চৌধুরী, সিরাজউদ্দিন আহমদ, মতিন চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।