সামিটে ৩৩ কোটি ডলার বিনিয়োগ করল জেরা
জাপানের প্রতিষ্ঠান জেরা সামিট পাওয়ার ইন্টারন্যাশনালের (সামিট) ২২ শতাংশ মালিকানায় বিনিয়োগ করেছে। যার পরিমান ৩৩ কোটি মার্কিন ডলার বা প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা।
গত মে মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে সামিট এবং জেরার মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকের (এমওইউ) ধারাবাহিকতায় এই বিনিয়োগ হলো।
সামিট পাওয়ারের শেয়ারহোল্ডার হিসেবে, জেরা বিদ্যুৎ উৎপাদনে দক্ষ নির্মাণ এবং পরিচালনার মাধ্যমে সামিট পাওয়ারের কর্পোরেট ভ্যালু বৃদ্ধির প্রচেষ্টার পাশাপাশি বাংলাদেশের টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে অবদান রাখার জন্য কাজ করবে বলে জানানো হয়েছে।
সামিটের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আজিজ খান এই বিনিয়োগ নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে বলেন, বাংলাদেশের দ্রুত ক্রমবর্ধমান বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি এবং বিনিয়োগ জেরার মাধ্যমে সহজলভ্য হবে। কেননা তাদের রয়েছে অভিজ্ঞতা ও বিনিয়োগ সক্ষমতা। জেরা সর্বাংশে আমাদের শ্রেষ্ঠ অংশীদার হতে পারে। এই অংশীদারিত্ব আমাদের ২০২২ সালের মধ্যে বাংলাদেশে তিন বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিয়োগ কার্যক্রমে সহায়তা করবে।
জেরা-এশিয়ার সিইও তোসিরো কুদামা বলেন, এই গুরুত্বপূর্ণ অংশীদারিত্বের মাধ্যমে, জেরা বাংলাদেশের উন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যে সামিটের সাথে কাজ করবে। আমাদের সম্পূর্ণ আস্থা আছে জাতীয় পর্যায়ে সামিটের অপ্রতিদ্বন্দ্বী সক্ষমতায়। ভবিষ্যতে সামিটের সাথে দৃঢ় সম্পর্ক বজায় রাখবো। আমরা সামিটের সাথে বাংলাদেশের জন্য শুধু নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনই করবো না, প্রাথমিক জ্বালানিও সরবরাহ করবো। জেরার লক্ষ্য হলো বিশ্বের জ্বালানির খাতের অর্ন্তনিহিত সমস্যার সর্বাঙ্গিক সমাধান দেওয়া।” জেরার আকাঙ্ক্ষা হলো শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন এবং সেই উদ্দেশ্যে জেরা সামিটকে অভিজ্ঞ মানবসম্পদ এবং কারিগরি সহায়তা প্রদান করবে।
আইএফসি, আইএফসি ইমার্জিং এশিয়া ফান্ড এবং ইএমএ পাওয়ার ২০১৬ সাল থেকে এখন পর্যন্ত সামিটের শেয়ারহোল্ডার ছিল। এই লেনদেনের মাধ্যমে তা আর থাকবে না। তবে বড় ঋণদাতা হিসেবে আইএফসি, সামিটের সাথেই থাকবে বলে জানানো হয়েছে।
আইএফসি এমার্জিং এশিয়া ফান্ড এর কো-হেড এন্ড্রু ইয়ে বলেন, আমার গত তিন বছর সামিট পাওয়ার ইন্টারন্যাশনালের পরিচালনা পর্ষদে দায়িত্ব পালন করার সৌভাগ্য হয়েছে এবং এই সময়ে দৃশ্যমান অগ্রগতির জন্য সামিটকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। বাংলাদেশ দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে এসেছে এবং নতুন বিনিয়োগকারিরা এই বাজারে সম্ভাবনা খুঁজে পেয়েছে দেখে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। আমরা সামনের দিনগুলিতে সামিট এবং জেরার উত্তোরত্তর সাফল্য কামনা করছি।
সামিট বাংলাদেশের প্রথম এবং বৃহত্তম স্বতন্ত্র বিদ্যুৎ উপাদনকারি প্রতিষ্ঠান (আইপিপি), যার বিদ্যুৎ উপাদন ক্ষমতা ১,৯৪১ মেগাওয়াট। বর্তমানে আরও একটি ৫৮৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণাধীন এবং ৩,০০০ মেগাওয়াট পরিকল্পনাধীন রয়েছে। এছাড়াও সামিট, একটি এলএনজি ভাসমান সংরক্ষণাগার এবং পুনঃ গ্যাসে রূপান্তরকরণ ইউনিট (এফএসআরইউ) পরিচালনা করছে যা বাংলাদেশের জাতীয় গ্রীডে দৈনিক ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট রিগ্যাসিফাইড এলএনজি (এমএমসিএফডি) সরবরাহ করছে। এর আগে সামিট, মিতসুবিশি কর্পোরেশন এর কাছে এফএসআরইউ প্রকল্প এবং তাইয়ো লাইফ ইন্স্যুরেন্সের কাছে বিদ্যুৎ প্রকল্পের মালিকানায় ইক্যুয়িটি বিনিয়োগ পেয়েছে। বাংলাদেশের ৮.১৩ শতাংশ জিডিপির প্রবৃদ্ধি এবং ১৭০ মিলিয়ন জনসংখ্যার জন্য ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০,০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রয়োজন হবে। সামিট গ্রুপের প্রতিষ্ঠান, সামিট পাওয়ার ইন্টারন্যাশনাল সিংগাপুরে ইনকর্পোরেটেড। বাংলাদেশে সামিটের অন্যান্য অ্যাসেটসের মধ্য রয়েছে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্ক স্থাপনকারি প্রতিষ্ঠান সামিট কমিউনিকেশনস লিমিটেড (www.summitcommunications.net) এবং বেসরকারি খাতে বৃহত্তম বন্দর পরিচালনাকারি প্রতিষ্ঠান সামিট অ্যালায়েন্স পোর্ট লিমিটেড (এসএপিএল)।
জেরা একটি বৈশ্বিক জ্বালানী কোম্পানী যার প্রধান শক্তি হলো জ্বালানী সাপ্লাই চেইনের পুরোটা জুড়ে কাজ করবার ক্ষমতা, যার ব্যাপ্তি এলএনজি ও অন্যান্য জ্বালানী প্রকল্পে অংশগ্রহন, জ্বালানীর পরিবহন এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন। ২০১৫ সালে প্রতিষ্ঠিত জেরা, জাপানের প্রধান দুটি বিদ্যুৎ খাতের কোম্পানী টেপকো ফুয়েল এন্ড পাওয়ার ইনকরপোরেটেড এবং চুবু ইলেকট্রিকের সমবিনিয়োগের যৌথ মালিকানাধীন একটি প্রতিষ্ঠান। জেরার লক্ষ্য হলো জ্বালানী খাতের সম্পদ উন্নয়ন এবং ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতামূলক দরে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ করা। জেরা’র নিজ দেশে ২৬ টি বিদ্যুৎ প্রকল্প পরিচালনা করছে যার ক্ষমতা ৬৭ গিগাওয়াট এবং অন্যান্য দেশে বাস্তবায়নাধীনসহ প্রায় ১০ গিগাওয়াটের প্রকল্প রয়েছে।