সাগরে এক কোম্পানিকে একাধিক গ্যাস ব্লক নয়

গভীর সাগরে খনিজ সম্পদ আহরণে এক কোম্পানিকে একাধিক ব্লক বরাদ্দ না দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রয়োজনে বিদেশী কোম্পানির জন্য সুবিধা বাড়িয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে সমুদ্রের খনিজ অনুসন্ধানে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহবান করতে সংশ্লিষ্ঠদের নির্দেশ দেন। এছাড়া সমুদ্রের পুরো প্রকৃতিক সম্পদ আহরণে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা করতে নির্দেশ দিয়েছেন।
বুধবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে তিনি এই নির্দেশ দেন। সমুদ্রসীমায় সম্পদ আহরণ ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য কৌশলগত পরিকল্পনা করা ও তা বাস্তবায়নে পরিকল্পনা করতে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠকের শুরু প্রধানমন্ত্রী বলেন, সমুদ্রের সম্পদ বিষয়ে জানতে হবে। আর সেই সম্পদ যথাযথভাবে কাজে লাগাতে হবে। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে। সমুদ্রের গ্যাস অনুসন্ধান করে তা জনগণের কল্যাণে কাজে লাগাতে হবে। একই কোম্পানিকে একাধিক ব্লক ইজারা দেয়া বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটি কোম্পনিকে একাধিক গ্যাস ব্লক ইজারা দেয়া হলে জিম্মি হয়ে যাওয়ার আশংকা থাকে। একই কোম্পানির উপর নির্ভরশলিতা বাড়ে। এজন্য যতটা সম্ভব বেশি কোম্পানির অংশগ্রহন নিশ্চিত করতে হবে।
বৈঠক সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী সমুদ্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নৌবাহিনীকে আধুনিকায়ন, উপকূলসহ পুরো সমুদ্রের সম্পদ আহরণে উদ্যোগী হওয়া, কক্সবাজারে সমুদ্র এক্যুরিয়াম ও গবেষনাগার, উপকূলে বেশি বেশি গাছ লাগানো বিশেষ করে ঝাউ গাছ, কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত রাস্তা চওড়া করে চার লেন করা, বায়ু ও ঢেউ থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনসহ বিভিন্ন বিষয়ে গুরত্ব দিয়ে দ্রুত সময়ে পরিকল্পনা করার বিষয়ে গতকালকের বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। এসব বিষয়ে অগ্রাধিকার ঠিক করে সেই অনুযায়ি কাজ করার নির্দেশ দেন তিনি।
বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী অর্থমন্ত্রীকে সমুদ্রের সম্পদ আহরণে যে প্রকল্প হবে তাতে দ্রুত অর্থ ছাড় দেয়ার সুপারিশ করেন। এসময় অর্থমন্ত্রী যথাযথ প্রকল্পর জন্য দ্রুত অর্থ ছাড় দেয়া হবে বলে জানান।
সমুদ্র থেকে সম্পদ আহরণ করে কিভাবে তা জনগণের কাজে লাগানো যায় সে বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী গুরুত্ব দেন। এছাড়া গবেষণা ও জরিপের মাধ্যমে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় কী কী সম্পদ আছে তা নিশ্চিত করতে বলেন। সমুদ্র সম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নৌ-বাহিনীকে শক্তিশালী করার পরিকল্পনা নিতে হবে। সমুদ্রসীমায় সম্পদ আহরণ, জরিপ ও গবেষণার জন্য সম্পূর্ণ নিজস্ব কৃত্রিম উপগ্রহ করার কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
গভীর ও অগভীর জলসীমায় দু’ধরনের জরিপ চালাতে বলেন প্রধানমন্ত্রী। একই সাথে জলসীমার পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রায় পদপেক্ষ নিতে হবে। সকল প্রাণীজ সম্পদ আহরণ করতে হবে। সমুদ্রে জেগে ওঠা চর বনায়নের মাধ্যমে বসবাসের যোগ্য করে তুলতে হবে। সমুদ্রে পর্যটন বাড়াতে উদ্যোগী হতে হবে।
বৈঠকে নৌবাহিনী প্রধানসহ পররাস্ট্র, মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ, জ্বালানী, নৌ-পরিবহণ, পরিবেশ ও বন এবং স্বরাস্ট্র সচিব তাদের স্ব স্ব মন্ত্রনালয়ের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ অবস্থান তুলে ধরেন।
প্রধানমন্ত্রীর প্রেসসচিব একেএম শামীম চৌধুরী বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের সমুদ্রসীমায় তেল ও গ্যাস আহরণের জন্য নতুনভাবে দরপত্র আহবানের কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। একটি কোম্পানিকে বেশি ব্লক দেয়া যাবে না।
বৈঠকে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, পানিসম্পদ মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ, পরিকল্পনা মন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল, নৌ পরিবহণমন্ত্রী শাজাহান খান, বেসরকারি বিমান চলাচল ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, পররাস্ট্রমন্ত্রী আবুল হোসেন মাহমুদ আলী, প্রধানমন্ত্রী উপদেষ্টা ড. তৌফিক ই ইলাহী চৌধুরী বীর বিক্রম, পররাস্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ অংশ নেন। এছাড়া নৌ-বাহিনী প্রধান ভাইস অ্যাডমিরাল ফরিদ হাবিব, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আবদুস সোবহান শিকদার, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সচিব আবুল কালাম আজাদসহ সংশ্লিষ্ঠ সচিবরাও উপস্থিত ছিলেন।