সিপিডির আলোচনা: উচ্চমূল্যের এলএনজির চেয়ে বেশি গ্যাস অপচয় হয়
নিজস্ব প্রতিবেদক:
উচ্চমূল্যে যে এলএনজি আমদানি করা হয় তার থেকে বেশি গ্যাস অপচয় হয়। অবহেলা আর অব্যবস্থাপনার জন্য দিনে দিনে গ্যাস সংকট বেড়েছে।
শনিবার বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) অনলাইন আলোচনায় বক্তারা একথা বলেন।
বক্তারা বলেন, পরিকল্পনার অভাবে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) ওপর নির্ভরশীলতা বেড়েছে। দ্রুত পরিকল্পনায় পরিবর্তন জরুরি।
‘জ্বালানি সরবরাহে এলএনজি বিতর্ক: বিদ্যুৎ খাতের জন্য এলএনজি আমদানি খরচ ও ফল’ শীর্ষক এ আলোচনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম এবং সিনিয়র রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট আব্দুল্লাহ ফাহাদ।
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) চেয়ারম্যান মো. আব্দুল জলিল বলেন, প্রতিবছর প্রায় আট শতাংশ সিস্টেম লস হচ্ছে। আর মুক্তবাজার থেকে উচ্চমূল্যে পাঁচ শতাংশ গ্যাস কিনছি। এই অপচয় কমাতে পারলে আর উচ্চমূল্যের জ্বালানি আমদানি করা প্রয়োজন হবে না। গ্যাসের দাম বাড়ানোর যে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে তা যথাযথ পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে তিনি জানান। বলেন, সবদিক বিবেচনা করেই এই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল বিভাগের ডিন ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ম. তামিম বলেন, ১৯৯৯ সালের পরে আর কোন গ্যাস আবিস্কার হয়নি। গ্যাস মজুদ বাড়াতে অনুসন্ধান হয়নি। আমদানিনির্ভরতার ওপর এত বেশি মনোনিবেশ করা হয়েছে যে ধরেই নেয়া হয়েছে দেশে আর কোনো গ্যাস নেই। দেশীয় জ্বালানি খাতের কোম্পানিগুলোকে এ মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আগে থেকেই সকলের জানা ছিল সংকট হবে। তবুও সেভাবে উদ্যোগ নেয়া হয়নি। জ্বালানি বৈচিত্র্য ঠিক রাখতে এলএনজি আমদানি করতে হবে। কয়েকবছর পরে মুক্তবাজারে এলএনজি’র দাম কমতে পারেও বলে তিনি মন্তব্য করেন। আর পরিবেশ ঠিক রাখতে গ্যাস পাইপ ছিদ্র থেকে মিথেন বের হওয়া বন্ধ করার আহ্বান জানান তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বদরূল ইমাম বলেন, এখন যে গ্যাস সংকট তা শুধু অবহেলার কারণে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ অন্যতম বদ্বীপ। বিশ্ব জ্বালানি মানচিত্রে বাংলাদেশকে উজ্জ্বল সম্ভাবনার হিসেবে দেখানো হয়। অথচ আমরা শুধু অল্প কিছু এলাকায় গ্যাস অনুসন্ধান করেছি। অবহেলার বোঝা এখন জনগণের উপর চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে।
বসুন্ধরা এলপি গ্যাসের বিক্রয় বিভাগের প্রধান জাকারিয়া জালাল বলেন, একদিকে গ্যাসের দাম বেশি দেখিয়ে সার উৎপাদন কোম্পানিগুলোকে লোকসানি দেখানো হচ্ছে। অন্যদিকে তিতাসকে কম দামে গ্যাস দিয়েও পুঁজিবাজারে লাভজনক দেখানো হচ্ছে। এই নীতির পরিবর্তন জরুরি।
সিপিডি পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, উচ্চমূল্যে এলএনজি আমদানি করলে অর্থনীতির ওপর চাপ পড়বে, ভোক্তাদের ওপর চাপ পড়বে। ক্রমান্বয়ে এলএনজিনির্ভর হয়ে গেলে পরিবেশগতভাবে সমস্যা সৃষ্টি হবে। প্রাকৃতিক গ্যাস যতটা ক্লিন এনার্জি এটি প্রক্রিয়াজাত হওয়ায় দূষণ সৃষ্টি করে। কয়লা যেমন দূূষণকারী জ্বালানি, এটিও তেমনি। স্বল্পমেয়াদে, দীর্ঘমেয়াদে একটি জ্বালানি কৌশল তৈরি করা প্রয়োজন। সরকারের উচিত পরিচ্ছন্ন এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে যাওয়া।
প্রবন্ধে বলা হয়, গ্যাসের দাম বাড়ালে করোনাকালে নিম্নআয়ের মানুষের ওপর চাপ বাড়বে। তাই এখনই দাম বাড়ানো ঠিক হবে না। ২০২০-২১ অর্থবছরে আমদানি করা এলএনজির দাম প্রতি ঘনমিটার ৩১ টাকা ৫৬ পয়সা। আমদানি নির্ভরশীলতা কমাতে দেশীয় উৎপাদন এবং চাহিদার মধ্যে সামঞ্জস্য রাখা জরুরি। পরিবেশ বান্ধব জ্বালানিতে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছে সিপিডি।
বক্তারা বলেন, অযৌক্তিকভাবে গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। জ্বালানির দাম নিয়ে দীর্ঘমেয়াদে পরিকল্পনা দরকার। হঠাৎ করে দাম না বাড়িয়ে আগে থেকে জানা থাকলে রপ্তানি কারকদের জন্য সুবিধা হয়।